থানায় ঢুকে নারী পুলিশ কর্মকর্তার ওপর ‘চড়াও’ চসিক কাউন্সিলর
১২ মে ২০১৯ ১৯:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় গিয়ে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে মারমুখী আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাউন্সিলর বিপ্লব ঘটনার জন্য ‘ক্ষমা চান’ বলে জানা গেছে।
সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবলের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে আটক হওয়া প্রাইভেটকারের এক চালককে থানা থেকে ছাড়াতে গিয়ে কাউন্সিলর বিপ্লব পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ ঘটনা গড়ায় গভীর রাত পর্যন্ত।
পুরো ঘটনা উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন শনিবার রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে একজন কাউন্সিলরের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। পরে ওই কাউন্সিলর নিজেই তার আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
হাসান মুরাদ বিপ্লব চট্টগ্রাম নগরীর ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নগর ছাত্রলীগের সাবেক স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য বিপ্লব বর্তমানে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। ছাত্র রাজনীতি থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
ঘটনার শিকার কোতোয়ালী থানার শিক্ষানবীশ উপ-পরিদর্শক (পিএসআই) নেলী দাশের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোতোয়ালী থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর জিপিও’র সামনে একটি প্রাইভেটকারকে থামার জন্য সংকেত দেন ট্রাফিক কনস্টেবল আবুল কালাম। কিন্তু প্রাইভেটকারের চালক রকিবুল আলম (২৪) সংকেত না মেনে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। কনস্টেবল গিয়ে গাড়ির গতিরোধ করলে চালক নেমে কনস্টেবল আবুল কালামের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা থেকে এসআই বাবলু কুমার পালের নেতৃত্বে একটি টিম গিয়ে রকিবুলকে ধরে থানায় নিয়ে আসেন।
সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে কাউন্সিলর বিপ্লব ১০-১৫ জন অনুসারীকে নিয়ে থানায় যান। থানায় ঢুকেই তিনি কনস্টেবল আবুল কালামকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরেন। রকিবুলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ না করার অনুরোধ করতে থাকেন। এর মধ্যে থানার ডিউটি অফিসারের সহযোগী পিএসআই নেলী দাশ কনস্টেবল আবুল কালামকে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। নেলী দাশের কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিপ্লব।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন পুলিশ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, “নেলী দাশ কনস্টেবল আবুল কালামকে চলে যেতে বলার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করতে থাকেন কাউন্সিলর। তিনি নেলীকে বলেন, ‘আপনি কি আমাকে চেনেন ? আপনার কত বড় সাহস আপনি উনাকে চলে যেতে বলছেন।”
জবাবে নেলী বলেন, ‘আপনি কে আমার চেনার দরকার নেই, আপনি আঙুল নামিয়ে কথা বলুন।’
তখন কাউন্সিলর মারমুখী আচরণ করেন। পরে ওই কাউন্সিলরকে নিয়ে সেকেন্ড অফিসারের রুমে বসানো হয়।
সূত্রমতে, কাউন্সিলর বিপ্লবের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের হওয়া জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে কাউন্সিলর নিজে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং মেয়র মহোদয়ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ঘটনার বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কাউন্সিলর বিপ্লব অতীতেও বিভিন্ন সময় পুলিশের সঙ্গে একই আচরণ করেছেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাউন্সিলর বিপ্লবের আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন। রাতে ওসির কক্ষে গিয়ে নেলী দাশের কাছে সরাসরি ক্ষমাও চান এ জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটি সামান্য ঘটনা। গতকাল (শনিবার) রাতেই মিটমাট হয়ে গেছে। আমি মাফ চেয়েছি। বিষয়টিকে আবার টেনে আনা উচিৎ নয়।’
সারাবাংলা/আরডি/একে