পঙ্গু মানুষ আমি, মনে হয় আর বাঁচব না
২৯ মার্চ ২০১৯ ১৭:১৫
নওগাঁ: ‘আমি তো বের হতে পারছি না। পঙ্গু মানুষ। আমি মনে হয় আর বাঁচব না। সবাই অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি কোনো উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করিস। তোরা ভালো থাকিস।’ জীবনের শেষ সময়ে ছোট ভাই মেহফুজ জুবায়ের পলাশের সঙ্গে ফোনে কথাগুলো বলেন মঞ্জুর হাসান (৫০)।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় মঞ্জুর হাসানের। তার বাড়ি সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে। তিনি মৃত মুনছুর রহমানের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
মঞ্জুরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুর হাসান ছাত্রজীবন থেকে ঢাকায় থাকতেন। ছাত্রজীবন শেষে চাকরি শুরু করেন। এরপর সংসার। পরিবার নিয়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে বসবাস করতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকুরি করতেন। ঘটনার দিন মঞ্জুর হাসান ভবনের ২১তলায় কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থায় করছিলেন। আগুন থেকে বাঁচতে সবাই যখন ছোটাছুটি করছিলেন তিনি কোনো উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসেছিলেন। আর জীবনের শেষ সময়টুকু স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।
কিন্তু এক সময় ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বার বার রিং হলেও অপর প্রান্ত থেকে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে মঞ্জুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। তবে গত কয়েকদিন থেকে তার ছোট ভাই শিমুল বাড়িতে আছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাইয়ের মৃত্যুর কথা জানতে পান তিনি। বাড়িতে কেউ নাই। শুধু গ্রামের লোকজন মঞ্জুরের মরদেহ দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
মৃতের ছোট ভাই শিমুল বলেন, চাকরিরত অবস্থায় ২০০০ সালে অফিসের সামনের রাস্তায় ভাই এক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান। এরপর থেকে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। একপ্রকার পঙ্গু জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তারপরও কোম্পানি ভাইকে চাকরি থেকে বাদ দেয়নি। অফিসে যখন আগুন লাগে সবাই বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করছিল। কিন্তু ভাই পঙ্গু হওয়ায় কিছু করার উপায় ছিল না। অফিসে বসেই ফোনে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
তার শেষ কথা ছিল ‘আমি তো বের হতে পারছি না, এখানে হয়ত আমার শেষ সময় যাবে।’ এক সময় তার ফোনের সংযোগ কেটে যায়। এরপর ফোনে রিং হলেও রিসিভ হয়নি।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর পৌনে একটায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে কমবেশি ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের গুলশান জোনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় মারা গেছেন ২৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৩ জন
সারাবাংলা/এমএইচ