ঢাকা: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে কোম্পানির মতামত নেয়া জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে দেশে বিদ্যমান আইনটি শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায়, তামাক কোম্পানির সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সভা পুরোপুরি জনস্বার্থ বিরোধী। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাক কোম্পানির সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে একটি সভা আয়োজন করতে যাচ্ছে। সভাটিতে দেশ বিদেশের তামাক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তদের অংশীজন হিসেবে উল্লেখ করে মতামত প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও সরকারের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টার পথে অন্তরায়। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের এধরণের কর্মসূচির আয়োজনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে তামাক কোম্পানির সাথে এধরণের বৈঠক প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এইকথা সর্বজনস্বীকৃত যে, তামাক কোম্পানির মূল লক্ষ্য জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে মুনাফা অর্জন, আর সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা। কোম্পানিগুলো তামাকের মতো একটি ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদন করছে যা জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবেশ এমনকি সরকারকেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরস্পরবিরোধী উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো গোষ্ঠী অংশীজন হতে পারে না। বিগত দিনেও তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এমতাবস্থায় নতুন করে আবার তামাক কোম্পানিকে নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা মানে দুর্বল নীতি প্রণয়নের সুযোগ তৈরি করে দেয়া এবং জনগণকে আরও স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া। সুতরাং তামাক কোম্পানিকে কোনোভাবেই জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার অংশীজন হিসেবে গণ্য করা যায় না।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এফসিটিসি -এর আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী, অংশীদার রাষ্ট্রসমূহের তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিতে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তামাক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণে নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাশাপাশি এই কনভেনশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশেরও সেই লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি সারাবিশ্ব যেখানে তামাকের ব্যবহার হ্রাসে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সেখানে আমাদের দেশে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তামাক কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তামাক বিরোধী জোট আরও জানায়, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা অংশে ১৮(১) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য পূরণে যেখানে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ জরুরি সেখানে কেবল ব্যবসায়িক স্বার্থে তামাক কোম্পানিকে এই ধরনের সুযোগ দেয়া এবং বিদ্যমান আইনকে দুর্বল করতে তামাক কোম্পানির মতামত নেয়া এ দেশের সংবিধান , জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্যের পরিপন্থি।
এতে জানানো হয়, সরকারের মূল দায়িত্ব জনগণের স্বার্থ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করা। জনগণ যদি অসুস্থ থাকে সে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যের প্রসারে এ দেশের জনস্বাস্থ্য তথা যুব সমাজ ধ্বংস হবে এবং পরিবেশসহ অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের কোনোভাবেই উচিত হবে না সিগারেট কোম্পানির কাছ থেকে মতামত নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটিকে আরও দুর্বল করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উন্নত বিশ্বে জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর হওয়ায় কোম্পানিগুলো এ দেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মূলত দুইটি বিদেশি কোম্পানি। তাদের মূল উদ্দেশ্য-এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণসমাজকে টার্গেট করে ধূমপানে আসক্ত করা। যার মাধ্যমে তারা এ দেশের জনস্বাস্থ্যকে ধ্বংস করতে চায় । কেবল মুনাফার লোভে বিদেশি সিগারেট কোম্পানিগুলো এ দেশের জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করছে।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে দেশীয় তামাক কোম্পানিগুলো তাদের তামাক ব্যবসা গুটিয়ে এনে অন্য ব্যবসায় স্থানান্তরিত হতে চেষ্টা করছে। সেখানে সুযোগসন্ধানী বিদেশি কোম্পানিগুলো আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে তাদের নতুন বাজার দখল করার চেষ্টা করছে। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই অর্থ প্রয়োজন তবে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় শিল্পের বিস্তার ঘটিয়ে সেটা কখনোই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর প্রতি আহ্বান, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে তামাক কোম্পানির সঙ্গে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের প্রভাব, অবৈধভাবে আমদানিকৃত সিগারেটের ব্যবহার হ্রাস এবং এ খাতের রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বৈঠক অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। সেইসাথে দেশের কল্যাণে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করবে এমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।