Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরে যাওয়ার তোড়জোর, ভবন ভাঙা নিয়ে কথা নেই বিজিএমইএ’র


৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:১৫

বিজিএমএইএ ভবন

ঢাকা: উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ১২ এপ্রিল শেষ সময়। এ সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকে তাদের কার্যালয় পুরনো জায়গা থেকে সরানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে হাতিরঝিলে অবস্থিত ওই ভবনটি ভাঙার নির্দেশও। এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা ছিল ভবন ভাঙার সব খরচ বিজিএমইএ বহন করতে হবে।

আর এক সপ্তাহ পরেই হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়ের সমাপ্তি হচ্ছে। বিজিএমইএ পুরনো জায়গা থেকে উত্তরায় নতুন দফতরে নিজেদের কার্যক্রম শুরুর তোড়জোর করছে। তবে ভবন ভাঙার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলছে না পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

ভবন ভাঙা হবে কি হবে না এ বিষয়ে সংগঠনটির নেতাদের কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে সংগঠনটির নেতারা ১৫ এপ্রিল থেকে উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিলেও হাতিরঝিলের ভবনটিতে থাকা অন্য অফিস স্থানান্তরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

আরও পড়ুন: রায় বাস্তবায়ন প্রয়োজন, বিজিএমইএ ভবন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

‘আর সময় চাইবে না’ এমন মুচলেকায় একবছর সময় নিলেও ভবনটিতে থাকা রফতানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক অন্য ভবনে স্থানান্তরে এখনো কোনো কাজই শুরু হয়নি। এদিকে এ মামলার আইনজীবী জানিয়েছেন, মালামাল সরানো শেষ হলেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ রাজউকের শুরু করার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব মালামাল সরিয়ে ভবন খালি করে দেওয়া না হলে বিজিএমইএর বিরুদ্ধে ফের আদালত অমান্যের অভিযোগ দায়ের করা হবে।

এদিকে হাইকোর্টেরে নির্দেশনা মেনে হাতিঝিলের বিজিএমইএ ভবন থেকে উত্তরায় সরে যাচ্ছে বিজিএমইএ কার্যালয়। উদ্বোধন করা হয়েছে নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্স। তবে হাতিরঝিলের ভবন ভাঙার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না বিজিএমইএ নেতারা। সময় বাড়াতে পুনরায় আবেদন করা হবে কী না- তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। ভবনে থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অফিস সরানোর বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।

বিজ্ঞাপন

আবার সময় চাইবেন কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার মতো এখনো সময় আসেনি।’

সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মুচলেকা দেওয়ার পর আবেদন করে কেমনে? কোর্ট বলে অবৈধ, মহামান্য আদালত বলে অবৈধ, আমরা তাহলে অবৈধ হয় থাকব কীভাবে?’

ভবন ভাঙার বিষয়ে ফের সময় চাওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বিজিএমইএর আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে এখনো সময় আছে, দেখি সেই পর্যন্ত।’

ভবনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো সরে গেলাম। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানও তাদের অফিস স্থানান্তর করছে। ভবনে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হবে। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়েই ভবন খালি হওয়ার কথা।’

বিজিএমইএ ভবনে থাকা ব্যাংকের বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির বলেন, ‘নতুন ভবনে ব্যাংকের কয়েকটি বুথ যাচ্ছে।’ ভবন ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে মন্তব্য করা সম্ভব নয় বলে জানান বিজিএমইএর এই নেতা।

এদিকে, আর সময় চাওয়া হবে না এমন শর্তে মুচলেকা দিয়ে ভবন ভাঙতে গত বছর ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে এক বছরের সময় দেন আপিল বিভাগ। আদেশের কপি পাওয়ার পর থেকে সময় গণনা শুরু হয়। সে হিসেবে আগামী ১২ এপ্রিল একবছর সময়সীমা শেষ হবে। এটি নিয়ে তারা তৃতীয়বারের মতো সময় নেয়। ওই সময় আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন, অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

জানতে চাইলে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি উত্তরায় তাদের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। এটাকে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলে আমি মনে করি। কেননা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। এখন দ্রুত তারা সরে গেলে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেনো বেআইনি কাজ করে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।’

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন,  ‘যেহেতু এখনও ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে। আমরা আশা করব এ সময়ের মধ্যে তারা সরে যাবে। অন্যথায় ফের তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হবে।’

ওই আইনজীবী আরও বলেন, ‘তাদের মালামাল সরানো হলেই রাজউক ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবে। এক্ষেত্রে রাজউককে ভবন ভাঙার খরচও দিতে হবে। তা না হলে বিজিএমইএকে ভবনটি ভেঙে দিয়ে যেতে হবে।’

রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনিরউদ্দিন প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনেন। পরদিন হাইকোর্ট বিজিএমইএ ভবন কেনো ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।

পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৩ সালে বিজিএমইএকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে ভবন ভাঙার জন্য বলা হয়। এরপর রিভিউ আবেদনটিও খারিজ হয়। পরবর্তীতে আদালতের কাছে সময় চেয়ে বারবার আবেদন করে সংগঠনটি। সবশেষ গত বছরের ৩ এপ্রিল এক বছরের জন্য সময় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

একাধিকবার সময় নিয়েও আদালতের নির্দেশে বিজিএমইএ ব্যর্থ হলে ভবন করার ক্ষেত্রে জায়গা না পাওয়ার অজুহাত দেখায়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫০ শতাংশ কমমূল্যে উত্তরার ১৭ নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমি দেয়া হয়। আর সেই জমির ওপর ১৩ তলা বিজিএমইএ কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে নতুন এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ভবনটির পুরো কাজ শেষ হতে পারে ২০২০ সালের জুনে। তবে কয়েকটি তলার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় ও হাইকোর্টের নির্দেশের বাধ্যবাধকতায় চলতি মাসেই বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় উত্তরায় স্থানান্তরিত হচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সময় শেষ হবে ১২ তারিখ। এই সময়ের মধ্যেই বিজিএমইএর কার্যালয় স্থানান্তরিত হবে উত্তরায়। সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি শেষ। চলতি মাসের ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখ ছুটি থাকায় ১৫ তারিখ থেকে উত্তরার নতুন কার্যালয়ে তারা অফিস করবেন।

এদিকে বুধবার (৩ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার বলেছিলাম ভবনটা যেন খালের ওপর না হয়।’ হাতিরঝিলে তাকাতে গেলে এই ভবন একটি বড় বাধা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া জলাধার রক্ষায় ও হাতিরঝিলের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে কোর্টের রায় কার্যকর করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এজেডকে/এমআই/একে

বিজিএমইএ হাতিরঝিল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর