কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গোপন টেন্ডারে কাজ দেওয়ার অভিযোগ
৯ জুন ২০২০ ১০:৫৫
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ঘুষ নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে গোপন টেন্ডারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর হাসপাতালের এই টেন্ডার গোপনের কাজটি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এমনকি এই করোনা সংকটেও থেমে নেই গোপন টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অপতৎপরতা।
সম্প্রতি হাসপাতালের পথ্য, ধূপি ও স্টেশনারি ঠিকাদারি কাজ গোপনে পছন্দের লোককে পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিজ্ঞাপন গোপন করে টেন্ডার দেওয়ার অপকৌশল ফাঁস হয়েছে। ফলে টেন্ডার অংশগ্রহণ বঞ্চিত ঠিকাদারদের তোপের মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম লেলিন।
এর আগে গত ২৮ মে দরপত্র দাখিলের শেষদিনে অন্যান্য ঠিকাদাররা খবর পেয়ে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ও ঘেরা করে। এ সময় ঠিকাদার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হন। কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপন প্রকাশ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বহুল প্রচারিত নয় এমন দুটি পত্রিকা দৈনিক এশিয়ার বাণী ও দৈনিক মুসলিম নিউজের নাম বলেন। এরপর পত্রিকা দুটি দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতেও ব্যর্থ হন।
আদৌ বিজ্ঞাপনটি কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ঠিকাদাররা। যার হাত দিয়ে টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন হয় হাসপাতালের সেই হিসাররক্ষক আশরাফ মজিদ জানান, বিজ্ঞাপনটি দৈনিক এশিয়ার বাণী ও দৈনিক মুসলিম নিউজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ নিয়ে হাসপাতালের ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেন হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ। হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটেরই একজন আশরাফ মজিদ। যার কুড়িগ্রাম শহরের বিশাল অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা উল্টো রোগিদের বিনামূল্যের ওষুধ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে কম্বল, মশারি, চাদর ও বালিশের কভার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেগুলো সব রোগিকে সরবরাহ করা হয় না।
অভিযোগে রয়েছে, করোনা সংকটের আগে হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের ঠিকাদারি কাজের দরপত্র দাখিল সম্পন্ন হয়। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সিদ্ধান্ত না দিলেও তড়িঘরি করে গত সপ্তাহে চূড়ান্ত ঠিকাদার নিয়োগের জন্য তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়। সেখানেও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টেন্ডারের শর্তাবলীর মধ্যে গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যাংক সলভেন্সি, সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার সনদ ও কেন্দ্রীয় সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্য হওয়া বাধত্যমূলক। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে ভুয়া সনদ দেখিয়ে চূড়ান্ত ঠিকাদার হিসেবে স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসিং প্রাইভেট লিমিটেডের নাম স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠিয়ে জোর তদবির চালাচ্ছে।
অন্যদিকে দরপত্রের সব শর্তাবলী পূরণ করে আল ফারাহ সিকিউরিটি সার্ভিস টেন্ডারে অংশ নিলেও তাদের দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে রাখা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে আল ফারাহ সিকিউরিটি সির্ভিস লিমিডেটের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. নূরুজামান অভিযোগ করেন, ‘স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের অভিজ্ঞতার সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি, কেন্দ্রীয় সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্যের ভুয়া সনদ জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই করলে তা ভুয়া প্রমাণিত হবে।’
এ সব অনিয়মের ব্যাপারে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারদের সঙ্গে একটু সমস্যা হয়েছিল। সেটার সমাধান হয়ে গেছে।’ অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘সিস্টেমটি দীর্ঘদিনের, যা আমি রাতারাতি ঠিক করতে পারব না।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। অবশ্য একটু পরেই তত্ত্বাবধায়কের লোকজন ফোন করে এই প্রতিবেদককে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।