প্রিয় শিক্ষকের ব্যতিক্রমি সংবর্ধনা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১১:৫২
সারাবাংলা ডেস্ক
ঢাকা: আব্দুল মান্নান উকিল। একজন গুণী শিক্ষকের নাম। তাঁর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তিনি কোনোদিন স্কুলের হেডমাস্টার হওয়ার চেষ্টাও করেননি, এমনকি শিক্ষক কোটায় স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেননি কোনোদিন। ১৯৬১ সালে তিনি ৩০০ নম্বরের ইংরেজি সহ রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর একই স্কুলে ৪১ বছরের দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবন। স্কুলটির নাম রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এটি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায়।
এই শিক্ষককে সবংর্ধনা দেবেন তারই শিক্ষার্থীরা। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখ শুক্রবার এই সবংর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকদের কেউ এখন নামকরা শিক্ষক, কেউ লেখক, কেউ সরকারের উচ্চপদে আসীন। তারাই আয়োজন করেছেন এই সবংর্ধনার।
শিক্ষার্থীদের ভাষায়, অধ্যয়ন, পা-িত্যপূর্ণ পাঠদান, নিñিদ্র সততা ও নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন এবং নির্মোহ একটি সাধারণ জীবন যাপনের অনুধ্যান ছাড়া তাদের শিক্ষক আবদুল মান্নানের জীবনের আর কোনো প্রয়াস ছিল না, আর কোনো পরিচয় ছিল না। ফলে দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। দারিদ্র্যের কারণে একমাত্র ছেলেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পাঠাতেও পারেননি।
আয়োজকরা এই অনুষ্ঠানকে ব্যতিক্রমি বলে উল্লেখ করছেন। তারা বলছেন, দেশজুড়ে এখন সংবর্ধনা বলতে বোঝায় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কোনো ধনকুবেরের পরোক্ষে স্ব-আয়োজিত সংবর্ধনা, কিংবা কোনো রাজনৈতিক নেতার অনুগত কর্মী আয়োজিত সংবর্ধনা কিংবা বড় জোর কোনো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো অর্জনে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা। প্রচলিত এই সকল ধারণার বাইরে এই সংবর্ধনা আয়োজিত হতে যাচ্ছে। তাদের কাছে উপলক্ষ একটাই, তাদের শিক্ষক ৮০ বছরে পা ফেলেছেন।
এমন একজন শিক্ষক আজকের সমাজের জন্য যে কী অমূল্য সম্পদ তা তাঁর গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীরা অনুভব করে তাঁর এই শেষ জীবনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই আয়োজন করেছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আরো ব্যতিক্রমী এ কারণে যে, এখানে কোনো সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ইত্যাদি রকম অতিথি-প্রাকরণিক আয়োজন থাকছে না। এখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্যারকে ঘিরে সমাবেশ করবেন। সংবর্ধিত স্যারই থাকবেন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি।
জনাব আব্দুল মান্নান উকিলের যে-সকল ছাত্রের উদ্যোগে এই সংবর্ধনা আয়োজিত হতে যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ, বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ^াস, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মোঃ শাহাদত হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, খুলনা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব কম্পারেটিভ লিটারেচার ও কালচারে’র পরিচালক ড. শামীম রেজা প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ।
সারাবাংলা/এমএম