ডেঙ্গুর ঝুঁকিতেও শিক্ষকদের অবিরাম আন্দোলন
৩০ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫০
ঢাকা: চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৪৫তম দিনের মতো আন্দোলন করছেন ফুটপাতে। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বিপরীত পাশের ফুটপাতে মানবেতর সময় কাটাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অন্তত ৪ হাজার শিক্ষক।
আন্দোলন চলাকালে ৪০ জনের মতো শিক্ষক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। অনেকেই চিকিৎসাধীন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। অসুস্থ হওয়ার পর কেউ গেছেন নিজ এলাকায়। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের কেউ কেউ। ডেঙ্গুর ঝুঁকি থাকার পরও হাল ছাড়েনি বেসরকারি শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায়ে বিরতিহীন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আন্দোলন চলাকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া শিক্ষকদের একজন জাকির হোসেন মল্লিক। তিনি এসেছিলেন ফরিদপুর থেকে। প্রেস ক্লাবে দীর্ঘদিন অনশন চলাকালীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই শিক্ষক মারা যান।
এদিকে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন নিজেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তাকে নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটপাতের ওপর মাদুর কিংবা পলিথিন বিছিয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। মাথার ওপর তাবু কিংবা রোল পলিথিনের ছাউনি। এই দিয়ে কোনোরকম মাথা গোজার ঠাঁই বানিয়েছেন তারা।
সমিতির সভাপতি অসুস্থ হয়ে মাঠে না থাকায় যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন সমিতির মহাসচিব কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এরকম জায়গায় কোনো মানুষ থাকতে পারে না। তারপরও দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না।’
সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এখানে নৈতিক দাবি আদায়ে এসেছি। ডেঙ্গুর ভয়ে আমরা চলে যাওয়ার মতো না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব। যখন ঘর ছেড়েছি দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব।’
এদিকে দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। এতজন মানুষ ফুটপাতে ডেঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে। প্রাথমিক ভাবে মশা থেকে বাঁচাঁর জন্য যতটুকু সম্ভব মশারি, কয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করে মশার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে তারা। কোনরকম মশা থেকে ডেঙ্গু থেকে বাচঁতে যতটুকু সামর্থ্য সেটুকু করছেন সবাই মিলে। তবে ফুটপাতের জায়গার সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেগ পোহাতে হচ্ছে।
আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রেস ক্লাব এলাকায় আছেন নাটোরের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি ৪৫ দিন প্রেসক্লাবে অবস্থানের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘আমরা একটি দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। আমরা শিক্ষক, কোনো ভিক্ষুক না। এতগুলো মানুষ দিন-রাত কত কষ্ট সহ্য করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২৬০০০ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একইসঙ্গে জাতীয়করণ করা হয়। এই তালিকা থেকে বাদ যায় ৪০০০ বিদ্যালয়। বাদ যাওয়া স্কুলগুলোকে সরকারি করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে প্রাথমকি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সারাবাংলা/এএম/একে