ঠাকুরগাঁও: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং দেশকে অস্থির করে তুলতে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। এ অবস্থায় সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া রোডে মানব কল্যাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ভুল করে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। বিভেদ হলে চক্রান্তকারীরা সুযোগ নেবে। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’
আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে এ দেশ কারা পরিচালনা করবে তা আপনাদেরই নির্ধারণ করতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা চলছে। গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং কিছু মানুষকে অতি ধনী করতে ব্যাংক ব্যবস্থা লুটপাট করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ১১ বার কারাগারে গিয়েছি। আমার অপরাধ আমি গণতন্ত্র চেয়েছি, সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছি। সেই সময়ে আমরা কেউই নিরাপদ ছিলাম না। মানুষ রাস্তায় চলাফেরা করতে ভয় পেত কখন জঙ্গি বানিয়ে তুলে নিয়ে যাবে, সেই আতঙ্কে দিন কাটত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই প্রথম সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেছিলেন। কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না, এটাই বিএনপির অবস্থান। একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে বিএনপি নাকি কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক আইন চায় না। বাস্তবতা হলো, বিএনপি সবসময় কোরআন ও সুন্নাহর আদর্শের মধ্যেই থাকতে চায়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর আমরাও শান্তি চাই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। অথচ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, আর তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিএনপিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।’
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ঢাকা শহর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ছয় বছর কারাগারে আটক রাখা হয় এবং সেখানে তার যথাযথ চিকিৎসা ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি।’
ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ইসলাম নিয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল না। পরে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই প্রথম ওলামায়ে কেরামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সামনে নিয়ে আসেন এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।’
আসন্ন নির্বাচনের ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকার গঠন করলে সারা দেশের মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নে মাসিক সম্মানী প্রদান করা হবে। ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে। পাশাপাশি ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকারের চালু করা মসজিদ শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সারাদেশে পুনরায় চালু করা হবে।’
পরিশেষে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শহিদ উসমান হাদি, আবু সাইয়িদসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণদানকারী সকল শহিদকে স্মরণ করেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, ঠাকুরগাঁও বড় মসজিদের খতিব খলিলুর রহমান, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফেজ রশিদ আলমসহ আলেম-ওলামা ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।