Friday 26 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শব্দে-সুরে সমাজ সংস্কার শেকড়ের সন্ধানে কেমুসাসের ইবরাহিম তশ্না স্মরণ

ডিস্ট্রিক্ট করসপন্ডেন্ট
২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৪

ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

সিলেট: সময়টা উনিশ শতকের শেষভাগ। সমাজ তখন ঘোর অন্ধকারে—অশিক্ষা, কুসংস্কার আর অবিচারের ভারে নুয়ে পড়েছে জনজীবন। ঠিক সেই সময় শব্দকে অস্ত্র করে, গানের সুরে মানুষকে জাগাতে আবির্ভূত হন এক ব্যতিক্রমী পুরুষ— ইবরাহিম তশ্না।

মরহুম কবি ও চিন্তাবিদ ইবরাহিম তশ্নার জীবন ও কর্ম নিয়ে সিলেটে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘৮ম শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা–২০২৫’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় কবির সাহিত্যকর্ম, ধর্মীয় সংস্কারমূলক ভূমিকা ও সামাজিক আন্দোলনে অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) কানাইঘাট উপজেলার উমরগঞ্জ ইসলামুল উলুম মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘ইবরাহিম তশ্না ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, ধর্মীয় সংস্কারক ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনের অগ্রপথিক।’

‘‘ইবরাহিম তশ্নার সাহিত্য ছিল সময়সচেতন ও দায়বদ্ধ। ১৮৯০ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রচিত তার গীতিকাব্য ‘অগ্নিকুণ্ড’ ছিল নিছক কবিতার সংকলন নয়—তা ছিল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চারিত এক জ্বলন্ত ঘোষণা। তার দরুদ ও দেহবন্ধ গান সাধারণ মানুষের হৃদয়ে সহজেই জায়গা করে নেয়। আবদুল ওহাব চৌধুরী (রহ.), ফুলবাড়ি, নজির হোসাইন (রহ.)সহ খ্যাতিমান দেহবন্ধ শিল্পীদের কণ্ঠে তার রচনা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।’’

তারা আরও বলেন, ‘১৮৯৮ ও ১৯০৫ সালে দেহবন্ধ গানের মাধ্যমে দেশে ফিরে তিনি সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন। তার কণ্ঠে উচ্চারিত গান ছিল মানুষের আত্মজাগরণের আহ্বান। ইসলামী জলসা প্রবর্তন, ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তার ও কুসংস্কারবিরোধী অবস্থান তাকে আলাদা করে চিহ্নিত করে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘ইবরাহিম তশ্না বিশ্বাস করতেন—সমাজ বদলাতে হলে শিক্ষা অপরিহার্য। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি উমরগঞ্জ ইমামদুল উলুম মাদরাসা এবং সাদকর বাজার আহমদিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি খেলাফত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হন। এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাকে কারাবরণ করতে হয়—যা তার সংগ্রামী জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।’

‘১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এই সংগ্রামী কবি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তবে তার প্রস্থান মানেই অবসান নয়। কবিতা, গান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি আজও বেঁচে আছেন মানুষের চেতনায়।’

আলোচনা সভায় বক্তারা একমত পোষণ করে বলেন, ‘ইবরাহিম তশ্নার জীবন ছিল সংগ্রাম, সাধনা ও সমাজ পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার সাহিত্য ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।’

শেকড়ের সন্ধানে উপকমিটির সদস্য সচিব ছড়াকার কামরুল আলমের সঞ্চালনায় কবি সারওয়ার ফারুকীর স্বাগত বক্তব্যে
ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেকড়ের সন্ধানে উপকমিটির আহ্বায়ক কবি-বাচিকশিল্পী সালেহ আহমেদ খসরু। তশ্নার কথা ও সুরে গান পরিবেশন করে শিল্পী আলী হায়দার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেমুসাসের সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী, কবি ও শিক্ষাবিদ কালাম আজাদ, বিশিষ্ট কলাম লেখক আফতাব চৌধুরী, কবি ও শিশু সাহিত্যিক সালেহ আহমদ, কেমুসাসের সাধারণ সেলিম আউয়াল, নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান ও সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল কাদের তাপাদার, কেমুসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, কবি ইশরাক জাহান জেলি, নাজমুল আনসারী ও অ্যাডভোকেট কামাল তৈয়ব।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- চ্যানেল আই সিলেট প্রতিনিধি সাদিকুর রহমান সাকি, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সেক্রেটারি মাহবুবুর রশীদ, খন্দকার রোমানা আহমদ, মোশতাক চৌধুরী, মাছরাঙা প্রকাশনীর প্রকাশক কবি আবুল কাশেম, সারাবাংলা ডটনেটের সিলেট প্রতিনিধি জুলফিকার তাজুল, প্রবাসী সাংবাদিক শাহ সোহেল আহমেদ, আব্দুর রব তাপাদার, লুৎফুর রহমান তোফায়েল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে কবি, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক ছাড়াও সাহিত্যপ্রেমী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, মরমী কবি ইবরাহিম আলী তশ্না সিলেটের কানাইঘাটের একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক ও গীতিকার। তিনি ফকিরি, দেহতত্ত্ব ও কামতত্ত্বভিত্তিক নিগূঢ় আধ্যাত্মিক গান রচনার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার সৃষ্টিকর্মের প্রধান সংকলন ‘অগ্নিকুণ্ড’। তিনি শাহজালাল (র.)-এর সফরসঙ্গী শাহ তকী উদ্দীনের বংশধর ছিলেন এবং বাংলার সুফি সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

সারাবাংলা/এইচআই
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর