‘গতানুগতিক কাজ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়’
৪ জুলাই ২০১৮ ২১:২৯
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: এসডিজি বাস্তবায়নে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তা ছাড়া বৃহৎ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এসডিজির বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনের সেশনে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে এসছে এ মন্তব্য।
তারা বলেন, কাঠামোগত প্রস্তুতির বাইরে যে কোনো এসডিজি বাস্তবায়ন মেয়াদে যে কোনো চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। যেমন রোহিঙ্গাদের আগমন এ দেশের টেকসই উন্নয়নে অন্যতম ঝুঁকি তৈরি করেছে। এজন্য যে কোনো ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার, মন্ত্রণালয়, উন্নয়নসহযোগী সংস্থা, এনজিও, বেসরকারি উদ্যোক্তসহ সব নাগরিককে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার (৪ জুলাই) দুপুর থেকে এ জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়।সম্মেলনের আয়োজন করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনভেশন ইউনিট (জিআইইউ)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
পরবর্তীতে দিনব্যাপী তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হচ্ছে, এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রণালয় ও এ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর ভূমিকা, পরিসংখ্যান, আইএমইডি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান এবং ভূমিকা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, শুধু গতানুগতিক কাজ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ জন্য কাজের বাইরেও সৃজনশীল কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এমডিজিকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন এসডিজিকে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে যা বলা হয়েছে সেগুলো এসডিজির সঙ্গেই যুক্ত। যেমন দারিদ্র নিরসন এবং ক্ষুধা দুর করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য, যা এসডিজিরও প্রথম প্রাধান্য। সরকারের বার্তা একটাই। তা হচ্ছে স্বকীয়তা, স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং স্বাধীনতা। সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
এসডিজির প্রস্তুতি শেষ এবং এটা বাস্তবায়নের পালা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পর্যায় যে যার স্থান থেকে কাজ করতে হবে। সবার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসছে এটি অন্যতম একটি অর্জন।
একটি সেশনে অংশ নিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এসডিজির জন্য একটি বড় ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই উন্নয়নে জন্য হুমকি। তাই পানি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিয়ে সরকার ডেল্টা প্লান তৈরি করেছে। এটি বাস্তবায়নে কাজ করার মধ্যদিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরেও বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় বাড়ানো, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য আমাদের ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে আমার অনুমান। এই সময়ের মধ্যে আমাদেও ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ২৭ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। জিডিপিতে বিনিয়োগের পরিমাণ হতে হবে ৪০ শতাংশ এবং বৈষম্য পরিমাপের সূচক বর্তমানের দশমিক ৪৮ থেকে দশমিক ৩৩ এ কমিয়ে আনতে হবে। এটি অর্জন করতে হলে আমাদের অর্থনীতির বিশেষ করে উৎপাদন এবং রফতানিতে বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে। শিল্পায়নকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির মূল হাতিয়ার করার পরার্মশ দেন এই অর্থনীতিবিদ। এ জন্য ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সৃষ্টিতে মনোযোগী হতে হবে বলে তিরি মনে করেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। এ জন্য সরকারি, বেসরকারি, এনজিও, দাতা সংস্থা এমনকি পুরো সমাজকে এক প্লাটফর্মে আনতে হবে। এরকম সম্মেলন সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে এসডিজির বাস্তবায়ন শুরু হলেও এখন কাঠামোগতভাবে এসডিজির অ্যাকশন প্লান অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।
নজিবুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নকালীন যে কোনো সময় অনাকাঙ্খিত চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। যেমন রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এটিকে এসডিজির সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে হবে। এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর সৃজনশীল চিন্তার ফসল। জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। তারা আমাদের পাশেই আছেন। অর্থায়নে উন্নয়নসহযোগীদের এগিয়ে আসতে হবে।
আইএমএফ-এর প্রতিনিধি রাঙ্গা গুট সেলফ বলেন, এসডিজি বাস্তায়নে আর্থিক খাতে চারটি ক্ষেত্রে সংস্কারের সুযোগ রয়েছে বলে আইএমএফ মনে করে। এগুলো হলো, আর্থিক খাতে সংস্কার, উন্নয়ন ব্যাজেট ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার অফিসে এসডিজির ন্যাশনাল অ্যাকশনন প্ল্যানের মোড়ক উম্মোচন করেছেন। আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এসডিজি বাস্তবায়নের ম্যাপিং করেছি। আমরা ১০০ বছরের ডেল্টা প্লান করেছি এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়ার প্ল্যান তৈরি করছি। সব কিছুই এসডিজিকে ঘিরেই করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন সেশনে অংশ নেন অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, পিকেএসএ-এর চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের এর নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমানসহ অনেকে।
সারাবাংলা/জেজে/এমআই