Tuesday 11 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাবেক মন্ত্রী জাবেদের আরেক কীর্তি!
প্রান্তিক কৃষককে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ঋণ নিয়ে ৩২ কোটি টাকা পাচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:১২ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫১

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রান্তিক চার কৃষককে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে নিজ মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাগুলো করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা গ্রামের সহজ-সরল চার কৃষক ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক মো. ইউনুস, নুরুল বশর, ফরিদুল আলম ও মো. আইয়ূবের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তাদের অজ্ঞাতে তাদের নামে ভুয়া ও অস্তিত্ববিহীন একাধিক প্রতিষ্ঠান খোলেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ব্যাংক হিসেব খুলে ঋণ অনুমোদন করে সেই টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেন।

বিজ্ঞাপন

চার মামলার মধ্যে মো. ইউনুসের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই ও ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আরেক ভাই সাবেক পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী এবং সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ চৌধুরী, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইমতিয়াজ মাহবুব, বজল আহমদ, এম এ সবুর, ইউনুছ আহমদ, নুরুল ইসলাম ও বিএন্ডবি ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান, দিদারুল আলম, মো. সুমন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাঈনুদ্দিনের করা এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামি বশির আহমদের প্রতিষ্ঠান বিএন্ডবি ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে কৃষক ইউনুসকে ইউনাইটেড ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজিয়ে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করেন।

একইভাবে মো. আইয়ুব নামে আরেক কৃষককে মোহাম্মদীয় এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ইলেকট্রনিক্স ও ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ জন আগের মামলারও আসামি। আরও দুই আসামি হলেন- সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান ও বোন সাবেক পরিচালক রোকসানা জামান চৌধুরী। মামলাটি করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের ‍উপ-সহকারি পরিচালক সজীব আহমেদ।

নুরুল বশর নামে আরেক কৃষককে বশর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক রুবেল আহমেদ। ওই মামলায় সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, স্ত্রী রুকমিলা জামান, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও আসিফুজ্জামান চৌধুরীসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন- ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, আব্দুল আউয়াল, আবু বকর খান, জামাল উদ্দিন, জিয়াউল করিম খান, জাহিদ হায়দার, বজল আহমদ, এম এ সবুর, ইউনুছ আহমদ ও নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং আরামিট সিমেন্টের কর্মকর্তা মিছবাহুল আলম ও জাহাঙ্গীর আলম, আলোক ইন্টারন্যাশনালের প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, বশির আহমদের প্রতিষ্ঠান বিএন্ডবি ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান ও দিদারুল আলম।

এছাড়া ফরিদুল আলম নামে এক কৃষককে ইউনিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিক্স, কসমেটিকস ও ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সাজিয়ে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান। ওই মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুকমিলা জামান, ভাই আনিসুজ্জামান রনি, আসফিকুজ্জামানসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৬/৪-৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) ও মানিলান্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রয়াত শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড়ো ছেলে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। সেখান থেকে বাবু একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাবেদ প্রথমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হিসেবে পারিবারিক ব্যাবসা আরামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক লিমিটেড দেখাশোনা করতেন। ব্যবসায়ী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও একই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

২০১২ সালে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের রাজনীতিতে অভিষেক হয়। সরাসরি সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে ‘খালি মাঠে গোল দেন’। এরপর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে প্রথমবার প্রতিমন্ত্রী ও দ্বিতীয় দফায় পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। ২০২৪ সালে আবারও মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে টিআইবি তার ‘ভালো মানুষের’ জারিজুরি ফাঁস করে দেওয়ায় মন্ত্রিসভায় আর জায়গা হয়নি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লন্ডনে তার অবস্থানের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে ছয়টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য আসামি হিসেবে আছেন।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর