মধ্যবিত্তরা আবাসন খাতে এলে অর্থনীতি আরো এগুবে: মার্ক নসওয়ার্দি
২৩ নভেম্বর ২০১৯ ১১:৫৮
আপনি কি উত্তরা, গুলশান, বনানী, নিকেতন, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান এবং লালমাটিয়া এলাকায় বাসা খুঁজছেন? আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাস থেকেই ভাড়া নেওয়া যাবে এমন অনেক বাসা আছে বিপ্রপার্টি রেন্টাল সার্ভিস এর খোঁজে। আপনার কাঙ্খিত এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী নানান সাইজ ও ভাড়ার ফ্ল্যাট এর খোঁজ এবং অন্যান্য সব সার্ভিস এখন পাচ্ছেন একদম ফ্রিতে!
নিশ্চয়ই অনেকের ফেসবুকের হোমপেজে এমন বিজ্ঞাপন আসছে। আর এমন বিজ্ঞাপন দেখলে অন্তত যারা ফ্ল্যাট কিনবেন বা ভাড়া নেবেন তারা যে অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আচ্ছা বলুন তো সময় কোথায়? সারাদিন অফিস, জ্যাম ঠেলে যাতায়াতের পর আর কার হাতে সময় থাকে বাসা বা ফ্ল্যাট খোঁজার? হ্যাঁ শুধু হাতে স্মার্ট ফোনটা থাকলেই হল। ক্লিক করলেই সমস্যা সমাধানের রাস্তায় উঠবেন। পৃথিবীটাই তো এখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। তো সেখানে প্লট বা ফ্ল্যাট খোঁজা আর এমন কি বিষয়।
বলছি, বিপ্রপার্টি ডটকম এর কথা। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে বিপ্রপার্টি। বর্তমানে এর কর্মশক্তি ৭ শ’ জন ছাড়িয়েছে। রাজধানীতে ফ্ল্যাট বা প্লট কেনাবেচা ও ভাড়া নেওয়ার ঝক্কি থেকে বাঁচাবে বিপ্রপার্টি।
প্রতিষ্ঠানটি তাদের বাংলাদেশের কার্যক্রম সম্পর্কে বলছে, এদেশের আবাসন বা রিয়েল এস্টেট সেক্টরের বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। বাড়ি কেনা থেকে শুরু করে ভাড়া নেওয়া কিংবা বিক্রি, সবকিছুকেই আগের চেয়ে সহজ করে ফেলাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। বিপ্রপার্টি ডট কম এমন একটি ওয়েবসাইট যার মাধ্যমে আমাদের গ্রাহকেরা ঘরে বসেই সম্পত্তি কেনা-বেচা ও ভাড়ার মত জটিল কাজগুলো নিশ্চিন্তে করতে পারছেন।
কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে ভাড়া ও বিক্রির জন্য ২৫ হাজারেরও বেশি প্রোপার্টির তথ্য দেওয়া আছে। এছাড়া আছে ভার্চুয়াল ট্যুর, হোম লোন ক্যালকুলেটর, হিট ম্যাপ ও রেন্টাল সার্ভিসের মতো সেবাও।
বিপ্রপার্টি আপাতত ঢাকার উত্তরা, বসুন্ধরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকায় ফ্ল্যাট কেনা-বেচা করছে। আর ভাড়ার জন্যও একই এলাকার লোকেশন দেওয়া আছে।
এছাড়া, গত ১৯ নভেম্বর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করেছে বিপ্রপার্টি। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে তাদের সেবা দিতে সাড়ে ৬ হাজার ফ্ল্যাট-প্লটের তথ্য রেখেছে।
সম্প্রতি সারাবাংলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন বিপ্রপার্টির সিইও মার্ক নসওয়ার্দি।
প্রশ্ন ছিলো, বাংলাদেশকে কেনো বেছে নিলেন?
মার্ক বললেন, বাংলাদেশ একটা বড় জনসংখ্যার দেশ। আর যেখানে মানুষ বেশি সেখানেই সম্পত্তি, জমি-জমা, আবাসন নিয়ে ঝুট-ঝামেলা বেশি। আমরা জেনেছি এখানে জমি-জমা সংক্রান্ত জটিলতাই সবচেয়ে বেশি। আর তার বিপরীতে মানুষের কাছে পর্যাপ্ত সমাধান নেই। আমরা সেই সমাধানটিই নিয়ে এসেছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে একটা ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিতে চাই।
আবাসন খাত বা রিয়েল এস্টেট সেক্টরে এদেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো বা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে আমরা এই ধরণের উদ্যোগ নিয়েছি, বলেন এই অস্ট্রেলীয় আবাসন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, আবাসন খাতের অনেক কোম্পানিই এই মার্কেটে আছে যাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে দূরত্ব কাজ করে। দূরত্ব থেকে মাঝে মাঝে নানা ধরণের বাজে কৌশলেরও আশ্রয় নেওয়া হয়। এ ধরনের হয়রানি বন্ধসহ নানা সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি।
‘অনেক কোম্পানি আছে যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দিনের পর দিন কথা চলতেই থাকে। দেখা গেছে একই বিষয় নিয়ে বিশ বারও কথা হয় কিন্তু কোনো সমাধান আসে না। আমরা চাই এই কাজটি আমাদের মাধ্যমে সহজ হোক।’
উদীয়মান বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই মূলত আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। সেইদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি উজ্জল, যোগ করেন মার্ক।
এই ধরণের উদ্যোগে মিডিয়ার ভূমিকা বেশি জানিয়ে বিপ্রপার্টি সিইও বলেন, তথ্যের বিস্তারের জন্য মিডিয়ার ভূমিকা অনেক বেশি। মিডিয়া থেকে আমরা যেমন অনেক তথ্য জানতে পারি। বিশেষ করে মানুষের ধারণাগুলো সম্পর্কে। আর এটা বাজার তৈরির জন্য খুব দরকার।
মার্ক নসওয়ার্দি বলেন, একটা সময় ছিল আবাসন খাতকে সাধারণত উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তদের জন্যই বিবেচনা করা হতো। এখন সে চিত্র পাল্টেছে। গত কয়েকবছর ধরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও ধীরে ধীরে এই খাতের সামর্থ্যের মধ্যে ঢুকে গেছে। যেটা বেশ লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে তরুণ মধ্যবিত্তদের চিন্তাভাবনাই আলাদা। তারা অনেক হিসেব নিকেশ করে এগোয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সেক্টরটি এগিয়ে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১৩ শতাংশ আসে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাত থেকে। কারণ উচ্চবিত্তের বাইরে মধ্যবিত্তরাও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। মধ্যবিত্তরা যোগ হলে অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে। সে কারণেই মধ্যবিত্তকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে এখুনি কোনো একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে। আর এতে ভূমিকা রাখতে পারে মিডিয়া। কারণ তারাই এই মেসেজটি দিতে পারে।
সবশেষে মার্ক নসওয়ার্দি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি নিরাপদ আবাসনের সুবিধা পাওয়া সবার মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের মানুষের কোন ধরনের সল্যুশন দরকার আমরা সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আমরা একটি প্রোপার্টির সবধরনের তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্যন্ত পরিশ্রম করি, যাতে একজন গ্রাহক, বিক্রেতা, ক্রেতা, মালিক ও ভাড়াটিয়া প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য নিতে পারেন।’
উল্লেখ্য, বিপ্রপার্টি ডট কম ইমার্জিং মার্কেটস প্রপার্টি গ্রুপের (ইএমপিজি) একটি অঙ্গ সংস্থা। এশিয়া মধ্যপ্রাচ্য, এবং উত্তর আফ্রিকার রিয়েল এস্টেট খাতেও ইমপিজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইএমপিজি’র সদর দফতর সংযুক্ত আরম আমিরাতে অবস্থিত। ইমার্জিং মার্কেটস প্রপার্টি গ্রুপ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রপার্টি পোর্টাল ‘বেয়ুত ডট কম’ (www.bayut.com), পাকিস্তানের প্রপার্টি পোর্টাল ‘জামিন ডট কম’ (www.zameen.com) এবং মরক্কোর প্রপার্টি পোর্টাল ‘মুবাওয়া’ (www.mubawab.ma) এরও মালিক। সম্প্রতি সৌদি আরবে ‘বেয়ুত ডট এসএ’ (www.bayut.sa) এবং এটি সম্প্রতি জর্ডানেও এর মালিকানাধীন ছিল ‘বায়ুত ডট জ ও’ (www.bayut.jo)-ও যাত্রা শুরু করেছে।