ভালোবাসা আর সৌহার্দ্য নিয়ে মানুষের পাশে থাকার শপথ
১১ মে ২০১৯ ২১:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: একদল শিক্ষার্থীর কলকাকলিতে মুখরিত চট্টগ্রাম নগরীর সেন্ট প্লাসিড স্কুল অডিটোরিয়াম। এরা চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিস পরিচালিত ৬টি স্কুলের সদ্য মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী। সবার হাতে প্রজ্বলিত মোমবাতি। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের মধ্যে হঠাৎ নীরবতা। তাদের শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ মজেস এম কস্তা। মোমের আলো ছুঁয়ে শিক্ষার্থীরা শপথ নিলেন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার। শুধু দেশের সীমানায় নয়, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে মানুষের পাশে ভালোবাসা আর সৌহার্দ্য নিয়ে থাকারও শপথ নিয়েছেন তারা।
শনিবার (১১ মে) বিকেলে ৬টি স্কুলের এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এই সংবর্ধনার আয়োজন করে চট্টগ্রাম কাথলিক আর্চডায়োসিসের শিক্ষা কমিশন এবং কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চল। স্কুলগুলো হচ্ছে- সেন্ট স্কলাসটিকাস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিয়াঙের মরিয়ম আশ্রম হাই স্কুল, সেন্ট প্লাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নোয়াখালী ব্রাদার আন্দ্রে হাই স্কুল ও বান্দরবানের ডন বস্কো হাই স্কুল।
প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। এবার আয়োজনের মূল সুর ছিল- আমরা শান্তির অগ্রদূত।
ঘড়ির কাঁটায় বিকেল তিনটায় নগরীর পাথরঘাটায় সেন্টপ্লাসিড স্কুলের সুবিশাল আঙিনায় সারি বেঁধে দাঁড়ান এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ প্রায় ৪৫০ ছাত্রছাত্রী। তাদের পেছনে দাঁড়ানো সংর্বধনার প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, এনায়েতবাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তহুরীন সবুর ডালিয়া, আর্চবিশপ মজেস এম কস্তা, কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজসহ অতিথিরা। ব্যান্ডের তালে তালে ছাত্রছাত্রী ও অতিথিরা এগিয়ে যান অডিটোরিয়ামের দিকে। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অতিথিদের কথামালার ফাঁকে ফাঁকে স্কুলজীবন শেষ করা ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজনও তাদের অভিব্যক্তি জানান। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নাচ-গান পুরো অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা এনে দেয়।
বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘একজন শিক্ষকের সারাজীবনের সাধনা হচ্ছে তার ছাত্রদের আলোকবর্তিকা হিসেবে তৈরি করা। শিক্ষকদের এই চেষ্টার ফসল হচ্ছে যারা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন তারা। প্রতিটি ছাত্রছাত্রী তাদের নিজস্ব মেধা, প্রজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যায়, শিক্ষকরা হন তাদের সহযাত্রী। ছাত্রছাত্রীদের জয় মানে দেশের জয়, জাতির জয়।’
তিনি বলেন, শিক্ষা আর জ্ঞান এক বিষয় নয়। একজন মানুষ অনেক শিক্ষিত হতে পারে, তার পিএইচডি থাকতে পারে, বিশ্বের অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পারে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তার সেই শিক্ষা মানুষের কল্যাণে না আসছে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানবতার পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না, ততক্ষণ তাকে প্রকৃত জ্ঞানী বলা যাবে না। নিজের বিবেক হচ্ছে মানুষের বড় শক্তি। সৃষ্টির সকল জীবের মধ্যে মানুষেরই একমাত্র বিবেক আছে। বিবেককে যে শিক্ষা জাগ্রত করতে পারে না, সেটা প্রকৃত কোনো শিক্ষায় নয়।’
উপাচার্য ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা অনেক বড় হও। একনিষ্ঠা, একাগ্রতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতা দিয়ে শুধু এই দেশ নয়, এই বিশ্বকে জয় কর। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার শপথ নাও। শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, পরমত সহিঞ্চুতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করতে পারলেই শান্তি আসবে। তোমরা যদি সুনাগরিক না হও, তাহলে এই বাংলাদেশ কখনোই সোনার বাংলা হবে না।’
অধ্যক্ষ তহুরীন সবুর ডালিয়া ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তোমরা নিজেদের বিবেককে জাগ্রত রাখবে। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যাও। শুধু জিপিএ-৫ কিংবা গোল্ডেন এ-প্লাস পেলেই যে শিক্ষিত হওয়া যাবে তা নয়। আলোকিত মানুষদের জীবনদর্শনকে নিজের অন্তরে ধারণ করে নিজেকেও আলোকিত করো।’
ফাদার মজেস এম কস্তা বলেন, ‘আমরা নানা ধরনের তাড়নায় ভুগি। আমাদের সমাজে অস্থিরতা আছে। নিরাপত্তার অভাব আছে। সন্ত্রাস, বৈষম্য, চরম দারিদ্র্য আছে। নানাভাবে নানাকিছু আমাদের শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটায়। এর মাঝেও মনে রাখতে হবে- আমার আচরণ যেন অন্যের শান্তিতে ব্যাঘাত না ঘটায়। এ জন্য লাগবে মূল্যবোধের চর্চা। মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, স্বার্থহীন আচরণ দিয়েই মানুষকে জয় করতে হবে। গড়তে হবে শান্তির দেশ, শান্তির বিশ্ব।’
জেমস গোমেজ সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিস পরিচালিত ৬টি স্কুলের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গড় পাশের হার ৯২ শতাংশ। উত্তীর্ণ ৯৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫০ জন
সারাবাংলা/আরডি/একে