Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ভূমি অধিগ্রহণের অভিযোগ সিডিএ’র বিরুদ্ধে


২৪ মার্চ ২০১৯ ১০:০১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মালিকদের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই জোরপূর্বক একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিরুদ্ধে। সিডিএকে ঠেকাতে না পেরে ক্ষতিপূরণের দাবিদার ভূমি মালিকরা এখন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে সিডিএ বলছে, সরকারি খাস জমির ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করে অভিযোগকারীরা ক্ষতিপূরণ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের এই কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ ১২ জন মিলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ পাঠান। এতে সিডিএ’র বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুসরণ না করার অভিযোগ আনা হয়।

বিজ্ঞাপন

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর বারইপাড়া থেকে বলিরহাট পর্যন্ত নতুন খাল খননের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ভূমি মালিকদের। অথচ সিডিএ চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের জন্য আংশিক ভূমি অধিগ্রহণ করেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। অধিকাংশ ভূমি মালিককেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের তিন গুণের বদলে দেড়গুণ দেওয়া হয়েছে। এই ভূমি যদি সিডিএ’র বদলে জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ করত, তাহলে অবশ্যই তিন গুণ দাম পরিশোধ করত।

অভিযোগকারীরা সিডিএ’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ আনেন।

অভিযোগকারীদের একজন কর্ণফুলী নদীর তীরে নগরীর পূর্ব বাকলিয়ার বজ্রঘোনা এলাকায় হাজী মো. মুছা সওদাগর। তার প্রায় ১০ গণ্ডা জমির কোনো ক্ষতিপূরণ বা অধিগ্রহণ ছাড়াই সিডিএ কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ এই ব্যক্তির।

মুছা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার নিজের কেনা জায়গা আছে ৭ গণ্ডা। পৈতৃক সম্পত্তি আছে ১৪ গণ্ডা। কমপক্ষে ১০ গণ্ডা জায়গায় সিডিএ গাছপালা কেটে রাস্তা ভরাটের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমার দখলে থাকা এই জায়গা নাকি নদীর তীরের হওয়ায় সেগুলোর কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না। অথচ এসব জায়গা আমার কেনা। সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, কিন্তু সিডিএ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সেটা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, আমরা সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে প্রথমে মৌখিকভাবে বিষয়টি বলেছি। তিনি বলেছেন, সবার ন্যায্য পাওনা দেওয়া হবে। কিন্তু পরে তিনি গড়িমসি শুরু করেছেন।

পূর্ব বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিনের অভিযোগ, তাদের পারিবারিক প্রায় চার বিঘা জমি সিডিএ দখল করে প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই জমিতে চাষাবাদ হতো। কিন্তু সিডিএ ধানী জমিই দখল করে নিয়েছে।

জসিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদিন সকালে গিয়ে দেখি, গাছ-ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করলে বলে, এগুলো খাসজমি। অথচ আমার কাছে কাগজ আছে। এগুলো আমাদের খতিয়ানভুক্ত জমি। সিডিএ গায়ের জোরে কাজ করছে।’

বাকলিয়ার রাজাখালী এলাকার বাসিন্দা হাজী মো. আইয়ূব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ঘরের পেছন থেকে গাছপালা কেটে ফেলেছে। আমি এক টাকাও পাইনি। আমার জমি খাসজমি নয়। নিজের কেনা জমি। পৈতৃক জমিও আছে। সিডিএ কোনো কথাই শুনছে না।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে সিডিএ। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা আমার কাছে এসেছিলেন। যেকোনো সময় ক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নামতে পারেন। প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি আমরা গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীকে জানিয়েছি। জোর করে কাজ করলে জনগণ মানবে না।’

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, মন্ত্রীপরিষদ সচিব, ভূমিমন্ত্রী, এলাকার সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, সিএমপি কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে।

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভূমির প্রকৃত মালিক হলে আমরা কাউকে ক্ষতিপূরণ দেবো না— এমন কথা বলিনি। তার আগে তো মালিকানা স্বত্বের প্রমাণ দিতে হবে।’

‘যারা মালিকানা প্রমাণ করতে পেরেছেন তাদের মধ্যে অন্ত:ত ২০ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আরও ৫০ জনকে এই সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে। আরও অনেকে মালিকানা দাবি করে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যারা অভিযোগ করছেন, তারা মূলত খাস জমিকে নিজেদের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রকৃত মালিকানা না থাকলে তো ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়।’

বিরোধ নিষ্পত্তি না করে প্রকল্পের কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ তো বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। প্রকল্পের কাজ চলবে। এর মধ্যে কেউ যদি তাদের ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করতে পারেন, যেকোনো সময় তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন।’

সিডিএ জানিয়েছে, ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক। সমুদ্র সমতল থেকে ২৪ ফুট উঁচু, সড়কের নিচের অংশ ২৫০ ফুট চওড়া এবং সড়কের ওপরিভাগ ৮০ ফুট চওড়া হবে।

এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বক্সিরহাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর এবং পাম্প হাউজ নির্মাণ করা হবে। ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার প্রতিরোধক দিয়ে ঢালু প্রতিরোধ, তীর সংরক্ষণ ও সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ৫৫ লাখ ঘন মিটার মাটি ভরাট করা হবে এ প্রকল্পের কাজে। এতে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিদ্যমান জলাবদ্ধতার অনেকাংশে অবসান ঘটবে বলে সিডিএ কর্মকর্তাদের অভিমত।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

চট্টগ্রাম জমি অধিগ্রহণ সিডিএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর