আওয়ামী নেতা ও বিএনপি নেত্রী মিলে পাহাড়ে উচ্ছেদে বাধা
৪ মে ২০১৯ ২২:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের অংশ হিসেবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা-নেত্রীর সম্মিলিত বাধার মুখে পড়ে জেলা প্রশাসনের টিম। এসময় তারা বিদ্যুৎ বিভাগের একটি ট্রান্সফরমার থেকে নেওয়া অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেননি বলে অভিযোগ করেছেন উচ্ছেদে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তারা।
শনিবার (৪ মে) সকালে নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকার মতিঝর্ণা ও বাটালি পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধীন পাঁচটি ভূমি সার্কেলের সহকারি কমিশনাররা একসঙ্গে এ অভিযানে যান।
স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি এবং লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে এ অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযানে যাওয়া নগরীর কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, মতিঝর্ণা পাহাড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি ট্রান্সফরমার থেকে অবৈধভাবে বেশকিছু সংযোগ দেওয়া হয়। আমরা সেখান থেকে দেওয়া অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তাদের লোকজন নিয়ে এতে বাধা দেন। পরে ওই ট্রান্সফরমার থেকে নতুন করে অবৈধ কোন সংযোগ না দেয়ার শর্তে সেটি কাউন্সিলরের জিম্মায় দেওয়া হয়।
ওই জিম্মানামায় সাক্ষী হিসেবে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম স্বাক্ষর করেছেন বলে জানান তৌহিদুল।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মতিঝর্ণায় এক লাখ লোকের বসবাস। সারাবছর ধরে অবৈধ সংযোগের কোনো খবর নেই, এখন দুর্যোগের মুহূর্তে এসেছেন লাইন কাটতে। হঠাৎ করে ট্রান্সফরমার থেকে লাইন কেটে এক লাখ মানুষকে অন্ধকারে রাখার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারিনি। আমরা বলেছি, আগে যাচাই করেন লাইন কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ। তারপর উচ্ছেদ করতে আসেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। বারবার তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার, জামালখান ও এনায়েতবাজার ওয়ার্ড মিলে সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত মনোয়ারা বেগম মণি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির ডাকা বিভিন্ন হরতাল-অবরোধে একাধিকবার জেলেও গিয়েছিলেন মণি। আর সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিদারুল আলম মাসুম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পাহাড়ে অভিযানে যাওয়া জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, অভিযানে মতিঝর্ণা ও বাটালি পাহাড়ের বিভিন্ন ঘর থেকে অবৈধভাবে নেওয়া সংযোগের ২৪টি বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ, একটি অবৈধ পানির পাম্প ধ্বংস করা হয়েছে। সবমিলিয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে অবৈধভাবে দেওয়া দুই শতাধিক ঘরের পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বর্ষার ঝুঁকি এড়াতে ৩০ এপ্রিলের পর থেকে পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরতদের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (০২ মে) থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। শনিবারের অভিযানে চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভ’মি) ফোরকান এলাহী অনুপম, বাকলিয়া সার্কেলের সাবরিনা আফরিন মোস্তফা, সদও সার্কেলের ইসমাইল হোসেন ও আগ্রাবাদ সার্কেলের শারমিন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে