বইমেলায় বিকশিত বিকাশ
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:৫৩ | আপডেট: ১০ মে ২০২২ ১৫:২৪
এসএম মুন্না, অতিথি প্রতিবেদক
বইমেলা থেকে: সেদিন হঠাৎ করেই মেলায় চলে এসেছিলেন রাজিন-উল-ইসলাম। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে পছন্দ হয়ে গেলো গোটা ছয়েক বই। কিন্তু মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে দেখলেন পর্যাপ্ত নগদ টাকা ছিল না। তাই বলে বই কেনা থেকে পিছু হটেননি তিনি। বইয়ের মূল্য পরিশোধ করেছেন নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। তিনি বললেন, ‘বিকাশ এর মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে ১০ শতাংশ ক্যাশ-ব্যাক পেয়েছি। আবার মেলায় প্রকাশকের ছাড় রয়েছে ২৫ শতাংশ। মোট কথা দামের অনেক কমে বই কিনতে পেরেছি। এ জন্য খুশি। ভাবছি ছাড়ের টাকা দিয়ে পছন্দের আরেকটি একটা বই কিনবো।’
মেলার বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের উত্তর পার্শ্বে বিকাশ একাউন্ট বুথ। সেই বুথ ঘিরে জটলা। এক কোণে ফরম পূরণ করছিলেন বাসাবোর থেকে শামস। তিনি জানালেন ‘ওই দিনই প্রথম তিনি মেলায় এসেছেন। কয়েকটি বই পছন্দ হয়েছে। কিনতে গিয়ে জানতে পারলেন, বিকাশ এর মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করলে অতিরিক্ত ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট ছিল না। ভাগ্যক্রমে সাথে ছিল জাতীয়পত্র ও দুই কপি ছবি। তাই নিয়ে এখানে চলে এসেছেন বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য। এতে করে তারই লাভ হলো অনেকটা।
‘এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো ব্যাপার। বিনামূল্যে খুব সহজে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারলাম, আবার সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অতিরিক্ত ছাড়ে বই কেনাও গেলো,’ সারাবাংলাকে বলেন শামস।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে উৎস প্রকাশন এর সামনে কথা হলো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আদিল হোসেন সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সন্তানের টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। মেলায় বিকাশ অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে বইও কিনতে পারছি। এতে করে কিছু সাশ্রয় হচ্ছে।’
বর্ধমান হাউসের সামনে সদ্য কেনা বই নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জামিল চৌধুরী। তিনি থাকেন কুমিল্লার গোয়ালমারিতে। একটি কাজে ঢাকায় এসেছেন। তারই এক ফাঁকে ফাঁকে বইমেলা ঘুরে দেখছিলেন। তিনি জানালেন ‘দূরত্বের কারণে মেলায় নিয়মিত আসা হয় না। মেলার কাছে-পিঠেই একটি কাজ ছিল, তা শেষ করে ভাবলাম মেলায় ঘুরে আসি। একটি স্টলে বেশ কয়েকটি বই পছন্দ হলেও দাম পরিশোধ করতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। দেখলাম নগদ টাকা তেমন নেই। এমন সময় দেখলাম বিকাশ দিয়েও মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। যদিও বিকাশ একাউন্ট আছে কিন্ত তাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। পছন্দের বই না কিনেও ফিরতে চাচ্ছিলাম না। এক বন্ধুকে ফোন করে তার একাউন্টে কিছু টাকা ‘বিকাশ’ করে দিতে বললাম। অতঃপর বিকাশ দিয়ে দাম পরিশোধ করে বই নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’
উত্তর জাফরাবাদ থেকে মেলায় এসেছেন জেসমিন জামান। তিনি জানান, ‘অন্যান্য বছর মেলায় নির্দিষ্ট ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই কিনতে পেরেছি। এ বছর বিকাশ-এর মাধ্যমে বই কিনে আরও ১০ শতাংশ ছাড় এটা সত্যিই অন্যরকম ভালো লাগার বিষয়।’
রাজিন, নীলু, জামিল, আদিল, জেসমিনদের মতো অনেক দর্শনার্থীই এখন বইমেলায় বই কিনে মূল্য পরিশোধ করছেন বিকাশ-এর মাধ্যমে।
এ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা দুই জনেই উপকৃত হচ্ছেন। এমনটাই জানালেন একাধিক প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক।
তাদের একজন আগামী প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ওসমান গনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বই কেনাকাটা করতে এখন নগদ টাকার প্রয়োজন নেই। বিকাশ-এর মতো মোবাইল ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেও কেনাকাটা করতে পারছেন ক্রেতারা।
অনিন্দ্য প্রকাশনীর প্রকাশক আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকেই হুট করে ঘুরতে ঘুরতে মেলায় চলে আসেন। তখন হয়তো নগদ টাকা নাও থাকতে পারে। যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট রয়েছে তারা বিকাশ এর মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে বই কিনতে পারেন। এতে করে তারা কিছু ছাড়ও পাচ্ছেন।’
এবারের গ্রন্থমেলায় ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে বই কিনলে পাওয়া যাচ্ছে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ছাড়। ফলে দুইভাবে ছাড় যোগ করলে একজন পাঠক দামের ছাড়ে পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা। এ জন্য বইমেলায় রয়েছে ‘বিকাশ’এর দুটি বুথ। যেখানে টাকা ক্যাশ ইন এবং ক্যাশ আউট করা সুযোগ রয়েছে। আর ৩৫০টি স্টলেই ‘বিকাশ’ এর আলাদা আলাদা নাম্বার রয়েছে, যেটার মাধ্যমে বই কেনার পর মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। প্রযুক্তির এই যুগে বইমেলায় এটা আলাদা এক সুবিধা বলে অনেকে উল্লেখ্য করে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের অন্যতম প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, ‘মেলা এমন সুবিধা পেয়ে খুশি। ঝুট-ঝামেলাও কম হচ্ছে।’
ব্র্যাক ব্যাংক এর অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর সিইও কামাল কাদের সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন ‘বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্যই ‘বিকাশ’ এর এই প্রচেষ্টা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বই সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের সঙ্গে বিকাশ আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
তিনি বলেন, ‘মূল্য পরিশোধে নতুন মাত্রা হচ্ছে মূল্য পরিশোধের সাথে সাথেই গ্রাহক পেয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট অংশের ক্যাশব্যাক। গ্রাহক সাথে সাথে ক্যাশব্যাক পাওয়াতে একই বাজেটের মধ্যেই কিনতে পারছেন বেশি বই। বই কেনা ও পাঠ্যাভাস বাড়াতে ভবিষ্যতে তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে কামাল কাদের।’
মেলায় বিকাশ এর কার্যক্রম কেমন চলছে এ প্রসঙ্গে বিকাশ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (পিআর মিডিয়া করপোরেট কমিউনিকেশন্স) জাহেদুল ইসলাম সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। বিকাশ দিয়ে কেনাকাটায় কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় না। গ্রাহক মূল্য পরিশোধ করার পরবর্তী দুই কর্ম দিবসের মধ্যেই তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ক্যাশ ব্যাকের অংকটিও জমা হয়ে যায়।’
বিকাশ ব্যবহারকারীকে প্রথমে *২৪৭# এ ডায়াল করে বিকাশ মেন্যুতে গিয়ে ‘৩’ নির্বাচিত করে ‘পেমেন্ট’ পছন্দ করতে হয়। এরপরে কিছু ইন্টারঅ্যাক্টিভ ধাপ পার করে এই সেবাটি নেওয়া যায়।
জাহেদুল জানান, ‘২০১৪ সালে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের হাত ধরে প্রথমবারের মত বইমেলায় যুক্ত হয় ডিজিটাল পেমেন্ট। মোবাইল পেমেন্টকে জনপ্রিয় করতে বিকাশ তার গ্রাহকদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাকের ঘোষণা দেয়। ৭৭ টি প্রকাশনা সংস্থা যুক্ত হয় বিকাশের এই অফারের সাথে। এর পর প্রতিবছরই বিকাশ ধারাবাহিকভাবে তার গ্রাহকদের জন্য বইমেলায় ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক দিয়ে আসছে।
’তিনি আরও জানান ২০১৪ সালে মাত্র ৭৭ টি প্রকাশনী সংস্থা বিকাশ পেমেন্ট নিলেও এবারের বইমেলায় ৩৫০টি প্রকাশনী তাদের বইয়ের মূল্য নিচ্ছে বিকাশ এর মাধ্যমে। ২০১৫ সালে মোট ৮৭০ জন প্রাহক বিকাশ এর মধ্য মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার গ্রাহক। আর এ বছর মেলায় প্রথম সপ্তাহেই সাড়ে ৪ হাজার এর বেশি গ্রাহক বইয়ের দাম পরিশোধ করেছেন বিকাশ এর মাধ্যমে।
মেলায় বিকাশের দুটি বুথ রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা রয়েছে। যে কেউ দুই কপি ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং অথবা পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। আর সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ১০ শতাংশ ছাড়ে বই কিনতে পারছেন।
বর্তমানে দেশজুড়ে বিকাশ-এর ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি এজেন্ট রয়েছে। যেখানে বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এমএম