সংকটে জবি ক্যান্টিন: বেশি দাম, মানহীন খাবার
১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৪২
।। জগেশ রায়, জবি করেসপন্ডেন্ট ।।
জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রতিষ্ঠার একযুগ পার হলেও শিক্ষার্থীদের খাবারের সুব্যবস্থা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। খাওয়ার জন্য নেই কোনো মানসম্পন্ন ক্যান্টিন। অবকাশ ভবনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় ক্যান্টিনেরও কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত ক্যান্টিনে শিক্ষার্থীরা বিমুখ হয়ে পড়ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর দফায় দফায় খাবারের দাম বাড়লেও খাবারের মান বাড়ে না। ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন- ডায়রিয়া, আমাশয়ের ও পেটের পীড়ার মত জটিল রোগে। ক্যান্টিনে খাবারের নিম্নমান ও দাম বেশি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বাইরের ফুটপাতের কমদামী খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
জানা যায়, গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্যান্টিনের খাবারের মান যাচাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও কোনো ফল হয়নি। কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহপ্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ক্যান্টিনে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে টেবিল। বসার জন্য কয়েকটা চেয়ার। অধিকাংশ টেবিলে নেই বসার জন্য কোনো চেয়ার। নষ্ট হয়ে আছে পানির ফিল্টার। ফলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সকালের নাস্তায় থাকে আধা সিদ্ধ পরটা, ডাল/ভাজি, ছোট ছোট সিংগারা ও সবজি রোল। নেই কোনো ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা। আর দুপুরে মেলে নিম্নমানের চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি যা দুপুরের একমাত্র খাবার। ৩৫ টাকা দামের ওই খিচুড়িতে কোনো সবজিও থাকে না। এছাড়া সবজি রোল ১০ টাকা, ডাল বা সবজি ৫ টাকা, পরোটার দাম ৫ টাকা, সিঙ্গারা ও ছোট পুরি ৪ টাকা; যা খুবই নিম্নমানের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ভালো খাবারের হোটেল না থাকায় একমাত্র ভরসা ক্যান্টিন। এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে ক্যান্টিন ম্যানেজার। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে ইচ্ছেমতো দাম রাখছে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ফুটপাতের খাবারও খেতে হয়। এমনকি ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়ায়ও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের মেসে থাকতে হয়। ক্যাম্পাসে এসে অপেক্ষাকৃত কমদামে স্বাস্থ্যকর খাবার খাব, সে ব্যবস্থাও নেই। উল্টো দামও বেশি। এ নিয়ে আমরা চরম সংকটে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘সকালে ক্লাস করতে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। বাইরে খাবার সময় না পেয়ে এখানেই খেতে হচ্ছে। প্রশাসন চাইলে আমাদের এই খারাপ অবস্থা দূর করতে পারেন।’ সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ ইসলামও একই কথা বলেন।
প্রশাসন থেকে বলা হয়, ‘ক্যান্টিন পরিচালনার জন্য আমরা পানি, গ্যাস ও জায়গা দিয়েছি। হিসাব করে দেখলে এগুলার মাসে বিল অনেক আসে। বাইরে সমমূল্যে ভালো খাবার বিক্রি করতে পারলে ক্যান্টিনের ম্যানেজার কেন বাইরের চেয়ে ভালমানের খাবার পরিবেশন করতে পারবে না। ক্যান্টিন ম্যানেজারের পক্ষে থেকে আমাদের বলা হচ্ছে, ছাত্র সংগঠনের নেতারা ফাউ খাচ্ছে, কিন্তু তারা নির্দিষ্ট করে বলে না কারা খাচ্ছে, কত জন খাচ্ছে? তারা শুধু বলতেছে ফাউ খাচ্ছে। আমরা এতো কিছু দেওয়ার পরেও যদি ভালো মানের খাবার না দিতে পারে তাহলে এটা ম্যানেজারের ব্যর্থতা।’
ক্যান্টিনের ম্যানেজার আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই ভালো খাবার পরিবেশন করতে কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটা হয়ে ওঠে না। বর্তমানে শিক্ষার্থীরাও খেতে কম আসে। আর ছাত্রসংগঠনের নেতারা ফাউ খায় এটা সবাই জানে।’ কতজন ফাউ খায় এবং কারা খায় সেটা বলতে তিনি রাজি হননি।
খাবারের মান বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, খাবারের মান বাড়ানো সম্ভব না। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো অনুদান না দিলে খাবারের মান বৃদ্ধি করা যাবে না।’
এদিকে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিনে দুপুরে ভাতের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভাতের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী বছর জানুয়ারি থেকে ভাত চালু করার পরিকল্পনা আছে।’
ক্যান্টিনে ফাউ খাওয়া ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কল্যাণের পরিচালক আব্দুল বাকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ক্যান্টিনের ম্যানেজারের কাছে ফাউ কতজন খায় তাদের লিস্ট চেয়েছিলাম কিন্তু দিতে পারিনি। ক্যান্টিনের উন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে ক্যান্টিনের ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/জেআর/এমও