রাজধানীর বাসে টিকিট সিস্টেম, ঘোষণার বাস্তবায়ন নেই ৩ মাসেও
১ অক্টোবর ২০১৯ ১০:০০
ঢাকা: রাজধানীর সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে টিকিট সিস্টেমে যাত্রীদের চলাচলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল গত জুলাই মাসে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছিলেন, ওই মাসেই কাঁচপুর-ঘাটারচর (মতিঝিল হয়ে মোহাম্মদপুর) রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে এই সেবা। কিন্তু সেই ঘোষণার তিন মাস পরও বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। উদ্যোগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গঠিত ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশন’ কমিটির আহ্বায়ক ও ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গত ৭ জুলাই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জুলাই মাসের মধ্যেই টিকিট সিস্টেমে গণপরিবহন চলাচল করবে। প্রাথমিকভাবে এটি শুরু হবে মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল রুটে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রুটেও শুরু হবে। এই সেবা চালু হলে টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রীই বাসে উঠতে পারবেন না।’
টিকিট সিস্টেমে বাস চলাচলের ঘোষণার আগে একইদিন বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির দশম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রাথমিকভাবে কাঁচপুর-ঘাটারচর রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে টিকিট সিস্টেমে পরিচালনা করা হবে। আর টিকিট সিস্টেম বাস্তবায়ন হলে পর্যায়ক্রমে ওই রুটের সব গণপরিবহনকে একটি কোম্পানির অধীনে এবং একটি রঙে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু ঘোষণার তিন মাসেও টিকিট সিস্টেম বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে পরিবহনগুলো একটি কোম্পানির আওতায় আনার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।
বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির একাধিক সদস্য জানান, মেয়রের ঘোষণা বাস্তবায়নে বেশকিছু জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে টিকিট সিস্টেম চালুর করতে যেসব কাউন্টার প্রয়োজন, সেগুলোর জন্য এখনো জায়গা নির্ধারিত হয়নি। সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে কর্মকর্তারাও সেদিকে মনোযোগ দেননি। সেইসঙ্গে পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়হীনতাও এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মফিজ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘোষণার পরও টিকিট সিস্টেমে বাস চলাচল কেন বাস্তবায়ন হয়নি, এটি আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আগামী সভায় জানতে পারবেন। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।’
বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের আরেক সদস্য বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সারাবাংলাকে বলেন, বাসের টিকিট সিস্টেম চালুর বিষয়ে মেয়রের আন্তরিকতা আছে— এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মেয়রের ঘোষণার বাস্তবায়ন যারা করবে, তাদেরও তো আন্তরিক হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জুলাই মাসেই টিকেট সিস্টেমে বাস চলাচলের যে ঘোষণা, সেটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সেদিকে বেশি মনোযোগ ছিল। যদিও এটি প্রধান কারণ নয়। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো— টিকিট সিস্টেমে বাস পরিচালনার জন্য যেসব কাউন্টার করার কথা, সেগুলো করতে কিছুদিন সময় লাগছে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘সভায় আমাদের বলা হয়েছিল, টিকিট সিস্টেম চালু করতে নির্ধারিত স্থানগুলোতে ছাতা বসিয়ে টিকিট বিক্রি করা যাবে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মৌসুম হওয়ায় এটি অসম্ভব। স্থায়ীভাবে কাউন্টার তৈরি করতে হবে। আর সেজন্যই কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমরা প্রাথমিকভাবে মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে কাঁচপুর টু ঘাটারচর পর্যন্ত চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোর জন্য দুই পারে ৩৫টি করে ৭০টি কাউন্টার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করছি অক্টোবর মাসেই কাজ শেষ হবে।’