বগুড়া: ঘন কুয়াশায় বগুড়ায় সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে নিখোঁজ হওয়া বরযাত্রীবাহী নৌকাটির ৪৭ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন নারী, ২১ জন পুরুষ এবং ৯ জন শিশু ছিল। নিখোঁজের পর ৯৯৯ এ ফোন করেও মেলেনি প্রতিকার। অবশেষে অন্য নৌকা দিয়ে ১৬ ঘণ্টা পর সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জামালপুর মাদারগঞ্জের তারতাপাড়া এলাকার নিলয় হাসান ছানি নামের এক যুবকের বিয়ের বরযাত্রী হিসেবে নৌকায় করে ৪৭ জন বগুড়া শহরে গিয়েছিলেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা সন্ধ্যা ৭টার দিকে সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌঘাটে ফিরে আসেন। এরপর তারা সেখান থেকে নৌকায় চড়ে মাদারগঞ্জের জামথল নৌঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু রাতে যমুনার মাঝনদীতে পৌঁছালে তীব্র কুয়াশার কারণে নৌকার মাঝি দিক হারিয়ে ফেলেন। ফলে রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বারবার চেষ্টা করেও তারা পথ খুঁজে পাননি। এরপর পথ খুঁজে না পাওয়ায় নিরাপত্তার জন্য মাঝনদীতেই নৌকাটি নোঙর করে রাখা হয়। সেখানে নৌকাতেই বরযাত্রীরা রাত কাটান।
হাড়কাঁপানো শীতে খোলা নদীর ওপর রাতভর চরম ভোগান্তিতে পড়েন বরযাত্রীরা। জরুরি সেবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করা হলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাতে উদ্ধারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরে যাত্রীরা তাদের নৌকার ছবি তুলে দিক হারানোর কথা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলে বিকল্প নৌকার সাহায্যে তাদের উদ্ধার করে জামথল ঘাটে আনা হয়।
নৌকার মাঝি কাসেম মিয়া জানান, বরযাত্রীরা শুক্রবার সন্ধ্যার পর সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌঘাটে আসেন। কুয়াশার কারণে আমি রাতে নৌকা চালাতে রাজি হইনি। কিন্তু বরযাত্রীরা তাদের মোটরসাইকেলের আলো দিয়ে আমাকে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়ে যমুনায় নৌকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাজি করান। কিন্তু যমুনার মাঝপথে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে ২০ ফিট দূরের কোনও কিছুই চোখে পরছিল না। তাই রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত নৌকা নিয়ে নানাদিক ছুটাছুটি করেও কিনারা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সময় বারবার বিভিন্ন দ্বীপে নৌকা আটকে গেছে। অবশেষে পরদিন শনিবার সকাল ১০টার দিকে অন্য নৌকা এসে বরযাত্রীদের রক্ষা করেছে।
সারিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ ফ ম আসাদুজ্জামান জানান, ৯৯৯ কল পাওয়া মাত্রই থানা পুলিশ পথ হারানো নৌকাটি উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। বেশকিছু নৌঘাট থেকে তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে অন্য নৌকা তাদের খুঁজে পেয়েছে। এরপর নারী, শিশুসহ নৌকার সব বরযাত্রী নিরাপদে বাড়িতে ফিরেছেন।
তিনি আরও জানান, রাতে ঘন কুয়াশায় যাত্রীদের যমুনায় ভ্রমণ না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়া নৌকার মাঝিদেরকেও ঘন কুয়াশায় নৌকা চালানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।