চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাসখানেক ধরে ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজার। সবজি, ডিম, মাংসের দাম চড়া। সামুদ্রিক মাছের ভরা মৌসুমেও স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। পরিবর্তন আসেনি মুদিপণ্যেও। এর মধ্যে আটা-ময়দা, মসুর ডালের দাম আরেকদফা বেড়ে চাপে ফেলেছে সীমিত আয়ের ক্রেতাদের।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও আসকার দিঘীর পাড় কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

মুদি দোকান। ছবি: সারাবাংলা
বন্দরনগরীর বাজারে খোলা আটা কেজিতে অন্তত ৮ টাকা ও ময়দার দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার খোলা আটা বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৪২ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দাম অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে সেনা, ডায়মন্ড, ফ্রেশ, আফতাবসহ নানা ব্র্যান্ডের দুই কেজি প্যাকেটের আটা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা।
আর খোলা ময়দা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত ময়দা দুই কেজিতে ১০টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

ছবি: সারাবাংলা
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গম আমদানি কমে যাওয়ার কথা বলে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর ফলে খুচরায় আটা-ময়দার দাম বাড়তি।
ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ টাকা। আর মোটা দানার মসুর ডালের দামও বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসুর ডালের দাম পাইকারি ও খুচরায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে প্রায় আট মাস পর। আমদানি কমে যাওয়ায় আড়তে মসুর ডালের সরবরাহ কমেছে। এতে দাম বাড়ছে।

বিভিন্ন সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। ছবি: সারাবাংলা
কাঁচাবাজারে সবজির দাম হেরফের হয়নি। কাঁকরোল, ঝিঙা, পটল, ঢ্যাঁড়স, শসা, করলা প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী, লাউ, মূলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আলু মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর মিষ্টিকুমড়োর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, ধনেপাতা প্রতিকেজি ১৫০ টাকা আর শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ছবি: সারাবাংলা
বাজারে মুরগির মধ্যে ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম ডজন প্রতি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার। ছবি: সারাবাংলা
পরিবর্তন আসেনি মাছের বাজারেও। লইট্যা ও ফাইস্যা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শাপলা পাতা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচাঁদা ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২৪০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০ টাকা, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা এবং জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ মাছ প্রতিকেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০, কৈ ২০০ থেকে ২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙাস মিলছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায়।

চালের দোকান। ছবি: সারাবাংলা
চালের দাম পাইকারিতে কিছুটা কমলেও খুচরায় এখনও প্রভাব পড়েনি। খুচরা দোকানে মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, আটাশ বালাম কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১২০ টাকা, চিনিগুঁড়া প্যাকেট ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ও খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

পেঁয়াজ। ছবি: সারাবাংলা
বাজারে আকারভেদে পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মুদিপণ্যের মধ্যে প্রতিকেজি খোলা সাদা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, প্যাকেট চিনি ১২০ টাকা, লালচিনি ১১৫ টাকা, ছোট মুগডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।