ওদের পেশাই প্রতারণা!
৩ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৪৩
ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর টোলারবাগ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবের দাবি, প্রতারক চক্রটির সদস্যরা কাস্টমসের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওদের পেশাই হচ্ছে প্রতারণা করা। গত ১৫ বছর ধরে তারা এ পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে দাবি করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলেন, নুরুল হক (৫৭), শেখ আলম (৪৩), ফিরোজ আলম (৫৭), মোশারফ হোসেন (৫৪), মাসুদ রানা (৪৩) ও রেনু মিয়া ওরফে রনি (৩৮)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে কাস্টমস সহকারী কমিশনারের দুইটি র্যাংক ব্যাজ, দুইটি সাদা শার্ট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং ২০টি ভিজিটিং কার্ড ও আটটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর সিইও (কমান্ডিং অফিসার) অ্যাডিশনাল ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।
র্যাবের সিইও বলেন, ‘মূলত তিনটি কৌশল অবলম্বন করে চক্রটি প্রতারণা করত। শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী, বিভিন্ন কোম্পানিতে কম বেতনে চাকরিরত ও চাকরি প্রত্যাশীদের টার্গেট করে যে কোনো মাধ্যমে পরিচয় হয়ে কাস্টমস অফিসে লোভনীয় চাকরির অফার দিতো। একপর্যায়ে তারা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। একটা সময় কাস্টমসের লোগো সংবলিত দামি ব্র্যান্ডের গাড়িযোগে গিয়ে ভিকটিমের বিশ্বাস অর্জন করতেন। একপর্যায়ে ভিকটিমকে বলা হতো, নিয়োগপত্র প্রস্তুত হয়েছে। মোটা অংকের টাকা না দিলে নিয়োগপত্র পাওয়া যাবে না। টাকা নেওয়া হয়ে গেলে তাদের আর পাওয়া যেত না। যে মোবাইল নম্বরে কথা হতো, তারা সেটি বন্ধ করে দিত।’
দ্বিতীয় কৌশলের বিষয়ে র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতারকচক্রটি বিভিন্ন ছোট-বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে কাস্টমস সহকারী কমিশনারের ভাই, শ্যালক কিংবা ভাগ্নে পরিচয় দিতো। কাস্টমস কর্তৃক জব্দ করা মালামাল, স্বর্ণের বার, বিস্কুট, জাপানি পার্টস, কটন সুতা, গোল্ডেন সুতা, স্বর্ণের চেইন, মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ, ড্রিল মেশিন, আয়রন ও গার্মেন্টস আইটেম বিক্রির অফার করত। তারা জানায়, এ সব মালামাল সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তারা সহজে দিতে পারব এরকম আশ্বাস দিতো। ভিকটিম লোভনীয় অফার পেয়ে চুক্তি করত এবং মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম জমা দিতো। পরবর্তীতে তাদের পাওয়া যেত না।’
তৃতীয় কৌশলের বিষয়ে র্যাবের সিই্ও বলেন, ‘প্রতারক চক্রটি ছোট বড় ভাঙারি ও পুরনো কাগজ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে কাগজ বিক্রির অফার করত। বিভিন্ন অফিস-আদালতের শত শত টন কাগজ তাদের কাছে বিক্রির কথা বলত। গোপনে ও কম মূল্যে এসব কাগজ তাদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতো। চুক্তি অনুযায়ী ওইসব ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় প্রতারক চক্রের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিতো। পরবর্তীতে প্রতারক চক্রের সদস্যদের আর খুঁজে পেত না ভিকটিমরা।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে কৌশিক নামে একজন চাকরি প্রার্থী প্রতারণার শিকার হয়ে র্যাবের কাছে অভিযোগ করে। কৌশিক জানায়, এরই মধ্যে চক্রটি কাস্টমসে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করছে এবং টাকার জন্য প্রতিদিনই ফোন করে। না হলে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হবে না বলে জানায়। অভিযোগ পেয়ে র্যাব টোলারবাড় থেকে প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে।’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের সিইও বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে এ চক্রটি প্রতারণা করে আসছে। তাদের পেশাই হচ্ছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। তারা স্বীকার করেছে, এরই মধ্যে গত তিনবছরে ৫০ জন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা ৫ লাখ টাকার নিচে কোনো কাজ করেনি। ৫০ জন মানুষের কাছ থেকে তারা অন্তত তিন কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এদের কারও কাস্টমসে চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। তবে একজন কাস্টমস কর্মকর্তা কীভাবে চলাফেরা করে, কী ধরনের পোশাক পরে, কী আচরণ করতে হয় তার সবই তারা আয়ত্ব করেছে। গ্রেফতারদের মধ্যে নুরুল হক হচ্ছে নেতা। শেখ আলম হচ্ছে দ্বিতীয় নেতা। আর বাকিরা হচ্ছে তাদের সহকারী। তারা বলেছে, এর আগে তারা বেশকয়েকবার চট্টগ্রাম ও রামপুরা থানার মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল। জেল থেকে বেরিয়ে তারা ফের একই কাজ শুরু করে।’
কেন তারা জেল থেকে ছাড়া পায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রতারণার আইনটি অনেক দুর্বল। কেউ এক কোটি টাকা প্রতারণা করলেও ৪২০ ধারায় মামলা আবার কেউ ১ লাখ বা ৫০ হাজার টাকা প্রতারণা করলেও ৪২০ ধারায় মামলা হয়। আবার প্রতারণার মামলা যখন আদালতে যায় তখন সহজেই জামিন পেয়ে যায়। টাকার আকার ভেদে আইনের পরিবর্তন হওয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/একে