‘বাহবা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বড় আইনজীবী হওয়া চাই’
২৬ মার্চ ২০২০ ০৭:৫৯
ময়মনসিংহ: চলছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবাষির্কী। হাজারো মানুষ তাকে মনে রেখেছেন হাজারো রকমে। যাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়েছিল তারা এখন নিজেদের মনে করেন ভাগ্যবান। বঙ্গবন্ধুর নানা স্মৃতিকেই তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বলেও মানেন তারা। তেমনই একজন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আনিসুর রহমান খানের জন্ম ১ নভেম্বর ১৯৩৫ সালে। নেত্রকোনার মেদনী গ্রামের স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন আহম্মদ ও মা সায়দতুন্নেছার দুই ছেলের মধ্যে আনিসুর রহমান ছোট। ১৯৪৪ সালে ভারতের কোলকাতায় খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিমান হামলার আশংকায় নেত্রকোনায় ফিরে আটপাড়ার বানিয়াজান সিটি হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এরপর ১৯৫২ সালে ঈশ্বরগঞ্জ এম সি হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে ভর্তি ও পরে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন।
এরপর ১৯৫৫ সালে নেত্রকোনা কলেজ, ১৯৫৯ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বিএ ও ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগ থেকে পাশ করে ১৯৬৩ সালে ময়মনসিংহ বারে আইন পেশায় যোগ দেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ ল’ কলেজের লেকচারার, ভাইস প্রিন্সিপাল থেকে অবসর নেন। তিনি ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে একবার সাধারণ সম্পাদক ও তিন বারের নির্বাচিত সভাপতি।
স্মৃতিচারণ করে আনিসুর রহমান জানান, ১৯৫৪ সালে প্রথম দেখা হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি, ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নান্দাইলে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মামা খালেক নেওয়াজ খান পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীন খানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। ওই সময়ে সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বিশাল জনসভায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুপুরের খাবার সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথমবার দেখা হয়।
তখন আনন্দমোহন কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক সৈয়দ নজরুল ইসলাম (পরবর্তীতে মুজিনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) শিক্ষকতা ছেড়ে আইন পেশায় যুক্ত হন। তারই অনুপ্রেরণা ও স্বজনদের সহযোগিতায় আনিসুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন ১৯৬৪ সালে। সে বছরই বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হন রফিক উদ্দিন ভূইয়া। সেই কমিটিতেই ট্রেজারার নির্বাচিত হন আনিসুর রহমান খান। সংগঠনের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন জনসভায় বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তিনি।
হঠাৎ ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনায় উপনির্বাচনের সময় খবর আসে বঙ্গবন্ধু ডেকেছেন। ডাক পেয়েই সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকার বত্রিশ নম্বরে গিয়ে সোজা হাজির হন বঙ্গবন্ধুর সামনে। বঙ্গবন্ধু তাকে নেত্রকোনা আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বলেন। তখন তিনি অনুনয় করেন বলেন, ‘সবেমাত্র আইন পেশায় যুক্ত হয়েছি তাই এ মুহূর্তে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’ তখন বঙ্গবন্ধু বাহবা দিয়ে তাকে বলেছিলেন, ‘বড় আইনজীবী হওয়া চাই।’
সেই থেকে আইন পেশায় ৫৭ বছর পার করছেন আনিসুর। পাশাপাশি ময়মনসিংহের সামাজিক বহু সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে সহধর্মিণী রোকেয়া বেগম, পাঁচ ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে ময়মনসিংহেই বসবাস করছেন মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক।
আজও সেই সব দিনের ঘটনা, কত স্মৃতি ভেসে ওঠে আনিসুরের মনে। তিনি বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধু সরাসরি দেখেছেন তারাই অনুভব করেছেন এ মহান মানুষকে। যার রাজনীতিতে, মেধা, মননে, ভালেবাসায়, ত্যাগে আমাদের স্বাধীনতা। এ মানুষকে জাতি কখনো ভুলতে পারবে না।’
অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান আনন্দমোহন কলেজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোণা কলেজ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক