রংপুর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই ঐতিহাসিক রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদের পরিবার। তবে তারা দাবি করেছেন, রায় কেবল ঘোষণায় সীমাবদ্ধ যেন না থাকে। অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শহিদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘আমরা এই রায়ে খুশি হয়েছি। কিন্তু এটি কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, রায় দ্রুত কার্যকর করুন যাতে বিচারের অর্থ প্রতিষ্ঠিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, এই রায় গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের প্রতি একটি উত্তর হলেও, পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য অপরাধীদের গ্রেফতার অপরিহার্য।
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের কণ্ঠস্বরে আবেগের সঙ্গে মিশে আছে কঠোর দাবি। তিনি বলেন, ‘শুধু রায় ঘোষণা করে যেন শেষ না হয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসি দিন। আমার ছেলের মতো হাজার হাজার পরিবারের ক্ষত এভাবেই পূরণ হবে।’
এদিকে, মা মনোয়ারা বেগমের চোখে শুধুই জল। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কোনোদিন পূরণ হবে না। কিন্তু আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন অত্যাচার না ঘটে।’
উল্লেখ্য, আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা গণঅভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ।
পরদিন ১৭ জুলাই পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে তার দাফন হয়। প্রকাশ্যে গুলি করার ভিডিও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে ওঠে। এক পর্যায়ে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।