ঢাকা: বাংলাদেশে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি বিপণন সংক্রান্ত দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান নাভানা লিমিটেডের সঙ্গে বিরোধের ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রাথমিকভাবে টয়োটা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছে।
পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে নাভানা লিমিটেডের ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করতে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
প্রতারণা মামলার আসামিরা হলেন- ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালয়েশীয় নাগরিক টয়োটা বাংলাদেশ লিমিটেড নামে নবগঠিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেমিত সিং, জাপানি নাগরিক টয়োটা টুশো এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আকিও ওগাওয়া এবং টয়োটা টুশো করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার আসিফ রহমান।
এ মামলার প্রতিবেদন সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই জানায়, তদন্তে ৩ আসামির বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, এবং অভিন্ন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নাভানার ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মামলারটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআই-এর পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান। তদন্তের তদারকি অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন পিবিআই এর ঢাকা মেট্রো উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক।
চলতি বছরের জুলাই মাসে নাভানা লিমিটেড ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করে। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে জাপানি গাড়ির প্রতিষ্ঠান টয়োটা টুশো করপোরেশনের ব্যবসায়িক পার্টনার নাভানা লিমিটেড। নাভানা দীর্ঘদিন ধরে টয়োটা টুশো করপোরেশনের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য টয়োটা ব্র্যান্ডের একক ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তবে অভিযুক্তরা এই একক ডিস্ট্রিবিউটরশিপ ব্যবস্থা দুর্বল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে নাভানা লিমিটেডের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট বাজার পরিস্থিতি ও কর্মদক্ষতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এর মাধ্যমে নাভানার সঙ্গে টয়োটার ব্যবসায়িক সক্ষমতা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
তদন্তে পিবিআই জানিয়েছে, অভিযুক্তরা গ্রাহকদের অর্ডার করা যানবাহনের উৎপাদন ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করেন। পাশাপাশি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের জন্য বাধ্যতামূলক ‘ম্যানুফ্যাকচারার ইনভয়েস’ সরবরাহ না করে নাভানার স্বাভাবিক আমদানি ও সরবরাহ প্রক্রিয়া ব্যাহত করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে নাভানা লিমিটেড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। একই সঙ্গে কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা ও জরিমানার ঝুঁকিতে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে নাভানার ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে পরিকল্পিতভাবে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনের শেষাংশে পিবিআই জানায়, এই ৩ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৬ ধারা (বিশ্বাসভঙ্গ), ৪১৭ ধারা (প্রতারণা) ও ৩৪ ধারা (অভিন্ন উদ্দেশ্য) অনুযায়ী মামলা গঠনের মতো প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।