অনলাইন ভ্যাট মেশিন চায় ৩০ লাখ প্রতিষ্ঠান, এনবিআর দিচ্ছে ১০ হাজার
১২ জুন ২০১৯ ০৮:৩২
ঢাকা: নতুন আইন অনুযায়ী অনলাইন ভ্যাট সিস্টেম চালু করতে নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু ৩০ লাখ ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ইএফডি চেয়ে আবেদন করলেও এনবিআর দিচ্ছে মাত্র ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানকে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকেই ইএফডি আমদানির নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। এজন্য, দ্রুতই সার্কুলার জারি করবে সংস্থাটি। এরপরও ইএফডি ব্যবহার না করলে জরিমানার পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ থেকে ৫০ হাজার।
ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসটির মাধ্যমে (ইএফডি) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট কাটার হিসাব সরাসরি যুক্ত হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে। ভ্যাট ফাঁকি রোধ করে রাজস্ব বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য।
আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র, বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ও এর যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান, গৃহস্থালি সামগ্রী বিক্রির দোকান, অলংকার বিক্রির দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আদায়ে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। ইএফডি কিনতে দরপত্রও দিলেও তা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যমান ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) থাকা যেসব ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আমদানি করে তাদের মধ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই ইএফডি আমদানি করবে।
ইএফডি চালু হলে, এনবিআরের সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটগুলো অফিসে বসেই তার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের যাবতীয় তথ্য জানতে পারবে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান কি পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে আর কতোটা ভ্যাট পরিশোধ করেছে সেটাও জানা যাবে। এছাড়া, বর্তমানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআর ব্যবহার হয়। এখন তার পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা পণ্য ও সেবা কেনাবেচায় ইএফডি ব্যবহার করবেন।
এনবিআর বলছে, ইএফডি হচ্ছে অত্যাধুনিক এক ধরনের মেশিন বা হিসাব যন্ত্র। ইসিআরের একটি উন্নত সংস্করণ। এটি ব্যবহার করলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং ভ্যাট ফাঁকি কমবে। গত ২০০৯ সাল থেকে সেবার বিভিন্ন খাতে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআর মেশিন চালু করা হয়।
ইএফডি মেশিন সরাসরি ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। অর্থাৎ চাইলেই ব্যবসায়ীরা বিক্রয়ের তথ্য গোপন করতে পারবেন না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার বেচাবিক্রির রেকর্ড সরাসরি এনবিআরের সার্ভারে চলে যাবে। আর নতুন মেশিন টেম্পারিংও করা যাবে না। মেশিন টেম্পারিং করলে তার তথ্যও ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, সারাদেশে আমাদের ৩০ লাখ দোকান রয়েছে। আমাদের সব দোকানে ইএফডি ব্যবহারের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কতো দোকান ইএফডি ব্যবহার করতে পারবে সেটা আমরা জানি না।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি থেকে ইএফডি ব্যবহারে সক্ষম ৩০ লাখ দোকানের আবেদন করা হয়। এই মুহুর্তে আমাদের পক্ষে সব প্রতিষ্ঠানে ইএফডি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরের আগস্ট মাস থেকে ১০ হাজার দোকানে ইএফডি ব্যবহার শুরু করতে পারব। এছাড়া, ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে আরও ৯০ হাজার ইএফডি ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ইএফডি যন্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কেনা হবে।
ইএফডির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ইএফডি চালু হলে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হবে। ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট কেটে রাখার সাথে সাথে এনবিআরে ভ্যাটের টাকা চলে আসবে। ইএফডির জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুতই যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হবে।
এর আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআরের বদলে ইএফডি বসাতে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিল এনবিআর। এ অর্থ বরাদ্দে অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া হয়েছিল চিঠি। সমপরিমাণ এ টাকায় ১০ হাজার মেশিন কেনার পরিকল্পনা ছিল। আর ওই মেশিনগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে কেনা দামে সরবরাহের কথা ছিল। তবে, এখন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ইএফডি আমদানির পুরো প্রক্রিয়াটিই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি আমদানিকারকদের হাতে। আগে যারা ইসিআর আমদানি করতেন এমন আমদানিকারকসহ নতুনেরাও এ যন্ত্রটি আমদানি করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া ইএফডি ব্যবহার করতে খুব দ্রুতই সার্কুলার জারি করবে এনবিআর। এরপরও দোকানে ইএফডি ব্যবহার না করলে জরিমানার পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ থেকে ৫০ হাজার।
সরকারের গত মেয়াদ থেকেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তোড়জোড় চলছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে আইনটি পাশ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের তুমুল আপত্তির মুখে স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরও দুই বছর হাতে সময় পেলেও এ নিয়ে রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তুতি খুবই নগন্য।
সারাবাংলা/এসজে/জেএএম