Friday 17 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থেরাপিস্টের ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোরী, চলছে হুমকি-ধমকি!


১১ মার্চ ২০১৮ ২২:২৩ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৫৩

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আপনি বসেন, ওকে (এক প্রতিবন্ধী কিশোরী) থেরাপি দেওয়া হবে, এই বলে আমার অবুঝ মেয়েটিরে ভিতরে নিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় বললো, আমাদের নতুন একটা মেশিন এসেছে, তাই একটু বেশি সময় লাগবে। কিন্তু থেরাপি দেওয়ার নামে আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে সে ধর্ষণ করছে। আমি এর বিচার চাই- এভাবেই আহাজারি করছিলেন একজন অসহায় মা।

রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার পেইন সলুয়েশন অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি নামের একটি সেন্টারে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের শিকার একটি ১৭ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরী। গত ৮ মার্চ সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। আর তা ঘটিয়েছেন ওই সেন্টারের থেরাপিস্ট মাহফুজুর রহমান। সহায়তায় ছিলেন তার এক নারী সহকর্মীও।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর মধুবাগে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন এই মাহফুজুর।

ঘটনার পরদিন ৯ মার্চ মেয়েটির মা বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত) ২০০৩ ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহায়তা করার অপরাধ আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ এরই মধ্যে সে ঘটনায় অভিযান চালালেও মাহফুজুরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে ধর্ষণে সহায়তা করেছেন বলে অভিযুক্ত নারী সহযোগীটিকে আটক করেছে রমনা পুলিশ।

এদিকে, অভিযুক্ত মাহফুজের পক্ষ থেকে রমনা আওয়ামীলীগের নেতা পরিচয়ে সাগর নামের একজন এই ঘটনায় প্রথমে মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে আপোষ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে রাজি না হওয়ায় হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেলের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারের (ওসিসি) পরীক্ষায় মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরির্দশক মোফিজুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১১ মার্চ) ঘটনাস্থল পেইন সলুয়েশন অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে সারাবাংলার কথা হয় একই ভবনে ওই সেন্টারের উল্টোদিকের একটি এয়ারকন্ডিশন বিক্রি ও মেরামতের দোকান মালিক সোহেল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ৮ মার্চ রাতে ওই ঘটনার পর থেকেই দোকান (সেন্টার) টি বন্ধ রয়েছে।

অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল বলেন, এই পুরো ভবনটি চালু হয়েছে মাস কয়েক আগে। এরমধ্যে এখানে ব্যবসায়ীদের প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু ওনার সঙ্গে আমাদের কারও কোনও যোগাযোগ নেই।
ঠিক বিপরীত দিকেই আমার দোকান, কিন্তু আজ পর্যন্ত ডাক্তার সাহেব কিংবা তার সহকারী মহিলার সঙ্গে আমার কথা হয়নি, বলেন সোহেল মিয়া।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে রোববার (১১ মার্চ) দুপুরে রমনা থানায় বসে কথা হয় ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা ও মায়ের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আগেই তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি থেকে সরাসরি থানায় পৌঁছান। থানার যাবতীয় কাজ সেরে যাবেন আদালতে, সেখানে কিশোরী মেয়েটি ২২ ধারায় জবানবন্দি দেবে বলেও সারাবাংলাকে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মেয়েটির বাবা (সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না) যখন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন পাশেই বসেছিলেন তার স্ত্রী ও তাদের বুদ্ধি ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়েটিও।

কথা বলে মনে হচ্ছিলো পরিবারটি শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত। বাবা যখন ঘটনার কথা বলছিলেন, তখন পাশ থেকে মেয়েটির মা বলে ওঠেন, ‘সেদিন ছিল নারী দিবস। সারাদিন নারী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নের কথা শুনলাম, সন্ধ্যায় আমার মেয়েটি ধর্ষিত হলো-যে কিনা কিছুই বোঝে না, বোঝার মতো শক্তি তার নেই-সৃষ্টিকর্তা তাকে সে ক্ষমতা দেননি,’ একথা বলে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরেন মা।
কিছুটা সময় নিয়ে- কী ঘটেছিল সেদিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মেয়ে দুই হাতে কেবল দুটি করে চারটি আঙ্গুল নাড়াতে পারে, হাত-পা অবশ, কথা বলে আধো আধো। একইসঙ্গে সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও। এই থেরাপি সেন্টারে তার আকুপ্রেশার এবং স্পিচ থেরাপি চলছিল আর এ সুযোগটাই নিয়েছে লোকটি, বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কথপোকথনে আরও জানা গেলো, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউ ও হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কাছে মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল। সেই চিকিৎসক পরামর্শ দেন সিআরপিতে থেরাপি নিতে। কিন্তু তাদের বাসা মালিবাগ এলাকায় হওয়ায় সিআরপিতে না গিয়ে মালিবাগের ফিজিও থেরাপি সেন্টারটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই দম্পতি।

কিশোরীটির মা জানালেন, সেদিন ছিল থেরাপির দশম দিন। সন্ধ্যার পরপরই তিনি মেয়েকে নিয়ে ওই সেন্টারে যান। কিছুক্ষণ পর তাকে বাইরে বসিয়ে, মেয়েটিকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টা খানেক সময় পার হবার পর সহযোগী মেয়েটি তাকে ডেকে ভিতরে গিয়ে টিভি দেখতে বলেন। এরই মধ্যে এশার নামাজের সময় হলে অযু করে নামাজ পরতে যান এই মা। কিন্তু ভিতর থেকে সজোরে একটা শব্দ কানে এলে নামাজ শেষ না করেই ভেতরে ঢোকেন তিনি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিলো- তার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে কিছু না বলেই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।

‘কিন্তু ততক্ষণে আমার মেয়ের সর্বনাশ হয়ে গেছে-সেটা আমি বুঝতে পরিনি,’ বলে আহাজারি করে ওঠেন ও মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন মা।

তিনি বলেন, ‘এখন মনে পড়ছে আমি ভেতরে গেলে টিভির শব্দটাও বাড়িয়ে দিয়েছিলো সহযোগী মেয়েটি।’

এই মা জানালেন, তিনি ঘরে ফিরেই তার মেয়ের কাছে জানতে পারেন কি ঘটেছিলো ওই সেন্টারে।

থেরাপিস্ট মাহফুজুর মেয়েটিকে কেবল ধর্ষণই করেননি, চর-থাপ্পড়ও মেরেছেন। ধর্ষণের পর মেয়েটিকে জোর করে একটি ওষুধ খাওয়ানো হয়, যেটি একটি কন্ট্রাসেপটিভ পিল হতে পারে বলেই ধারণা করছেন এই মা।

‘আমার মেয়েটি যখন বলছিলো, ‘আম্মুকে বলে দেবো’ তখন তার পীঠে সজোরে থাপ্পড় মারে ওই ডাক্তার,’ সেই শব্দই আমি শুনেছিলাম, বলেন তিনি।

বাসায় ফেরার পর মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেই বিষয়গুলো নিশ্চিত হলে তখনই ওই সেন্টারে যান মা। কিন্তু গিয়ে দেখেন সেন্টার বন্ধ। মেয়েটির বাবা তখন থেরাপিস্টকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরে সেন্টারে ফিরতে আধাঘণ্টা সময় চান। কিন্তু আর আসেননি। এরপর থেকে ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

রাতেই মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) তে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত হলে তার চিকিৎসা শুরু হয়। তিন দিন পর রোববার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় মেয়েটি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা মোফিজুর রহমান সারাবংলাকে জানান, ঘটনার সহযোগী মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি মাহফুজ পলাতক রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘লোকটি খুব ধুরন্ধর প্রকৃতির, তার মোবইল ফোন ট্র্যাক করেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তার মধুবাগের বাসায় গিয়ে তা তালাবদ্ধ পেয়েছি।’

বাড়িওয়ালার বরাত দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, থেরাপিস্ট মাহফুজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে সেই রাতেই বাসায় তালা লাগিয়ে চলে যান। মাহফুজুরের একটি দশ বছরের মেয়ে ও একটি সাত বছরের ছেলে রয়েছে।

ঘটনাটিকে পুলিশ গুরুত্বের সাথে দেখছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে ধর্ষণের এমন ঘটনার বিষয়ে কোন ছাড় নেই। কোনওভাবেই আসামি পার পাবে না।’

মেয়েটির বাবা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহফুজের পক্ষ থেকে রমনা আওয়ামীলীগের নেতা পরিচয়ে সাগর নামের একজন প্রথমে আমার সঙ্গে আপোষ করতে চেয়েছে, তাতে রাজি না হওয়ায় পরে টেলিফোনে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

টেলিফোন কলগুলো মালয়েশিয়ার একটি নম্বর থেকে আসছে বলেও জানান তিনি।

‘আমার কিশোরী মেয়েটি, যে কিনা আজ পর্যন্ত বাবা-কথাটি ঠিকমতো বলতে পারেনি, সেই মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হলো। আমি এর বিচার চাই-এ জন্য যা যা করতে হবে আমি করবো,’ বলেন এই বাবা।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ/এমএম

বিজ্ঞাপন

আকিফের তোপে রংপুরের আটে আট
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪১

অভয়নগরে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর