চট্টগ্রাম ব্যুরো: তামাক চাষ ও নদী দূষণ বন্ধে মিঠা পানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীকে হেরিটেজ ঘোষণা করে চার বছর আগে প্রকাশিত গেজেটটি সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন তদারক কমিটি’র ১৫তম সভায় উপদেষ্টা একথা জানান। চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘হালদা নদীর উন্নয়নমূলক অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, হেরিটেজ সংক্রান্ত গেজেটটা। সেটা পরিবর্তন করতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যে-সব প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করে চিহ্নিত করা হবে। বর্তমান সরকারের সময়ের মধ্যেই হালদা নদী সংরক্ষণ ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যে-সব কাজ করা প্রয়োজন, তা করা হবে।’
সভায় হালদা নদীর সমস্যা, সম্ভাবনা ও সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া। এতে নদীর উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দফতর সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মনজুরুল কিবরীয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হালদা নদীকে হেরিটেজ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, গেজেটে অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে। যেমন- আমাদের সুপারিশ ছিল নদীর অববাহিকায় কোনো ধরনের তামাক চাষ করা যাবে না। গেজেটে তামাক চাষের বিষয়ে কিছু আসেইনি। আরও অনেক বিষয় আছে, যেগুলো সংশোধন প্রয়োজন। আজকের সভায় গেজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাননীয় উপদেষ্টা সেটা দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন।’
গেজেট সংশোধনের মাধ্যমে তামাক চাষ ও নদী দূষণ বন্ধ করা হবে জানিয়ে সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘তামাক চাষের কারণে হালদা নদীর তীরবর্তী ভূমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, যা নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে তামাক চাষ বন্ধ করতে হলে কৃষকদের বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। যে কোনো মূল্যে হালদা নদীকে তামাক চাষ মুক্ত করতে হবে।’
হালদা নদী রক্ষায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের উপায় নিয়ে গবেষণা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প মানে শুধু অর্থ ব্যয় নয় বরং প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সঠিক পরিকল্পনা, কার্যকর বাস্তবায়ন ও তদারকি অত্যন্ত জরুরি।’
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুসরাত সুলতানা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম, বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জমির উদ্দিন, মৎস্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।