Friday 28 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাফিস সরাফাতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা

‎স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:০৩

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাত।

ঢাকা: পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাতসহ চারজনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানীর লাইসেন্স গ্রহন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর ২০১৩ সালের মধ্যেই ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। মূলত এ মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে অবৈধ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীরা। চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামের সঙ্গে মিলে ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক পদ লাভ করেন। এমনকি কৌশলে চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদকে সাউথইস্ট ব্যাংকেরও পরিচালক বানান।’

বিজ্ঞাপন

জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এরপর অভিযুক্তরা চতুরতার সঙ্গে ফান্ডের টাকায় মাল্টি সিকিউরিটিজ নামক একটি ব্রোকার হাউজ ক্রয় করে তার ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রতারণাপূর্বক ফান্ডের অর্থ হাতিয়ে নেন। এছাড়াও চৌধুরী নাফিস সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের টাকা দিয়ে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি (নিবন্ধন-২০০৭) নামীয় ফান্ড ক্রয় বা বিনিয়োগ করেন যার অধীন একাধিক ফান্ড রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জাল-জালিয়াতির ব্যাপ্তি এতই বিস্তৃত ছিল যে, হিসাব এবং অন্যান্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনাসহ রাজউক থেকে একাধিক প্লট হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন নামীয় প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথ সুগম করেছিলেন অভিযুক্তরা।’

সামাজিক যোগাযোগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চাপ প্রয়োগ, বিদেশে অর্থ পাচার এবং একাধিক বাড়ি–ফ্ল্যাট ক্রয়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগ প্রকাশের প্রেক্ষিতেই সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী, ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তফসিলি ব্যাংকসমূহে মোট ৭৮টি হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। ওই হিসাবসমূহে প্রায় ১ হাজার ৮০৯.৭৫ কোটি টাকা জমা এবং প্রায় ১ হাজার ৮০৫.৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী এবং ছেলের নামে ২১টি হিসাব চলমান রয়েছে, যার বর্তমান স্থিতি মাত্র ২৯.২১ লক্ষ টাকা।

তিনি আরও বলেন, অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন কানাডায় Canadian Maple Strategic Wealth LP, Bangladesh Race Management PCL, Race Financial Management Inc. (Address: Unit 9 C/O Ariel Rahman CGA 777 Warden AVE Scarborough on MIL4C3 Canada), ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড এ নিবন্ধিত কোম্পানি Blue Ocean Supply Ltd Lhotse Summit Investments Ltd এবং আঞ্জুমান আরা শাহীদ এর নামে Standard Chartered Bank (Singapore) Limited, Singapore এ ১৫টি যৌথ হিসাব রয়েছে, যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমান টাকা জমা রয়েছে। এছাড়া নাফিস সরাফতের ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরীর নামে বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব যেমন Royal Bank Of Canada, United Overseas Bank Limited, Singapore, Bank of Singapore Limited, Singapore The Toronto Dominion Bank এ মোট ৭৬ টি হিসাব পরিচালনা করার তথ্য পাওয়া যায়। চৌধুরী নাফিস সরাফাত এর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এ ৩ রুমের একটি ফ্ল্যাট ও ৫ রুমের ১টি ভিলা রয়েছে। এছাড়াও সিঙ্গাপুরে হাসান তাহের ইমাম এর মালিকানাধীণ Next Frontiers Fund PTE Ltd নামীয় কোম্পানিরও ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে বাংলাদেশে তাদের নামে বিপুল পরিমান সম্পদের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারনা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৯ টাকা অর্জন করায় নাফিস সরাফতসহ তার চারজন সহযোগীদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ২৭ নভেম্বর মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর