Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঘোর

ইমন চৌধুরী
১৭ জুন ২০২৪ ১৪:৪৮

বাজার থেকে ফিরতে আজ সুজাত আলীর বেশ রাত হয়ে গেল। মনু খাঁ’র ঘাটে এসে দেখে কোনো নৌকা নেই। সুজাত মুঠোফোনে সময় দেখে। রাত এগারটা। হিজলবাড়ির মতো অজপাড়াগাঁয়ে এগারোটা অনেক রাত। সুজাতের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। সুনসান নীরবতা চারদিকে।

ঘাট থেকে দেড় কিলো দূরে কালীরহাট বাজার। বাজারে এখনও লোকজনের আনাগোনা আছে কিছুটা। রাত বারোটা পর্যন্ত বেশ কিছু দোকান খোলা থাকে। নুরু কাজীর চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতেই দেরিটা হয়ে গেল আজ।

বিজ্ঞাপন

ঘাটের পশ্চিম পাশে বড় তাল গাছটার নিচে নড়বড়ে বাঁশের মাচায় পা তুলে বসল সুজাত। যদি ওপার থেকে কোনো নৌকা ফিরে আসে সে আশায়। এ তো আর নতুন অভিজ্ঞতা নয়।

মিনিট বিশেকের মধ্যে কোনো নৌকা ফিরে না এলে সুরুজ মাঝিকে ফোন দিতে হবে। সুরুজের বাড়িও হিজলবাড়ি গ্রামে। একই গ্রামের মানুষ। রাত-বিরাতে ফোন করে পাওয়া যায়। তবে ফোন করে ডেকে আনলে ভাড়া খানিকটা বেশি দিতে হয়।

পূর্ণিমার আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ। রূপার দানার মতো চিকচিক করছে সিলোনিয়া নদীর শান্ত জল। নদীর ওপারে বিন্দুর মতো হিজলবাড়ি গ্রাম। এই নদী, এই ঘাট, এই পথ সুজাত আলীর চিরচেনা। তাই ভয় করে না তার।

নড়বড়ে মাচায় আরাম করে বসে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে একটু পর পর এদিক-ওদিক তাকায় সুজাত। মনু খাঁ’র ঘাটে সাপের বেশ উৎপাত। তাই রাত বিরাতে সাবধান থাকতে হয়।

হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে মুঠোফোন। মোল্লাবাড়ির রইসের কল, ‘কাকায় কি ঘাটে আছেন?’

‘হুম, তুমি কি বাজারে?’

‘জি কাকা। ঘাটে কি নৌকা আছে?’

‘না, আমিও বইসা আছি।’

‘একটু বসেন, আমিও আসতেছি। নৌকা না এলে সুরুজরে ফোন দিতে হইব। একলগে যামু নে।’ বলে লাইন কেটে দেয় রইস।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ নদীর বুকে দূর থেকে বিন্দুর মতো একটা নৌকা দেখে খুশি হলো সুজাত। মিহি দানার মতো খানিকটা হিমেল হাওয়া এসে গায়ে লাগল তার। ক্লান্তিতে চোখে খানিকটা ঘুম ঘুম ভাব। অদূরের ধানক্ষেতে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার দল।

নৌকাটা এগিয়ে আসছে দ্রুত। দেখে সুরুজের নৌকা মনে হচ্ছে না। সুরুজ এতো দ্রুত নৌকা চালায় না। সিলোনিয়ার বুকে এত দ্রুত নৌকা চালাত একজনই। হানিফ মাঝির মেয়ে রুবিনা। পিতার অকাল মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে নৌকার বৈঠা হাতে তুলে নিয়েছিল রুবিনা। তবে কি রুবিনাই আসছে! কিন্তু তা কী করে সম্ভব!

ভাবনার রেশ না কাটতেই প্রায় মুহূর্তের মধ্যে নৌকাটা ঘাটে এসে থামল। নৌকার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সুজাত দেখল বৈঠা হাতে নৌকায় বসে আছে রুবিনা! শরীর শান্ত। দৃষ্টি নির্বিকার।

নৌকায় পা রাখতে গিয়েই থমকে দাঁড়াল সুজাত। তার শরীর কাঁপছে। বুকে শুনতে পাচ্ছে হাতুড়ি পেটার শব্দ। কী করে সম্ভব! কী করে সম্ভব! সুজাতের মাথায় চিন্তার জট। জোর করে একটা পা নৌকায় তুলতে গিয়ে ঝুপ করে একটা শব্দ হলো। নৌকা থেকে পড়ে গেল সুজাত।

বছর চারেক আগে এমনি এক রাতে রুবিনার নৌকায় বাড়ি ফিরছিল সুজাত। মাঝ নদীতে হঠাৎ রুবিনার ওপর চড়াও হলো সে। অমাবস্যার রাত। নৌকায় আর কোনো যাত্রী ছিল না। অনেক দিন ধরেই সুযোগটা খুঁজছিল সুজাত। সেদিন পেয়ে যায়। খুব সাবধানে সুজাত সেদিন বাজার থেকে ঘাটে এসেছিল। যেন কেউ দেখতে না পায়। ঘাটে এসে রুবিনার নৌকায় উঠেছিল খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। রুবিনা নিশ্চিন্তে সেদিন নৌকা ভাসিয়েছিল সিলোনিয়ার বুকে। কিন্তু মাঝ নদীতে এসে সব হিসেব পাল্টে যায়। হঠাৎ হিংস্র হায়েনার মতো সুজাত ঝাঁপিয়ে পড়ে রুবিনার ওপর। ওর মুখটা চেপে ধরে শুয়ে পড়ে ওর বুকের ওপর। অনেক চেষ্টা করেছিল রুবিনা সেদিন। কিন্তু পারেনি সুজাতের সঙ্গে।

সেদিন রাতে সুজাত নিজ হাতে খুন করে রুবিনার লাশটা ফেলে দিয়েছিল মাঝ নদীতে। আজ তবে কীভাবে নৌকা নিয়ে ফিরে এলো রুবিনা! সুজাতের ভাবনায় জট লেগে গেল। বাঁচার জন্য ফের নৌকায় পা বাড়াল সে। কিন্তু এবারও পা ফসকে পড়ে গেল সুজাত!

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমন চৌধুরী গল্প ঘোর সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর