কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
২৮ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২০
রাঙ্গামাটি: পানি কমে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে। এ কারণে ২২ এপ্রিল থেকে হ্রদে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নৌপথে জেলা সদর থেকে সাত উপজেলায় যাতায়াতকারীরা। পানির প্রবাহ কমে আসায় উৎপাদন কমেছে কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও।
জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের আয়তন প্রায় ১ হাজার ৭২২ বর্গকিলোমিটার। মূলত পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করার ফলে কৃষিজমি ডুবে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। হ্রদে চলাচলকারী নৌযানের মাধ্যমে আশপাশের উপজেলার লোকজন যাতায়াত ও মালামাল আনা-নেওয়া করে। এর মধ্যে কাপ্তাই, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ থাকলেও বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু ও বিলাইছড়িতে যাতায়াতের জন্য নৌপথ ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই।
পলি জমে বর্তমানে হ্রদের গভীরতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ কারণে হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা কমেছে। প্রতি বছর অক্টোবরের পর তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হ্রদের রিজার্ভ (সংরক্ষিত) পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছাড়তে হয়। আবার চাষাবাদের জন্য হ্রদে পানি ধরে রাখাও সম্ভব হয় না। সব মিলিয়ে চৈত্রের পর থেকেই নাব্য সংকটে হ্রদে নৌযান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ কারণে বছরের প্রায় চার মাস স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনারে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের কথা তুললেও এখনও এর কোনো সুরহা হয়নি।
এবারও পানি কমে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ২২ এপ্রিল হতে হ্রদ দিয়ে জেলা সদর থেকে সাত উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আপাত ব্যবস্থা হিসেবে ইঞ্জিনচালিত বোটের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি সময়ও লাগছে দ্বিগুণ। পণ্য পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দাম।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জানান, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৮ দশমিক ৪০ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। রুলকার্ভ অনুসারে এ সময়ে হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৩ দশমিক ২০ এমএসএল। সে হিসাবে কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট পানি কম আছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছর চৈত্র থেকে আষাঢ় পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, পানি কমে যাওয়ায় আমরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। এখন কিছু ছোট বোটের মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য আনা-নেয়া অব্যাহত রেখেছি। ডুবোচরের কারণে বোট চালাতেও কষ্ট হচ্ছে। সহসাই কয়েকটি ডুবোচরের পাড় কেটে না দিলে ছোট বোট চালানোও দুদিন পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রাঙ্গামাটির পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের পরিচালক হেফাজত সবুজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ নিধন, জুমচাষ বাদ দেয়া ও অবাধে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের ওপর। হ্রদের পানির সমস্যা কাটাতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, হ্রদ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই উত্তর পাওয়া যাবে।
সারাবাংলা/এমএইচ