আবেগ নয় বিবেককে প্রাধান্য দিন
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩১
জন্মগতভাবেই প্রতিটি প্রাণী পশুসত্ত্বা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। পশু হয়ে জন্মাবার বড় সুবিধা হলো জন্মসূত্রে পশু হওয়া যায়। কিন্তু মানুষ হতে হলে তাকে পশুসত্ত্বা ছাড়াও মনুষ্যসত্ত্বা অর্জন করতে হয়। মানুষকে তার দীর্ঘ জীবনপরিক্রমায় জ্ঞান, গরিমা, শিক্ষা, তত্ত্ব, দর্শনের মুখোমুখি হয়ে তা থেকে অর্জিত জীবনাচরণে মনুষ্য সত্ত্বার বিকাশ ঘটাতে হয়। পশুসত্ত্বা থেকে আবেগ আর মনুষ্যসত্ত্বা থেকে বিবেকের সৃষ্টি। বিবেক থাকায় মানুষ সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদা লাভ করেছে। সাধারণ অর্থে দেহের দাবিকে বলা হয় ‘প্রবৃত্তি বা আবেগ’ আর আত্মার অপর নাম ‘বিবেক’। মানব জীবনে চলার পথে আবেগ আর বিবেক একে অপরের পরিপূরক হলেও আবেগের ওপরেই বিবেকের প্রাধান্য দিতে হয়।
মানুষের বিবেকবোধ থাকায় সৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে মানুষের পক্ষে যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ভালো কাজটি করা সম্ভব তেমনি আবেগের বশবর্তী হয়ে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজও মানুষ করে থাকে। নিজেকে জাগতিক ও মহাজাগতিক কল্যাণের কাজে নিযুক্ত করা যেমন সম্ভব তেমনি ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়াও অসম্ভব কিছু না। পশুদের এরকম হওয়ার সুযোগ নেই। পশুত্ব সত্ত্বা বা আবেগজনিত কারণে মানুষ খুন, গুম, ধর্ষণ, রাহাজানি, মিথ্যাচার, অনাচার, অবিচার, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিকৃত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মনুষ্য সত্ত্বাকে ধ্বংস করছে। আবার মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য, মানুষের প্রতি প্রেম, দয়া, ভালোবাসা এবং অন্য জীবের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলন প্রদর্শন করছে।
মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবণ। আবেগ এমন একটি অনুভূতি যা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আবার কেউ পারেন না। বেশি আবেগপ্রবণ মানুষ জীবনে অনেক ভুল করে বসেন। আবেগ একটি বৃহৎ পরিবর্তনশীল জৈবিক প্রক্রিয়া যা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ এবং পরক্ষণেই সর্বোচ্চ থেকে শূন্যে পরিবর্তিত হয়। মানুষ যত বিবেকবান হয় ততই তার দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ কিংবা পৃথিবী উপকৃত হয়।
আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে কখনও নিজের বিবেকের বিচারবুদ্ধিকে বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। একজন মানুষকে আবেগ দিয়ে নয় বরং বিবেক দিয়ে চলতে হয়। কেউ যদি ভুল ট্রেনে উঠে পড়ে তাহলে বিবেকের বিবেচনায় তাকে দ্রুত পরের স্টেশনেই নেমে যাওয়া উচিত তা না হলে ট্রেন যত দূরে যাবে তাকে তত বেশি কষ্ট করে ফিরে আসতে হবে। অর্থাৎ যে কোনও ভুল ধরা পড়া মাত্র তা থেকে নিজের বিবেক ও বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে বের হয়ে আসাটাই বড় স্বার্থকতা। মার্ক টোয়েইন বলেছেন ভালো কিছু বই, ভালো কিছু বন্ধু এবং স্বচ্ছ বিবেক এই নিয়েই এক আদর্শ জীবন। একটি উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেমন বিদ্যুৎ ছাড়া অচল তেমনি একজন মানুষ যত শিক্ষিত বা উঁচু পদের হোক না কেন তার মধ্যে জাগ্রত বিবেক না থাকলে তিনি আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে তিনিও সমাজে নিজের অবস্থান সঠিকভাবে বজায় রাখতে পারবেন না।
মানুষ সবসময় অপার সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির মাঝে বসবাস করে। পৃথিবীর সকল ধন-সম্পদ, অর্থ-বিত্ত মানুষের জন্য অবারিত। কিন্তু মানুষ নিজের প্রয়োজনে কতটুকু আহরণ করবে এটি তার বিবেকের ওপর নির্ভরশীল। বিবেকহীন মানুষ সম্পদের মোহে নিজেকেই বিপদগ্রস্ত করে তোলেন। মানুষ ছাড়া অন্য সকল প্রাণীর সকল কার্যক্রম জৈবিক প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত এবং তাদের একবার ক্ষুধা নিবৃত্ত হলে আর খাবার গ্রহণ করে না। প্রাণীরা একবার পেট পুরে খেলে কখনও পরবর্তী সময়ের জন্য সাধারণত: অতিরিক্ত খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে না। কারণ তারা প্রকৃতিগতভাবেই যা পায় তাই খেয়ে বেঁচে থাকে। এমনকি কিছু প্রাণী আছে খাদ্য প্রাপ্যতার ভিত্তিতে তাদের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের অভিযোজন ঘটেছে যে তারা একনাগাড়ে বেশ কিছু দিন না খেয়েও বেঁচে থাকতে পারে। এ রকম কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে যেমন-তার্দিগ্রেড নামের প্রাণী ৩০ বছর কোনও কিছু না খেয়ে এবং না পান করে বেঁচে থাকতে পারে। শীতনিদ্রায় থাকা কালীন ভাল্লুক ৩ মাস পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে। একটি কুমির শিকার ধরে খাওয়ার পর না খেয়ে ৩ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। পাখিরাও খালি পেটে বের হয় এবং সারাদিন যা পায় তাই খেয়ে বাসায় ফিরে আসে। প্রাণিদের খাদ্য নিরাপত্তা না থাকা সত্ত্বেও কখন দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তারা কোনও প্রকার খাদ্য মজুত করে অন্যদের খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটায় না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবনে সামাদ তার বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি বইয়ের ১১২ পৃষ্টায় বলেছেন বিজ্ঞানী লিনিয়াস মানুষকে চিহ্নিত করেছেন বুদ্ধিমান তথা বিবেকবান প্রাণী হিসেবে। অন্য প্রাণী যুদ্ধ করে না, কিন্তু মানুষ যখন বিবেকহীন হয় তখন সামান্য বিষয়েই তারা যুদ্ধে লিপ্তে হয়। একগাছে অনেক কাক বাস করে। যদি কোনও কাক বৃদ্ধ হয়ে অক্ষম হয়ে পড়ে , বিশেষ করে অন্ধ হয়ে গেলে , সেই গাছের অন্য কাকরা তাকে খাদ্য এনে খাওয়ায়। কাকদের আমাদের মতো পরিবার প্রথা বা সমাজ নেই কিন্তু সহজাতভাবে তারা এ কাজ করে থাকে। কিন্ত মানুষ উচ্চ শিক্ষা আর উঁচুপদের আবেগে বিবেকহারা হয়ে অনেক সময় বৃদ্ধ বাবা-মার ভরণপোষণের দায়িত্বটুকুও পালন করে না। অনেক সময় দেখা যায় সন্তানরা বিদেশে অনেক নামকরা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে অথচ বাবা-মাকে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে বৃদ্ধাশ্রমে। এ রকম বাবা-মা সন্তানের ডাক শোনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এমনও সন্তান আছে যারা নিজেদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত চিকিৎসা এবং যত্নের অভাবে অন্ধ হয়ে যাওয়া অসহায় বাবা-মাকে নিজেদের কাছে তো রাখেনই না, সামাজিক ও পারিবারিক কলঙ্কের ভয়ে তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমেও পাঠান না।
মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ও বিবেকহীনতার কারণে পত্রিকায় প্রতিদিন নারী নির্যাতনের খবর বের হয়। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এমনটা কখনই ঘটে না। অন্য প্রাণীদের মধ্যে পুরুষ তাদের নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে না। কারণ পশুদের স্ত্রী জাতির উপর পাশবিক অত্যাচার করবার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। অধিকাংশ প্রাণীর বাচ্চা হয় বছরের বিশেষ সময়ে। আর তাদের পুরুষদের যৌন উত্তেজনার সূচনাও হয় বিশেষ সময়ে। সারা বছর তারা থাকে যৌনপ্রবণতা বিহীনভাবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে কুকুরের প্রজননকাল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, সাপের প্রজননকাল বর্ষা মৌসুমে, বাঘের প্রজননকাল এপ্রিল থেকে নভেম্বর ইত্যাদি। উল্লেখিত প্রাণীগুলো নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কোনও প্রকার যৌনতা প্রদর্শন করে না। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে প্রজননকালের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। পুরুষ প্রায় মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এবং মহিলা ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত যৌনভাবে সক্রিয় থাকে। এই বায়োলজিক্যাল গুণ থাকার কারণে মানুষের মধ্যে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত ঘটনা অনেক বেশি ঘটে থাকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে প্রায় ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। জরিপে আরও দেখা যায়, বাস-লঞ্চ-ট্রেনের টার্মিনালসহ গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ৭৮৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অথচ এ রকম ঘটনার প্রধান কারণ মানুষের কু-প্রবৃত্তিগত আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। অথচ মানুষ যদি ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে নিজের বিবেককে প্রধান্য দিত তা হলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না।
আবেগতাড়িত মানুষ অহংকারি, অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিণামদর্শী হয়ে ওঠে। বিশ্ব ইতিহাস পরিক্রমায় দেখা যায় অনেক আবেগতাড়িত মানুষের কারণে পৃথিবীব্যাপী অনেক ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, অনেক যুদ্ধ হয়েছে। ফলে পৃথিবী যতটা সুখ, শান্তি ও প্রাচুর্যে ভরপুর থাকার কথা ছিল তেমনটা হয়নি। আবার অনেক মানুষ আছেন যাদের আবেগে ধ্বংসাত্মক কোনও কিছু সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে বিবেক জাগ্রত হওয়ায় তারা কল্যাণকর সৃষ্টিশীল কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) কাফিরদের প্ররোচনায় আবেগতাড়িত হয়ে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে হত্যা করতে গেলে তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে আবেগকে বর্জন করে সত্য ও শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠায় বিবেকের প্রেরণায় মুসলমান হয়ে যান এবং জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ইসলামের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে গেছেন।
ডিনামাইটের উদ্ভাবক থেকে শান্তির দূত হয়ে ওঠেন আলফ্রেড নোবেল। আলফ্রেড নোবেলের বড় ভাই লুদভিগ নোবেল মারা যান ১৮৮৮ সালে। ইউরোপের কয়েকটি সংবাদপত্র ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলই বুঝি মারা গেছেন ভেবে আনন্দিত হয়ে পত্রিকার শিরোনাম করেন ‘‘মারা গেলেন মৃত্যুর সওদাগর”। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি মারা যাননি মারা গেছেন তার বড় ভাই। কিন্তু ঘটনাটি আলফ্রেড নোবেলের বিবেককে নাড়া দেয়। তিনি মনে করেন ডিনামাইটের দ্বারা মানুষের ক্ষতি হবে কিংবা অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাবে তাই তার এ আবিস্কারটি মানুষের কল্যাণের জন্য নয়। এ উপলব্ধি থেকে তিনি ভাবেন তাকে এমন কিছু ভালো কাজ করে যেতে হবে যার ফলে মৃত্যুর পরও মানুষ যাতে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। সেজন্য আলফ্রেড তার সকল সম্পত্তি মানবকল্যাণে ব্যয় করার জন্য দান করেন এবং তার উইল অনুসারে প্রবর্তন করা হয় নোবেল পুরস্কার, যা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সমগ্র পৃথিবীতে মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত হল মানুষের বিবেক। আর মানুষের বিবেক যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা মানুষ হারিয়ে ফেলে। মান-হুঁশে মানুষ। তাই হুঁশ হারালে মানুষ নিজেই বিপদে পড়ে যাবে। ফরাসী দার্শনিক Jean Jacques Rousseau বলেছেন ‘Man is born free but everywhere he is in chain’ অর্থাৎ মানুষ জন্মে স্বাধীনভাবে কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত। এখানে শৃঙ্খল বলতে মানুষের বিবেককে বোঝানো হয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলেই কোনও কিছু করতে পারে না। মানুষের যে কোনও কাজ বিবেকের মানদন্ডে নির্ণীত হলে তা সর্ব বিবেচনায় ভালো। পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ অন্যের সমালোচনা করা আর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো নিজেকে পরিবর্তন করা। আর নিজেকে পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন একটি জাগ্রত বিবেক। একটি চিতাবাঘ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার দৌড়াতে পারে। কিন্তু চিতা ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে একটানা ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় দৌড়ালে সে মারা পড়বে। এজন্য চিতা কোনও শিকার ধরার সময় তার বিবেক থাকে সদা জাগ্রত যাতে বেশিক্ষণ দৌড়াতে যেয়ে মারা না যায়। চিতা প্রয়োজনে শিকার ধরা বাদ দেয় কারণ এ ধরণের শিকার ধরার সাথে চিতার জীবন-মরণ নিহিত। চিতা যতই ক্ষুধার্ত থাকুক না কেন প্রয়োজনে সে শিকারই ধরবে না। সক্রেটিস বলেছেন ‘Know thyself’ অর্থাৎ নিজের বিবেককে জাগ্রত করার মাধ্যমে নিজেকে জান। মনোবিজ্ঞানী ক্যালভিন বলেছেন, ‘মানবজীবন চিরদিন সুখ শান্তিতে কাটে না। আকাশের দিকে হাত বাড়ালে কিছুই মিলে না।’ তাই চাওয়া-পাওয়ার গন্ডি মাটির কাছাকাছি হওয়াই ভালো।
বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। কোনও কাজ করার আগে ভাবাটাই হলো বিবেকের দায়িত্ব। সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়- এক্ষেত্রেও বিবেকের ভূমিকাই মুখ্য। কার্ল মার্কসের ‘Dialectical Materialism’ বা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলতে বোঝায় প্রতিটি বস্তুর মধ্যে পরস্পর বিরোধী প্রবণতা বা বৈপরীত্য থাকে। এমনিভাবে আবেগ আর বিবেকের মধ্যেও বৈপরীত্য দেখা যায়। কিন্তু দিনশেষে বিবেকের প্রাধান্যই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে প্রশংসিত হয়। মানুষ আবেগের তাড়নায় ভুল করে বসে কিন্তু বিবেক দিয়ে যখন চিন্তা করে তখন সে ভুল সংশোধনের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আমরা যখন নিজে সংশোধিত না হয়ে অন্যের দোষের প্রতি একটি আঙ্গুল নির্দেশ করি তখনও দেখা যাবে বাকি চারটি আঙ্গুল আমাদের নিজের দোষটাকে নির্দেশ করছে। নিজের বিবেককে ব্যক্তি, সামজ ও সুশীল রাষ্ট্র গঠণের কাজে লাগানোই আমাদের সর্বোত্তম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই