‘আমার করের টাকায় দেশের উন্নতি হচ্ছে সেটাই বড় গর্ব’
৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২০
তুহিন সাইফুল||
‘যে দেশ আজকে আমরা গড়ে তুলবো, সেই দেশ আমরাই উপভোগ করবো। আমাদের সন্তানদের হাতেও সেই দেশটিই দিয়ে যেতে পারবো। সুতরাং দেশ গড়তে আমাদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। এই গড়ে তোলার পথে রাষ্ট্রকে ঠিক মতো কর দেওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আমি সে কাজটিই করে যাচ্ছি। আর পুরোটাই দায়িত্বের অংশ হিসেবে করছি।’
সারাবাংলাকে কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন গাজী গোলাম মর্তুজা। তরুণ উদ্যোক্তা ক্যাটেগরিতে দেশের শীর্ষ করদাতাদের মধ্যে সেরাদেরও সেরা একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই তরুণ ব্যবসায়ী ও সংগঠককে ট্যাক্সকার্ড দিয়ে সম্মানিত করার ঘোষণা দিয়েছে। রাষ্ট্র তাকে দিচ্ছে দায়িত্বশীল ও অনুগত নাগরিকের মর্যাদা।
সারাবাংলার কাছ থেকে প্রশ্ন ছিল- কেমন লাগছে এই সম্মাননা?
এটা গর্বের ব্যাপার। একজন তরুণ করদাতা হিসেবে এটা দারুণ গর্বের। একটা কথা বলি, যে দেশ আজকে গড়বো, সেই দেশ আমরাই উপভোগ করবো। প্রবীণরা কিন্তু উপভোগ করবেন কম। আমরা উপভোগ করবো বেশি কারণ হয়তো আরেকটু বেশি দিন বেঁচে থাকবো। আমরা কি চাই- আমাদের ছেলে-মেয়েদের যেন বিদেশে পড়াশোনা করতে যেতে না হয়। ওরা যেনো দেশেই পড়াশোনা উন্নত পরিবেশ ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা পায়। ওদের জন্য একটি সুন্দর দেশ দিয়ে যাওয়ায় আমাদের দায়িত্ব। আর একজন নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করা। আমি সে কাজটা করার চেষ্টা করছি।
আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে তিনি অস্ত্র হাতে লড়াই করেছেন। এখন দেশ তো স্বাধীন। এখন আমাদেরকে অস্ত্র ধরতে হবে না। এখন দেশকে মেধা ও মনন দিয়ে গড়তে হবে। এখন আমরা রাজস্ব দিয়ে দেশটাকে যদি গড়তে পারি আমাদের জন্যই সেটা ভালো হবে। আমি নতুন প্রজন্মকে রাষ্ট্রকে তার রাজস্ব দিতে আহ্বান করছি। কারণ দেশটা যদি সমৃদ্ধশালী হয় সেটা আমরাই উপভোগ করবো, গর্ব করবো যে এটা আমাদের দেশ। আমরা আনন্দের সঙ্গে মিলে মিশে এই দেশে থাকবো।
এখন তো তরুণরা বেশ উৎসাহী হয়ে রাজস্ব জমা দিচ্ছে, রাষ্ট্রের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে…
এর জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই সরকার গত দশ বছরে, দেশের যে উন্নতি করেছে সেটা অভাবনীয়। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর বিষয়টা নিয়ে আমি বলতে চাই, একটা সময় আমরা বিদেশের কাছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়ে উন্নয়ন করতাম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন দেশের উন্নয়নের জন্য দেশের মানুষই যথেষ্ট। আজকে যে পদ্মা সেতু হচ্ছে সেটি এই একটি কারণেই হয়েছে। আজকে দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখছে তাদের টাকায় তাদের সেতু। তাদের টাকা বলতে কি, এটা রাজস্বের টাকা। নতুন প্রজন্ম যারা আসছে, সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে; এর কারণ ট্যাক্স দেয়ার উপকারিতা তারা উপভোগ করছে। আজকে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার বলেন আর এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার বলেন অথবা হাতিরঝিল আর মেট্রোরেলের কথা বলেন এগুলো কিন্তু দেশের মানুষের টাকাতেই হচ্ছে। সমস্যা সাময়িক। এখন ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি একদিন মেট্রোরেলে করে অফিসে যাবো। এবং আমি গর্বের সঙ্গে বলবো আমার টাকায়, আমাদের মানুষের টাকায়, আমাদের দেশের টাকায় এই উন্নতি হয়েছে।
এর উল্টোও কিন্তু হয়। তরুণরা এগিয়ে এলেও দেশের অনেক সিনিয়র সিটিজেন কিন্তু কর ফাঁকি দিচ্ছেন… এমন আক্ষেপ অভিযোগ শোনা যায়…
আসলে কথাটা বলতে খুব খারাপ শোনায়, যারা করখেলাপী অথবা ঋণ খেলাপী একসেন্সে বললে তারা আসলে রাষ্ট্রবিরোধী। এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। আমি মনে করি এটা জাতির সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাও। কারণ দেশটা আমার, দেশটা আমার মা। এর উন্নয়ন হলে আমারই গর্ব। যারা ঋণখেলাপী বা করখেলাপী তাদের বলবো মাতৃভূমি তখনই উন্নত হবে যখন আমরা সবাই মিলে উন্নতি করতে পারবো। একটা রাস্তা যদি হয় আর সেখানে যদি ট্রাফিক জ্যাম না থাকে তাহলে আমদানী রফতানীর জন্য অন্য দেশের মতো আমাদের পণ্যও সহজ সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। দেশ প্রেম যার আছে সে কখনো করখেলাপী হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, যারা করখেলাপী তাদের মধ্যে কোন দেশপ্রেম নেই।
করখেলাপীদের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে কি মনে করেন?
সরকার অনেক পলিসি হাতে নিয়েছে। আমাদের দেশের আইনও যথেষ্ট শক্তিশালী। আসলে হয়েছে কি, মানুষ যখন নয়-ছয় খুঁজে বের করে তখন কি করার থাকে। সরকার কিন্তু আয়কর মেলা করেছে, এই যে আমাদের ট্যাক্সকার্ড দিচ্ছে এটাও তো এনকারেজিং ফ্যাক্টর। এখানে কম্পিটিশন হওয়া দরকার। আজকে অন্য কেউ পেয়েছে, কাল আমি কার্ড পাবো। এভাবেওতো কেউ উৎসাহিত হতে পারে। আর আমাদের লক্ষ্য থাকে- এবছর পেয়েছি, আগামী বছরও যেনো পেতে পারি। তবেই তো একটি সুস্থ্য প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তাতে দেশটাই উপকৃত হবে।
আমি মনে করি সরকার তার সেরাটা করছে। একটা সার্বভৌম দেশের জন্য ট্যাক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন দেশের প্রতি মমত্ববোধ যদি নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে পারে বা নৈতিকভাবে যদি নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে চায় তাহলে আইনের প্রয়োজন পড়বে না। মানুষ নিজে থেকেই রাজস্ব পরিশোধ করবে।
আপনার বাবা গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি একজন্য খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ক্র্যাকপ্লাটুনের বেশ দুঃসাহসী যোদ্ধা ছিলেন তিনি। এই পরিচয়টা নিশ্চয় দেশের প্রতি আপনার দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়? একধরণের গর্বও কি কাজ করে আপনার চিন্তায়?
অবশ্যই। আমার বাবা একজন সংসদ সদস্যও। মানুষ চাইলেই এমপির ছেলে হতে পারবে। ব্যাবসায়ীর ছেলে হতে পারবে। কিন্তু একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এটা কিন্তু আমাদের মতো হাতে গোনা কয়েকজনই। এটা যতোটা গর্বের ততোটাই আনন্দের। চাইলে কেউ আর এটা হতে পারবে না। মানুষ চাইলেই হয়তো মন্ত্রীর ছেলে হতে পারবে, বড় শিল্পপতির ছেলে হতে পারবে কিন্তু খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হতে পারবে না। এটি একটি ইউনিক বিষয়। আর অবশ্যই গর্বের। আমি একজন শিক্ষিত মানুষ এটা যেমন অনেক গর্বের সঙ্গে বলি তেমনি বাবার পরিচয়ও আমি গর্বের সঙ্গে দেই। অন্য কোন পরিচয় আমাকে এতোটা আপ্লুত করে না। এবং ঠিকই বলেছেন, এই কারণেই দেশের প্রতি একটা আলাদা রকমের টান, একটা আলাদা রকমের ভালবাসা কাজ করে আমার ভেতর। দায়িত্বও বাড়িয়ে দেয়।
আমরা কি এটা ধারণা করতে পারি যে আপনি পিতাকে অনুসরণ করে রাজনীতিতে আসছেন?
রাজনীতিতে আসবো কিনা জানি না। দেশকে গড়ার জন্য যদি রাজনীতি করা প্রয়োজন হয় তাহলে করবো। ট্যাক্স দিতে হলে দিবো। যদি কখনো, আল্লাহ্ না করুক, দেশের জন্যই অস্ত্র ধরতে হয় তাহলে ধরবো। কিন্তু আমাদের স্বাধীন দেশ কখনো যেন পরাধীন না হয় সেই ব্যাপারে যতোকিছু করতে হয় করবো। আসলে বিষয়টা খুব সিম্পল। এই মাটিতে জন্মায়ছি আমি এর জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি। এটা যদি রাজনীতি হয় তাহলে অবশ্যই করবো।
ধরে নিলাম আপনি রাজনীতিতে আসছেন… আইনপ্রণেতাও হয়েছেন। তাহলে পরের প্রজন্মের জন্য আপনার পলিসি কেমন হবে? আপনি নিজে একজন উদ্যোক্তা, আপনি কি উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হবেন? অনেকে বলে থাকেন, এখানে নীতিগুলো ঠিক উদ্যোক্তাবান্ধব নয়…
এটা পুরোপুরি ভুল কথা। আমাদের দেশের মতো উদ্যোক্তাবান্ধব আইন পৃথিবীতে খুব কম জায়গায় আছে। আমরা যদি এক্সপোর্ট অল্টারনেটিভ ইন্ডাস্ট্রি করি তাহলে আমাদের ট্যাক্স রিবেইট আছে। সরকার অনেক অনেক অনেক সুবিধা দেয় নতুন উদ্যোক্তাদের। আমাদের দেশে দশ টাকায় একজন কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন মডেল কোথাও নেই। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবকিছু বাংলাদেশে রয়েছে। সরকারও বেশ আন্তরিক। নতুন করে যদি কিছু করার থাকে সেটা সময় বলে দেবে।
আপনি তো বাইরে পড়াশোনা করেছেন, সেখানে নিশ্চিত ভবিষ্যতও ছিল বলা যায়। দেশে ফিরে এসেছেন কেন?
আমি যখন পড়াশোনা করি তখন অ্যামেরিকার একটা কোম্পানি আমাকে জব অফার করেছিল গ্রিন কার্ডসহ। তখন আমি ভেবেও ফেলেছিলাম যে বিদেশে ছয় মাস চাকুরি করলে হয়তো কোন অভিজ্ঞতা পাবো। আমার সহজ বুদ্ধি ছিলো, তো আমি আমার বাবাকে ফোন দিয়ে বলি, ছয়মাস পরে যদি একটা গ্রিনকার্ড নিয়ে দেশে আসতে পারি অসুবিধা কোথায়! তখন তিনি আমাকে বলেন, দেশটাকে এই কারণে স্বাধীন করিনি। তার ঠিক পনেরদিন পর আমি দেশে ফিরে আসি।
আমাদের দেশের একটা বড় সমস্যা ব্রেইনড্রেইন। আমাদের দেশের যারা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আছেন, তারা বিদেশের মাটিতে যাচ্ছেন কর্মসংস্থানের জন্য, তবে হ্যাঁ তারা অবশ্যই দেশে হ্যান্ডসাম রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তাদের কাছে আমি ও আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেশে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য তাদের দেশে থাকাও প্রয়োজন। দেশের বিকাশের জন্যও তাদের দেশে থাকা প্রয়োজন। তারা যে অভিজ্ঞতা বিদেশে অর্জন করেছে সেটি তারা দেশে নিয়ে আসুক। এটাই আমি চাই।
এখন অ্যামেরিকা থেকে চীনা এবং জাপানিরা তাদের দেশে ফেরত যাচ্ছে। তারা দেশে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করছে, অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাচ্ছে। চাইনিজ ইকোনমি এখন এমনভাবে এভলভ করছে যে বিদেশ থেকে তারা দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। এরা আগে ছিল চাকরিজীবী এখন হয়েছে উদ্যোক্তা- ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। চিনে এবং ভারতে আমার অনেক বন্ধু আছে যারা অ্যামেরিকায় বা ইউরোপে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে গেছে। তাদের পরিকল্পনাটা ছিল শুধু পড়াশোনা করা। ফলে তারা ফিরে গেছে। আমি চাই আমাদের দেশে যারা মেধাবী আছেন তারা বিদেশে যাক, ব্যবসা কিংবা চাকুরি যা ইচ্ছা করুক কিন্তু অভিজ্ঞতাটা দেশে নিয়ে এসে তারা যেন উদ্যোক্তা হন। তারা যেন দেশকে নিয়মিত কর দেন। তাহলেই দেখবেন দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে।
এখন পৃথিবীতে মোট বিলিয়নিয়ার হিসেব করলে, এশিয়া হ্যাজ বিকাম দ্য বিলিয়োনিয়ার মনোপলি! চিন, ভারত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, জাপান, কোরিয়া এমনকি ফিলিপিন্স বললেও সেখানে অনেক বিলিয়নিয়ার রয়েছে। এখন উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপের চেয়েও বেশি বিলিয়নিয়ার এশিয়ায়। এশিয়া ইজ দ্য রাইজিং ইকোনমি। আমি মনে করি, আমাদের যারা বিদেশে চলে গেছেন তারা দেশে ফিরে এসে কাজ করলে দেশটা তরতর করে উপরে উঠে যাবে। তারা যেন উদ্যোক্তা হন এবং দেশের উন্নতির জন্য যার যা কিছু আছে তা দিয়ে যেন চেষ্টা করেন।
কিন্তু অনেককেই ফিরিয়ে আনার মতো পরিবেশ কি আমরা তৈরি করতে পেরেছি?
হোম। ঘর এমনটা জিনিস সেটা অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বলেন আর বিদেশে বলেন, সকালে উঠে মানুষ তড়িঘড়ি করে পাখির মতো উড়ে যায় তাদের কর্মস্থানে। কিন্তু দিন শেষে ঘরে ফেরে। আমি জীবনে বহু হোটেলে থেকেছি, বাড়িতে থেকেছি কিন্তু আমার বাসায় বা আমারে ঘরের মতো ঘুম আর কোথাও হয়নি। আমি নিশ্চিত সেটা সবাই বলবে। এখন আমার দেশে যে পরিবেশ আছে, যা-ই থাকুক সেটা পরিপাটি করার দায়িত্ব তো আমার। এড়িয়ে গেলে কিছুই হবে না। হ্যাঁ, আমাদের দেশের যানজট একটা বড় সমস্যা, এখন আমরা যদি মনে করি আমাদের দেশ অপরিষ্কার, আমি জানি না, একেকটা মানুষের একে রকম দর্শন বা মানসিকতা, তাহলে কি আমরা তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবো না? আমার কথা একটাই, যে মাটিতে আমি জন্মেছি সেটাই পবিত্র। আমার মনে হয় যারা ফিরে আসেননি, তারাও একদিন ফিরে আসবেন। আর এই সরকার যেভাবে উন্নয়ন করছে, তারা এখানে আসতে বাধ্য হবেন। কারণ এদেশে কাজ করা যতো সহজ, উদ্যোক্তা হওয়া যতে সহজ, নর্থ অ্যামেরিকা বা ইউরোপে ততোটা সহজ নয়। যেকোন শিল্পপতির সঙ্গে বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে।
অন্য প্রসঙ্গে যাই, ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও আপনার বেশ সুনাম রয়েছে। ক্রিকেট লিগে আপনাদের বেশ কয়েকটি দল রয়েছে। আপনি বিসিবি’র একজন পরিচালক। বিপিএল নিয়ে কি কোন পরিকল্পনা রয়েছে? একটা স্পোর্টস চ্যানেল করবেন বলেও শোনা যায়…
টেলিভিশন চ্যানেলেরে জন্য আমরা আবেদন করে রেখেছি। সরকার অনুমতি দিলে শুরু করবো। আর বিপিএল এর কথা কি বলবো, আমরা নারায়ণগঞ্জ নিয়ে একটা দল চাইছি কিন্তু নারায়ণগঞ্জ তো ঢাকার অন্তর্ভুক্ত। আর বিপিএল হচ্ছে বিভাগ ভিত্তিক দল নিয়ে টূর্নামেন্ট। তবে তারা যদি কখনো টিম দেয় তাহলে আমরা সর্বপ্রথমে দলটি পাওয়ার চেষ্টা করবো।
তবে ক্রিকেটের মূল যে লিগ, মানে যেখান থেকে ক্রিকেটাররা তৈরি হয়, সেখানে আমরা অংশ নিয়ে যাচ্ছি নিয়মিত। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগেও আমাদের দল রয়েছে। সবসময় আমরা একটা নতুন প্লেয়ার, একটা নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন উপহার দেয়ার চেষ্টা করি বাংলাদেশকে। জাতির আশা পূরণ করার চেষ্টা করি। শাকিব, তামিম যারা বিপিএল খেলে, তারা তো প্রিমিয়ার লিগ খেলেই নিজেদের তৈরি করে। সেখানে আমাদের দল আছে এটাই গর্বের। ওই যে বললাম, বিল্ডিং দ্য নেশন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত কতদূর দেখছেন?
আমি স্বপ্ন দেখি না, বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ সামনে বিশ্বকাপ নিবে। এর জন্য অনেক কষ্ট, পরিশ্রম আমাদেরকে করতে হয়েছে। আসলে হয়েছে কি, একটা ক্রীড়াবান্ধব দেশ, তারচেয়েও বেশি হচ্ছে একজন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী আমরা পেয়েছি বলেই আজকে এতদূর এসে পৌঁছুতে পেরেছি। এটা একদিনে হয়ে যায়নি।
ছিয়ানব্বই-সাতানব্বই সালে যখন কেনিয়াকে হারিয়ে আমরা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করি, তখন আমার বাবা ক্রিকেট বোর্ডের ডিরেক্টর ছিলেন। এরপর থেকেই আমরা হাটি হাটি পা পা করে এগিয়েছি। এরপর ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের দায়িত্বগ্রহণ করেন, তখন ওনার টপ প্রায়োরিটি ছিল ক্রিকেটকে ডেভেলপ করার। আমি দেখি নাই অন্য কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী জয়ের পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাবার খান। উপহার দেন। ফোনে কথা বলে ওদের দুঃখ-দুর্দশার খবর নেন। এটা আমাদের একটা বড় পাওয়া। আমার মনে হয় না অন্য কোন দেশে এমনটা হয়।
একজন ভালো অভিভাবক থাকলে যেমন সন্তান সু-মানুষ হয়ে বেড়ে উঠে, তেমনি একজন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়ায় আমাদের ক্রিকেটও তরতর করে বেড়ে উঠছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত বলতে আমি আগামী বিশ্বকাপ নিয়ে বলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি আসছে টুর্নামেন্ট আমরা ফাইনাল খেলবো।
সেরা করদাতার ট্যাক্সকার্ড পাচ্ছেন গাজী দস্তগীর, গাজী মর্তুজা
সারাবাংলা/টিএস/এমএম