Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসুর নিক্তিতে মাজহারুল কবির শয়ন


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৯:৪২

মাজহারুল কবির শয়ন

।। আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স ।।

বলা হয়ে থাকে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সাহসের সঙ্গে বাজালে দুর্বল বাদ্যযন্ত্রেও মধুর সুর ধ্বনিত হয়। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে আমাদের মনের প্রত্যাশার ঝুলি অসংখ্য অপূর্ণতায় ভরপুর। সেগুলোর চুম্বক অংশ উল্লেখ করতে গেলেও এই লেখাটি বিষয়গত প্রাধান্য হারাবে।

অন্যদিকে আশা করার মতো কিছু নেই, তেমনও নয়।  কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বাঙালি যা পেয়েছে, তার প্রধানতম অবদান এসেছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।  আর সেই শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ও নেতৃত্ব বিকাশের অনবদ্য প্ল্যাটফর্ম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।  দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু বন্ধ থাকার পর বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা নিয়ে পরিষ্কার নন।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর অনেকে  নিজেদের মনের মন্দিরে স্থান দেওয়া কল্পনার ডাকসু’র সঙ্গে অপেক্ষমাণ নির্বাচনের মাধ্যমে চালু হতে যাওয়া ডাকসু’র রূপের সামঞ্জস্য খুঁজে পেতে ব্যস্ত। এ সব শঙ্কার জবাবেই কল্পিত ‘দুর্বল বাদ্যযন্ত্রে’র উল্লেখ করলাম।

ডাকসুকে যদি আমরা আপাত প্রতীয়মান একটি দুর্বল বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করি।  তবে প্রয়োজন এসে দাঁড়ায় এমন কিছু বাদকের।  যারা বিশ্বাস রাখেন, ভালোবাসেন ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারেন।  মাজহারুল কবির শয়ন তেমনই এক ব্যক্তিত্বের নাম।  হালের ক্যাম্পাস জীবন থেকে আরম্ভ করে ছাত্র রাজনীতির মাঠ পর্যন্ত অনেকেই প্রসিদ্ধ হন। নিজের সামর্থ্য দিয়ে কিংবা ‘ওপরের আশীর্বাদে’ অনেকে শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতেও সক্ষম হন।  দিনশেষে কারও প্রাপ্তি ঘটে নন্দিত হয়ে, কেউবা আবার নিন্দার বাণীও কুড়ান। সক্ষমতা, অনবদ্যতা ও সৃজনশীলতার বিচারে জনপ্রিয়তা বলি কিংবা গ্রহনযোগ্যতা অর্জন—যেকোনো মাপকাঠিতে ডাকসু’র নতুন যুগের ক্রীড়নক হিসেবে একজন মাজহারুল কবির শয়ন অনেক বেশি পরীক্ষিত।

বিজ্ঞাপন

ডাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব নির্বাচনের চর্চা শুরু করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি।  তৎকালীন ডাকসু’র নিয়মিত কার্যক্রমের বড় অংশজুড়ে থাকতো বিতর্ক। সেই ক্রমধারায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি বাংলাদেশে বিতর্ক আন্দোলনকে শুধু বেগবানই করেনি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একের পর এক সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্মও দিয়ে গেছে।  আসন্ন  ডাকসু নির্বাচনে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের পক্ষে সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রতিনিধিত্বকারী মাজহারুল কবির শয়ন ছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির একজন সফল সাধারণ সম্পাদক।  বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠনে নেতৃত্ব দানের পূর্বে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন নৃবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাব ও সূর্যসেন বিতর্কধারায়। বিতর্কের এই সংগঠক শুধু নেতা হিসেবেই সফল ছিলেন না, নিজে বিতার্কিক হিসেবেও বয়ে এনেছেন অসংখ্য অর্জন। এত কিছুর পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চায়ও নিবিষ্ট ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার  সদস্য হিসেবে সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয় তথা জাতির সকল প্রকার রাজনৈতিক ঘটনা ও ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে প্রগতিশীল ভাবধারার জোয়ারের পেছনে অনন্য অবদান রেখেছেন তিনি।  রাজনৈতিক সভা, কর্মসূচি ও আনুষ্ঠানিক বাতাবরণের বাইরে তার লেখা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমে আকৃষ্ট করেছে প্রত্যেকটি সচেতন শিক্ষার্থীর দৃষ্টি।

মাজহারুল কবির শয়নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্ফুটিত এই তারকাসম কালযাপনের সূচনা সেই স্কুল জীবন থেকে। নেতৃত্ব, বিতর্ক চর্চা ও রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় তিনি রেখে এসেছেন কুমিল্লা জিলা স্কুল ও পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যয়নের সময়েও। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজের মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভাকে তিনি বৃহৎ আকারে মেলে ধরার প্রয়াস পান। ‘প্রকাশই প্রতিভা’—এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি তার অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দেশের প্রায় সব বড় বিতর্ক প্রতিযোগিতার আসরে, অর্জন হিসেবে এনেছেন ইউজিসি আয়োজিত সম্মানজনক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নশিপ।  ইতোপূর্বে নিজের বিভাগ ও হলের হয়ে অর্জন করেছেন উল্লেখযোগ্য খ্যাতি।

বিজ্ঞাপন

তার নেতৃত্বে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি ২০১৬-১৭ মেয়াদকালে পার করেছে অসাধারণ একটি বছর। বিভিন্ন আন্তঃক্লাব ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ সংখ্যকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি আয়োজন করেছে বেশ কয়েকটি সফল অনুষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কুড়িয়ে এনেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার টাইটেল। নতুন মাত্রায় আন্তঃহল, আন্তঃবিভাগ নাফিয়া গাজী ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা আয়োজনের বাইরে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিইউডিএস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আয়োজন করে পাঁচ দিনব্যাপী ‘ঢাকা উৎসব’।  বিতর্ক ছাড়াও সেই উৎসবে সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয়, বক্তৃতা, গল্প বলা, চিত্রাঙ্কন, ফটোগ্রাফি ও রচনা প্রতিযোগিতায় ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশন এলাকার অসংখ্য স্কুল কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।  সংগঠনের দায়িত্ব পালনকালে তার একাগ্রতা ও পরিশ্রম সবাইকে উদবুদ্ধ করেছে। অনেক সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পরও থামেনি তার কর্মতৎপরতা। সৃজনশীল নেতৃত্বের মধ্যমে কর্মীদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করার আশ্চর্য এক শক্তি আছে মাজহারুল কবির শয়নের।

সংগঠনের কাজে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকা মানুষেরা তাদের নিজেদের মধ্যকার সুকুমার বৃত্তি উন্মোচনের তেমন সুযোগ পান না। শয়ন সেখানে ব্যতিক্রম। তার লেখা যেমন প্রতিবাদের বৃষ্টি ঝরিয়েছে, তেমনি থেকেছে অসাধারণ বিশ্লেষণে টইটম্বুর।

ডাকসু নির্বাচনে সাহিত্য সম্পাদক পদে যথোপযুক্ত সব্যসাচী একজন প্রার্থী মাজহারুল কবির শয়ন। অত্যন্ত তাৎপর্য্যপূর্ণ এই পদটির চাহিদা মেটাতে যে ধরনের মননশীলতা, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন—তার সবক’টির সমন্বয়ে মাজহারুল কবির শয়ন এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজে সাবলীলভাবে আপন গুণের সৌরভ ছড়াচ্ছেন এবং জানেন কিভাবে অন্যদের মেধার সুন্দর পরিচর্যা করতে হয়।  আশাবাদী জাতি যখন প্রবলভাবে ডাকসু নামক বীণা’র সুরলহরীর আকাঙ্ক্ষায়, তখন বর্তমানে এম ফিল শ্রেণীতে অধ্যয়নরত সদা নির্লিপ্ত এই ছেলেটি হয়ে উঠতে পারে নবযুগের সক্রিয় ডাকসু’র একজন অনন্য সুরদাতা।

লেখক: সাবেক সভাপতি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি

সারাবাংলা/এমএনএইচ

আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স ডাকসু মাজহারুল কবির শয়ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর