Friday 14 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাওনা টাকার ফাঁদ পেতে ২৬ টুকরো করে আশরাফুলকে খুন, মূল অভিযুক্ত পলাতক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩৮ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২৬

এই দুটি ড্রামের ভেতর ছিল মানুষের মরদেহের খণ্ডিত অংশ। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের কাছে দুটি নীল ড্রামে পাওয়া ২৬ টুকরো খণ্ডিত লাশ রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার সবজি-আলু ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলামের (৪৩) বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, একই গ্রামের ব্যবসায়িক পার্টনার জরেজ মিয়া ফোন করে “ঢাকায় পাওনা টাকা মিলেছে” বলে তাকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর থেকে জরেজ পলাতক রয়েছেন এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত পুলিশের সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী, সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণে ১৩ নভেম্বর রাতেই নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক সময় ও পদ্ধতি জানা যাবে।

বিজ্ঞাপন

নিহত আশরাফুল বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশীদের ছেলে। তিনি রংপুর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আড়তে আলু, পেঁয়াজ ও ভুট্টা সরবরাহ করতেন। জানা গেছে, বিভিন্ন মানুষের কাছে বেশ কয়েক কোটি টাকা পাওনা ছিল তার। সাম্প্রতিক সময়ে ডিজঅনার চেকের মামলার কারণে মোবাইলে বারবার প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছিলেন তিনি। নিরাপত্তার কারণে তিনি একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

ঘটনার সূত্রপাত ও পরিকল্পিত হত্যা

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে জরেজ মিয়া রংপুরের প্রাইম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশরাফুলের বাবাকে দেখতে গিয়ে বলেন, ‘ঢাকার আড়তদাররা পাওনা টাকা দিতে রাজি হয়েছে, আজই রাতে চলো।’ ওই রাতেই দুজনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর থেকে আশরাফুলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। স্ত্রী লাকী বেগম ফোন করলে জরেজ ধরে বলেন, ‘আশরাফুলের ফোন ডাস্টবিনে পড়ে গেছে, আমি খুঁজছি, থানায় জিডি করব।’

পরে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জরেজ আবার ফোন করে বলেন, ‘আশরাফুলের লাশ কয়েক টুকরো করে ঈদগাহের কাছে ড্রামে পাওয়া গেছে।’ এরপর থেকে জরেজের ফোন বন্ধ।

নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘জরেজই আমার স্বামীকে ফাঁদে ফেলেছে এবং খুনিদের হাতে তুলে দিয়েছে। পাওনা টাকার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা, ২৬ টুকরো করে লাশ ফেলে দেওয়া— মধ্যযুগীয় বর্বরতার নজির। আমি আমার স্বামীর খুনিদের ফাঁসি চাই।’

পরিবার জানিয়েছে, শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলায় জরেজ মিয়াকে প্রধান আসামি করা হবে বলে। গ্রামে আশরাফুলের ছেলে-মেয়েরা এখনও বাবার মৃত্যুর খবর জানে না।

স্থানীয়রা বলছেন, ‘এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড বদরগঞ্জে আগে কখনো হয়নি।’

নিহত আশরাফুল রংপুর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আড়তে আলু, পেঁয়াজ ও ভুট্টা সরবরাহ করতেন। তার ব্যাবসায়িক লেনদেনের মধ্যে কয়েক কোটি টাকা পাওনা ছিল। ব্যাবসায়িক পাওনা ও আস্থা ভঙ্গের কারণে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড শুধু পরিবার নয়, এলাকায় ব্যাবসায়িক নিরাপত্তা ও সামাজিক আস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

আরও পড়ুন:

শাহবাগে ড্রাম থেকে মানুষের মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার

বদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থল ঢাকায় হলেও আমরা ঢাকা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। মূল অভিযুক্ত জরেজ মিয়াকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। লাশ দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

পুলিশ আরও জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে একটি ভ্যান ও দুই ব্যক্তির ছবি পাওয়া গেছে। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। জরেজ মিয়ার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি বাড়িতে আসেননি।

ঘটনার তদন্তে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতা করছে। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও মামলা দায়ের প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর