মেধাবী শিক্ষার্থী যেখানেই পড়ুক, সফল হবেই: ড. মিলান প্যাগন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৩২
অধ্যাপক ড. মিলান প্যাগন। একজন স্লোভানিয়ান। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)’র ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্লোভেনিয়ার ম্যারিবর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্গ্যানাইজেশনাল সায়েন্সে মাস্টার্স এবং ডক্টরেট অব সায়েন্স অর্জনের পর যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস এডমিন্সট্রেশনে ডক্টরেট অব ফিলোসফি অর্জন করেন। ২০০২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গ্যানাইজেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টিপি কলেজ অব বিজনেসে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে অধ্যাপনা করেন।
বাংলাদেশে আসার আগে দুবাইয়ের আল ঘুরিয়ার ও যায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ড. প্যাগন। নিজ দেশ স্লোভেনিয়া ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষকতা করেছেন। তার আগে স্লোভেনিয়ার স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন কিছুকাল। শিক্ষকতার পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পুলিশ সায়েন্স এন্ড ম্যানেজমেন্টের সহযোগী সম্পাদক তিনি। এছাড়াও স্ট্রেস এন্ড হেলথ, নিউরোলিডারশিপ জার্নালের সম্পাদক বোর্ডের একজন সদস্য। ম্যানেজমেন্ট জার্নাল, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্টাডিজ, অর্গানাইজেশনাল বিহেভিওয়র, পারসোনাল সাইকোলজি, স্ট্রেস এন্ড হেলথ, ক্রস-কালচারাল ফিলোসফিসহ নানা বিষয়ে তার অসংখ্য আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এতদসংক্রান্ত বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের লেখক তিনি।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরায় আইইউবি’র ক্যাম্পাসে হয়ে গেল জব ফেয়ার ২০২০। জব ফেয়ারের প্রয়োজনীয়তা, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, দক্ষ ও মানসম্মত মানবসম্পদ তৈরিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান ও ভূমিকা, নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে অবস্থানসহ নানা বিষয়ে সারাবাংলার সাথে কথা হয় অধ্যাপক পোগানের। একান্ত সাক্ষাৎকারটি নেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রাজনীন ফারজানা।
সারাবাংলা: আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের কিসের ওপর জোর দেওয়া হয়? একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন নাকি চাকরির জন্য প্রস্তুত করা?
ড. মিলান প্যাগন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা ছাত্রদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করার চেয়েও বেশি কিছু। সেটা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে না, ট্রেড স্কুল হয়ে যায়। গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি বা ব্যাংকের জন্য কর্মী প্রস্তুত করার চেয়েও আমরা বেশি গুরুত্ব দেই ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলে এখনকার প্রচলিত চাকরির অধিকাংশই হারিয়ে যাবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডেটা ইত্যাদির যুগ আসবে। অল্পস্বল্প ধারণা থাকলেও আমরা এখনো নিশ্চিত নই ঠিক কী কী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
এছাড়াও এখন ‘গিগ ইকোনমি’ নিয়ে কথা হচ্ছে যেখানে স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ধারণা বদলে যাচ্ছে। দৈনিক আট ঘণ্টার কর্মঘণ্টা, চল্লিশ বছরের কর্মজীবন ইত্যাদি ব্যবস্থা বদলে যাবে। গিগ ইকোনমির ফলে কর্মীরা এখন কর্মস্থলে অল্প সময় ব্যয় করে অথবা নিজেরাই উদ্যোক্তা হচ্ছেন। এর জন্য সম্পূর্ণ নতুন নতুন কর্মদক্ষতা, চাহিদা ও কর্মনীতি প্রয়োজন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আঙ্গিক বদলাতে হবে। প্রচলিত কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্যও তার ছাত্রদের প্রস্তুত করতে হবে।
এখন আমাদের ছাত্রদের সমস্যা সমাধান, যোগাযোগ দক্ষতা, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, ল্যাটারাল থিংকিং ইত্যাদি দক্ষতা বাড়ানোতে জোর দিতে হবে।
সারাবাংলা: আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের তরুণ উদ্যোক্তা হতে উদ্দীপিত করা হয়?
মিলান প্যাগন: অবশ্যই। আমরা তাদের নতুন ধরণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মত দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তাই আমরা শুধুমাত্র বর্তমান চাকরি বাজারের জন্য প্রস্তুত করছি না, তারা যেন নিজেদের মত করে কিছু করতে পারে সেটাও মাথায় রাখছি।
আমাদের গ্রাজুয়েটরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পায়। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদিতে যেয়ে হাতে কলমে শিক্ষা নেয়। আমরা নতুনত্ব ও টেকসই শিক্ষায় গুরুত্ব দেই।
সারাবাংলা: আপনারা একটি জব ফেয়ারের আয়োজন করলেন, এই জব ফেয়ারে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এসেছেন। আপনি কী মনে করছেন তাদের দেখে আপনার ছাত্ররা তরুণ উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রেরণা পাবে?
মিলান প্যাগন: দেখুন এই জব ফেয়ারের উদ্দেশ্য বর্তমানে বাজারে থাকা প্রতিষ্ঠান যারা কর্মী খুজছে তাদের সঙ্গে আমাদের ছাত্রদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। ছাত্ররা যেন চাকরির বাজার বুঝতে পারে সেটা নিশ্চিত করা। কিন্তু একইসঙ্গে আমরা এটাও মাথায় রাখি যে, ছাত্রদের গ্রাজুয়েট হিসেবে তৈরি করে দেওয়াতেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। চাকরি পাওয়ার পরেও বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক ঘটনা ঘটতে পারে। চাকরি চলে যেতে পারে, কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ছাঁটাই হতে পারে। এমন অবস্থা থেকে সে-ই বেরিয়ে আসতে পারবে যে নিজেকে ‘এমপ্লয়েবল’ বা চাকরির যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি যোগ্য প্রমাণ করতে পারবে। আমরা ছাত্রদের সাফল্য অর্জনে সাহায্য করছি কিন্তু নিজেদের চাকরিযোগ্য করে তুলতে তাদের নিজেদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। এর জন্য শুধু একাডেমিক শিক্ষা অর্জনই সব নয়। ক্লাস করা আর পরীক্ষা দেওয়ার চেয়েও বেশি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তাদের।
সারাবাংলা: বাংলাদেশ সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিধরণের ভূমিকা রাখতে পারে?
মিলান প্যাগন: এক্স্যাক্টলি। ঠিক এই কারণেই আমি সবসময় বলি আমরা আমাদের ছাত্রদের নিজেদের চাকরি নিজেরা খুঁজে নেওয়া বা অর্থোপার্জনের নতুন নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে। অনেকেই আজকাল ফ্রিল্যান্সিং করেন, উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তারা এমন সব ধারণা সামনে নিয়ে এসেছেন যা আগে কেউ ভাবেনি। আমাদের ছাত্ররাও যেন নিজেদের জন্য কোন না কোন জায়গা খুঁজে নেয় সেটা নিশ্চিত করতে চাই।
সারাবাংলা: নতুন এই চাকরির বাজারের জন্য আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে কী কোন ধরণের পরিবর্তন এসেছে?
মিলান প্যাগন: অবশ্যই। আমরা সবসময়ই এটি আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। যেমন কিছুদিন আগেই আমরা আমাদের ‘স্কুল অব বিজনেসে’র নাম বদলে ‘স্কুল অব বিজনেস এন্ড অন্টারপ্রনারশিপ’ রেখেছি। কারণ সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা প্রচলিত চাকরির জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি আমাদের ছাত্রদের নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শুধু ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্ররাই নয়, অন্যান্য বিভাগ যেমন ফার্মেসি বা লাইফসাইন্সের ছাত্ররাও যেন নিজেদের মত করে কিছু করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে চাই।
সারাবাংলা: আইইউবি’র ছাত্ররা যেন গবেষণা করে, সেটি নিশ্চিত করা কতটা জরুরি আপনার জন্য?
মিলান প্যাগন: আইইউবি আরও বেশি বেশি গবেষণা ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশিদারিত্বে মনোযোগ দিচ্ছে। কিছুদিন আগেই আমরা কানাডার ব্রক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘২+২ প্রোগ্রাম’ নামের একটি অংশিদারিত্ব চুক্তি করেছে। এই প্রোগ্রামের আন্ডারে আইইউবির ছাত্ররা স্থানীয় খরচে দুইবছর পড়ার পর বাকি দুই বছর কানাডায় পড়ে সেখানকার ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে। বিশ্বের আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমন চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।
আমরা চাই আমাদের ছাত্ররা পাঠ্যসূচি নির্ভর লেখাপড়া থেকে বেরিয়ে আরও বেশি গবেষণায় যুক্ত হোক। তারা শুধু ল্যাবে বসেই গবেষণা করবে তা না। তারা সামাজিক বিভিন্ন বিষয়েও গবেষণা করতে পারে। মনসামাজিক অবস্থা নিয়ে গবেষণা করতে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, বস্তিতে যাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এধরণের গবেষণা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। তাছাড়া আমি গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই, আমাদের এখানে প্রায় পঞ্চাশটি ছাত্র সংগঠন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব যার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখে। এছাড়াও মেধাবিকাশের জন্য নাচ, গান, থিয়েটার, সঙ্গিত বিষয়ক ক্লাবও রয়েছে।
সারাবাংলা: ক্লাব প্রসঙ্গে জানতে চাই বাংলাদেশি স্থানীয় সংস্কৃতি নাকি মিশ্র সংস্কৃতি কোনটি বেশি গুরুত্ব পায় আপনার কাছে?
মিলান প্যাগন: চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। আমরা চাই আমাদের ছাত্ররা যেন নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানে ও গর্ববোধ করে। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও বুঝতে হবে যে বর্তমান বিশ্বে শুধুমাত্র নিজেদের উপর লক্ষ্য স্থির রাখলে চলবে না। ‘লোকালি বেজড’ হলেও আপনাকে আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তা করতে হবে। ইংরেজি ভাষাও শিখতে হবে এই কারণে। এখন চাকরির বাজার সম্প্রসারিত সারা বিশ্বে। অনেকসময় দেখা যায় অন্য দেশের কেউ এদেশের কোন ছাত্রের চেয়ে যোগ্যতায় কম হয়েও ইংরেজিতে দক্ষতার কারণে ভালো চাকরি পেয়ে যায়।
সারাবাংলা: আইইউবিতে ইংরেজি নাকি বাংলা, কোন মাধ্যমের ছাত্র বেশি? বাংলা মাধ্যমের ছাত্রদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আলাদা কী কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে? থাকলে সেই কোর্সগুলোর লক্ষ্য কী?
মিলান প্যাগন: আমাদের এখানে তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ শতাংশ ছাত্র ইংরেজি মাধ্যমের। বাকি সবাই বাংলা মাধ্যমের। এখানে বাংলা মাধ্যমের ছাত্ররা যেন ইংরেজি ভাষাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে তার জন্য শুরুর দিকে কিছু বেসিক ইংরেজি কোর্স থাকে। এই কোর্সগুলোতে ইংরেজি লেখা, পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিকেশন কোর্স থাকে। যেমন, বিজনেস কমিউনিকেশন কোর্স।
সারাবাংলা: বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করছে। এই অবস্থায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটা সাহায্য করছে বলে মনে করেন আপনি?
মিলান প্যাগন: আমি মনে করি তারা দারুণভাবে সাহায্য করছে। সুযোগ পেলে আমি সবসময়ই একটা কথা বলি আর তা হল, বাংলাদেশের মানুষকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। এদেশে প্রায় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দশ থেকে পনেরোটি হয়ত মানসম্পন্ন। পাঁচটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়ার মান বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু অনেক মানুষ এই পার্থক্য না জেনেই একাধারে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন করেন যা আমাদের ছাত্রদের জন্য অসম্মানজনক। কারণ আমাদের ছাত্র বিশেষত প্রথমদিকের পঁচিশ শতাংশ ছাত্র কোন অংশেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম না। অনেকসময় অনেক ভালো।
সারাবাংলা: আইইউবি এবং আরও যেসব টপ র্যাংকড বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তারা কী বাংলাদেশি ছাত্রদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও ভালো অবস্থানে নিতে সাহায্য করছে?
মিলান প্যাগন: অবশ্যই। অবশ্যই। আমাদের ছাত্ররা বিভিন্ন ভালো মানের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে এবং নামীদামী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।
সারাবাংলা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করার কারণ কী?
মিলান প্যাগন: সত্যি বলতে আমি বিশ্বাস করি একজন ছাত্র সরকারি না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। কারও মেধা থাকলে সে যেখানেই পড়ুক না কেন সে সফল হতে পারবেই। ঢাকার বাইরে পড়াশোনা করাও খুব একটা প্রভাব ফেলে না এতে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় সেরাদের সেরা ছাত্রদের বাছাই করে নেওয়া হয় সেখানে। খুব একটা চেষ্টা না করলেও তারা ভালো করবেই। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা পাবলিকে ভর্তি হতে পারে না তারা এসে ভর্তি হয়। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও যে অনেকের প্রথম পছন্দ থাকে না, তা নয়।
সারাবাংলা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন অনেকের দ্বিতীয় পছন্দ থাকে?
মিলান প্যাগন: ভালো ছাত্রদের প্রায় সবাইই বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু আমাদের এখানেও ভালো মানের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এটা আসলে মানুষের মাইন্ডসেটের বিষয়। তবে আশার বিষয় হল, পরিবর্তন আসছে।
সারাবাংলা: মেধাবীদের জন্য আইইউবিতে কোন বিশেষ সুবিধা রয়েছে?
মিলান প্যাগন: হ্যাঁ আমাদের এখানে মেধাবীদের জন্য দারুণ সব বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। গতবছর আমরা প্রায় ১৬ কোটি টাকার বৃত্তি দিয়েছি। ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া প্রথম দশ জনকে আমরা শতভাগ বৃত্তি দেই। ‘মেরিট বেজড’ ছাড়াও কিছু বৃত্তি আছে ‘নিড বেজড’। এখানে ভর্তি হওয়ার পর যদি কোন ছাত্র অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তবে তাদের সাহায্য করা হয়।
যেহেতু বাংলাদেশে শিক্ষাঋণ তেমন জনপ্রিয় নয়, আমরা ছাত্রদের জন্য ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা আনতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের হয়ে প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে। পরবর্তীতে ছাত্রদের কেউ অসুস্থ হলে, গ্যারান্টর মারা গেলে তখন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাকি টাকা পরিশোধ করবে।
সারাবাংলা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থানে না থাকার কারণ কী বলে মনে করেন?
মিলান প্যাগন: দেখুন, আরও কিছু শর্ত থাকলেও র্যাংকিয়ে ভালো অবস্থানের মূখ্য শর্তই হল সেরা মানের আন্তর্জাতিক জার্নালে রিসার্চ প্রকাশ করা। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছে। এর অন্যতম কারণ প্রয়োজনীয় অর্থায়নের অভাব। একটি গবেষণা চালানোর জন্য যে প্রচুর টাকা প্রয়োজন যেখানে এদেশের ঘাটতি রয়ে গেছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ গবেষণায় নিয়োজিত থাকলেও যৌথভাবে গবেষণার সুযোগ ও সামর্থ্য কম। তাই এখানে যেসব গবেষণা হচ্ছে সেগুলো খুব একটা মানসম্মত নয় যা বিদেশি নামী জার্নালে প্রকাশিত হবে। ঠিক এই কারণেই এদেশের ছাত্ররা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত সুবিধা পেয়ে ভালো করলেও দেশে ভালো করতে পারছে না।
সারাবাংলা: আইইউবি গবেষণা ও পাবলিকেশনকে কতটা গুরুত্ব দেয়?
মিলান প্যাগন: এব্যপারে আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আমরা সবসময়ই গবেষণাকে গুরুত্ব দেই। এখানে সহকারী, সহযোগী ও পূর্ণ অধ্যাপক হওয়ার জন্য অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কিছু জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে হবে। এখন আমরা ফ্যাকাল্টি অ্যাপ্রেইসাল ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি। এতে পদন্নোতির জন্য পাবলিকশন, শিক্ষাদানসহ আরও কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
সারাবাংলা: নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
মিলান প্যাগন: ইউরোপের ছোট্ট একটা দেশ স্লোভানিয়া থেকে এসেছি আমি। খুব বেশি হলে দুইলাখ জনসংখ্যার দেশ। ঢাকায় আসার আগে আমি চারবছর দুবাই ছিলাম। সেখানে একজন বাংলাদেশি সাহায্যকারী ছিল আমার। তার কাছে থেকে তার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার সম্পর্কে জানতে পারি ও বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। তাই বাংলাদেশে আসার সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসি এই দেশ সম্পর্কে জানতে।
সারাবাংলা: কেমন লাগছে এই দেশে?
মিলান প্যাগন: দেখতে দেখতে সাড়ে পাঁচ বছর হয়ে গেল। শুরুর দিকে চার বছরের চুক্তি হলেও সরকারের প্রায় আড়াই বছর লেগে যায় আমাকে নিয়োগ দিতে তাই আমার অবস্থানের মেয়াদ বেড়ে সাড়ে ছয় বছরে দাঁড়ায়।
আমি সত্যিই উপভোগ করেছি এখানে। আরও একবছর মেয়াদ আছে আমার। এখন দেশে ফিরে যেতে চাই। সেখানে আমার মা আছে, পরিবার আছে। এখন তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।
সারাবাংলা: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মিলান প্যাগন: আপনাকেও ধন্যবাদ
অধ্যাপক মিলান প্যাগন আইইউবি আইইউবি ভিসি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ড. মিলান প্যাগন