ঠাঁই নেই কারাগারে: ৭ দিনে বন্দি ৫ হাজার
২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৪১
||এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট||
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে বিভিন্ন হামলা, মামলার আসামি, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের আরও বেশি হারে গ্রেফতার করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বলে দাবি করে আসছে দলগুলো। তারা একে নির্বাচনের আগে দলের শক্তি খর্ব করতে উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতারও বলছেন। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তাদের কাছে মাদক মামলায় আটকরাই বন্দি হয়ে আসছে সবচেয়ে বেশি।
তবে কারণ যেটাই হোক সাম্প্রতিক এসব ধর-পাকড়ে দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার আড়াই গুনেরও বেশি বন্দিকে ঢোকানো হয়েছে। যে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কারাগারগুলোর কর্তৃপক্ষ। একটি হিসাব দেখাচ্ছে গত সাত দিনে বেড়েছে চার হাজার ৯৫২ জন কারাবন্দি।
কারা নথি বলছে দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মোট কারাবন্দি রয়েছে ৯৬ হাজার ৪২৮ জন। যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ২ দশমিক ৬ গুন বেশি।
কারা কর্তৃপক্ষের মতে, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির মোট ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৭১৪ জন।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার তারিখে সারাদেশের কারাগারে মোট ৯৬ হাজার ৪২৮ জন বন্দি রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ২০ ডিসেম্বর সে সংখ্যা ছিলো ৯১ হাজার ৪৭৬ জন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রতিদিনই বলা হচ্ছে, ভোট উপলক্ষে বিএনপি এবং সমমনা দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এবং অপরাধীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাওয়ায় কারাগারে স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বন্দি রয়েছে।
তবে ভোট সামনে রেখে কারাবন্দির সংখ্যা বেড়েছে এমনটা স্বীকার করতে নারাজ কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে থেকেই বলে আসছে- নির্বাচনকে সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত করতে তাদের ধর-পাকড় অব্যাহত রয়েছে।
২৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার তারিখে রাজধানীর অদূরে কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল ১১ হাজার ৩১২ জন। অথচ এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা চার হাজার ৫৯০ জন।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারেও ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বন্দি রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, হাইসিকিউরিটি এই কারগারের ধারণ ক্ষমতা এক হাজার হলেও বন্দি রয়েছে দুই হাজার ৯৮৬ জন।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বাচনের আগে আটক ও বন্দি হলেও এদের প্রায় সকলেই কোনও না কোনও অপরাধের আসামি হিসেবেই কারাগারে আসছে। যার অন্যতম হচ্ছে মাদকের মামলা।
২৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার তারিখে ঢাকার কারাগারগুলোতে মাদকের মামলায় বন্দির সংখ্যা ৮ হাজার ৯৮০ জন, চট্টগ্রামে বন্দির সংখ্যা ৯ হাজার ২৫ জন, সিলেটে বন্দির সংখ্যা ৬৪১ জন, রাজশাহীতে বন্দির সংখ্যা ৫ হাজার ২১৭ জন, রংপুরে বন্দির সংখ্যা ১ হাজার ৫১৮ জন, খুলানাতে ১ হাজার ৮৫৮ জন, বরিশালে ১ হাজার ৯১ জন, ময়মনসিংহে ৮৭ জন।
কারা কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশের কারাগারগুলোতে বন্দিরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ধারণ ক্ষমতার অধিক বন্দি থাকায় তাদের ঘুমানোর জায়গা, বালিশ, টয়লেটের ব্যবহারসহ নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভোট উপলক্ষে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক হয়ে কারাবন্দী।
তিনি আরো বলেন, গত ৮ নভেম্বর, তফশীল ঘোষণার পর হতে গতকাল ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির মোট ৯ হাজার ২০২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন মতে সারাদেশে নির্বাচন পূর্ব ধর-পাকড়ের খবর আগে থেকেই ছিলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও সহিংসতামুক্ত রাখতে সারাদেশে দুই লাখ ৪০ হাজার জনের একটি তালিকা হাতে নিয়ে মাঠে রয়েছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে তাদের আটক করে একটি সংঘাতমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষেই এই অভিযান বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের।
তবে কারা কর্তৃপক্ষের এআইজি (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোট উপলক্ষ্যে কারাগারে বন্দির সংখ্যায় তেমন প্রভাব নেই। আসলে মাদক অভিযান শুরুর পর বন্দির সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু এই সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিনিধিত্ব করে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দিদের বিষয়ে আমাদের সবসময়েই ম্যানেজ করে নিতে হয়। কারাগারগুলোতে সবসময়েই ৮০/৮৫ হাজার বন্দি থাকে। তাই এখনকার বন্দির সংখ্যা যে খুব বেশি মাত্রাতিরিক্ত তা নয়।’
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএম