।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অস্ত্র ও ইয়াবা মামলায় কারাগারে থাকা শিক্ষানবিশ আইনজীবী সমর কৃঞ্চ চৌধুরীর মুক্তি এবং ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। একই সঙ্গে গ্রামের নিরীহ লোকজনকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশ ও বোয়ালখালী থানা পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
রোববার (০১ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সমর চৌধুরীর দুই মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী ও তমালিকা চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ‘মিথ্যা’ মামলার শিকার স্বপন দাশ, বনবিহারী চৌধুরী, মধুসূধন চৌধুরী এবং তাদের গ্রামের ইউপি সদস্য সুরেশ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে অলকানন্দা চৌধুরী বলেন, গত ২৭ মে আমার বাবাকে তুলে নিয়ে বোয়ালখালী থানা পুলিশ মিথ্যা অস্ত্র ও ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। এর মধ্যে ইয়াবা মামলায় জামিন হলেও অস্ত্র মামলায় এখনো জামিন হয়নি। জামিন না হওয়ায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আমার বাবা বিনা দোষে কারাভোগ করছেন।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কারাগারে আমার বাবা দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর কিছুদিন কারাগারে থাকলে আমার ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবাকে বাঁচাতেও পারবো না। আমার বাবার মৃত্যুর দায়ভার কি কেউ নেবে ? আমরা বাবাকে জীবিত ফিরে পেতে চাই। তাকে যেন অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হয়, মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অলকানন্দা বলেন, আমাদের গ্রামে লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশের সঙ্গে স্বপন দাশের জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ আছে। আমার বাবা স্বপন দাশকে আইনগত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছেন। সে জন্য সঞ্জয় দাশ পুলিশকে দিয়ে আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। গত এক বছর ধরে সঞ্জয় দাশ গ্রামে পুলিশকে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সমর চৌধুরীর মেয়ে তমালিকা চৌধুরী। গত ২৭ মে চট্টগ্রাম নগরী থেকে আইনজীবীর সহকারি সমর চৌধুরীকে গ্রেফতার করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পরে দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৩৬০ পিস ইয়াবা ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ দাবি করে। ষাটোর্ধ্ব সমর চৌধুরীর কাছ থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। মূলত তখন থেকেই লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বপন দাশ বলেন, সঞ্জয় দাশের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ ছিল না। গত বছর হঠাৎ করে সঞ্জয় লন্ডন থেকে এসে ডিআইজি অফিসে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ডিআইজি আমাদের অফিসে তলব করেন। সেখানে সঞ্জয় হঠাৎ অভিযোগ করে আমরা নাকি তাদের জায়গা দখল করে রেখেছি। আমরা প্রতিবাদ করার পর সঞ্জয় আমাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়। আমার পরিবারের সদস্য এমনকি আমার মেয়ের স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে পর্যন্ত সাতটি মামলা দেয়। এসব মামলায় আমি এবং আমার ভাইপো উৎপল জেল খাটি। এখনও সঞ্জয় প্রতিদিন আমাদের টেলিফোন করে হুমকিধমকি দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ, সঞ্জয় এরা খুবই ক্ষমতাশালী। তারা আমাদের ঘরের কেয়ারটেকার এবং তার স্ত্রীকে পর্যন্ত মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এই অত্যাচার নির্যাতন আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, সঞ্জয় দাশ এবং পুলিশের অত্যাচার থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’
ইউপি সদস্য সুরেশ কুমার দাশ বলেন, ‘সঞ্জয় দাশ গ্রামে গিয়ে ডিআইজি মনিরুজ্জামানের লোক পরিচয় দিয়ে সবাইকে হুমকি ধমকি দেন। মানুষের জায়গা-জমি দখল করেন। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে এর প্রতিবাদ করায় আমাকেও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সঞ্জয়। আমরা কারও কাছে বিচার পাচ্ছি না। এই বিচার আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মধুসূধন বিশ্বাস বলেন, ‘সঞ্জয় পুলিশ নিয়ে এসে জোরপূর্বক আমাদের পুকুর দখল করে নিয়েছে। আমাদের ৮০ হাজার টাকার গাছ বিক্রি করে দিয়েছে। জোরপূর্বক জায়গা রেজিস্ট্রি নেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। না হলে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে মামলা দেবে বলছে। আমরা অসহায় মানুষ। আমরা কার কাছে যাব? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের রক্ষার আবেদন জানাচ্ছি।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ