করোনায় চাকরির ঝুঁকিতে সবাই
১৬ মে ২০২০ ২০:৪৯
ঢাকা: করোনায় দেশে বেকারত্ব আরও বাড়তে পারে। এরইমধ্যে দেশের শ্রম বাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে। গার্মেন্টস সেক্টরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। শতভাগ বেতনের দাবিতে কারখানার শ্রমিকরা এখনো আন্দোলন করছে। ঈদ বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা রয়েছে। প্রায় সব খাতের শ্রমিকরাই এখন চাকরির ঝুঁকিতে। করোনার এই মুহূর্তে মালিকপক্ষকে আরও বেশি মানবিক হতে হবে। দেশের শ্রম শক্তির উৎপাদন ক্ষমতাকে কাজ লাগাতে হবে।
শুক্রবার (১৫ মে) রাতে ইনস্টিটিউট অব এপ্যারেল ম্যানেজমেন্ট ‘কভিড -১৯ এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এর প্রভাব’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তাদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।
ইনস্টিটিউট অব এপ্যারেল ম্যানেজমেন্টের এপারেল প্রফেশনাল আজহার আহমেদ রেজার সঞ্চালনায় এতে যুক্ত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মেহনাজ হক, কে ডি এস গ্রুপের এপারেল ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট জসিমউদদীন চৌধুরী, ফোর এইচ গ্রুপের ডিজিএম এম এ হান্নান, ক্লিফটন গ্রুপের জিএম আব্দুল হাই ফারুকী, ডেল্টা গালিল ইন্ডাস্ট্রিস-এর চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান মো. আতিকুর রহমান, দৈনিক আজাদীর চীফ রিপোর্টার হাসান আকবর, সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন ও এস আর জি এপ্যারেল পিএলসির ম্যানেজার কিউএ আসিফ শাহরিয়ার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মেহনাজ হক বলেন, ‘করোনার আগে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭ শতাংশ। সেটা এই অল্প সময়েই ২৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। করোনায় বৈশ্বিকভাবে বেকারত্ব আরও বাড়বে। বিশ্বের ১৬০ কোটি মানুষ ঘরবন্দি থাকবে, যা সামাজিক বেকারত্বেও প্রভাব ফেলবে। এমনকি আমেরিকাতেও ৩ কোটি লোক এই সময়ে বেকার হয়েছে যা সময়ের সঙ্গে আরও বাড়ছে। করোনা মোকাবিলায় বিকল্প কর্মসংস্থা ও কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে।
কে ডি এস গ্রুপের এপারেল ডিভিশনের ভাই প্রেসিডেন্ট জসিমউদদীন চৌধুরী বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপী হচ্ছে এবং সামনে আরও হতে পারে। তা কারখানার অর্ডারের ওপর সরাসরি নেগেটিভ প্রভাব বিস্তার করবে এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ-এর কারণে দাম নির্ধারণে এবং সময়মত ডেলিভারিতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’
ফোর এইচ গ্রুপের ডিজিএম এম এ হান্নান বলেন, দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১১ কোটি মানুষ কাজ করে, যার মধ্যে ৫ কোটি গার্মেন্টস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া পরিবহন ও অন্যান্য খাতের আরও অনেকেই এখন কার্যত বেকার। করোনায় বোনাস পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতিটি কোম্পানিকে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে। করেনার সময় কাজের বিকল্প হিসেবে পিপিই, মাস্ক, গাঊন ও গ্লাভস তৈরি করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
ক্লিফটন গ্রুপের জিএম আব্দুল হাই ফারুকী বলেন, দেশের পোশাক কারখানায় থমকে থাকা উৎপাদনে গতি আনতে আরও বেশি করে প্রযুক্তি বা টেকনোলজি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু অনগ্রসর মানুষদের নিয়ে আমাদের কাজ, তাই তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাদের সচেতনতা আমাদের অনেক বড় মুক্তি দিতে পারে। করোনায় গার্মেন্টস পরিচালনায় তনতা বিজিএমই এর নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
ডেল্টা গালিল ইন্ডাস্ট্রিস-এর চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান মো. আতিকুর রহমান বলেন, করোনার কারণে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকার সময়ে বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারত, কিন্তু ব্যাক ওয়ার্ড লিংকেজ, নতুন উদ্ভাবনী শক্তির অভাব ও মার্কেট সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানের এর অভাবে তা হয়নি। নতুন নতুন প্রোডাক্ট সোর্সিং এর মাধ্যমে আমাদের দক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ২০২০ হল টিকে থাকার বছর, টিকে থাকাটাই মুনাফা!
সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন বলেন, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মতে এরইমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ হাজার শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়েছে, বিজিএমইএ বলছে তা ১৫ হাজারের বেশি। কারখানাগুলো এখনো শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দিচ্ছে না। বিভিন্ন কারখানায় শতভাগ বেতনের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। সামনে ঈদ বোনাস দেওয়া না দেওয়া নিয়ে এখনো বিভক্তিতে আছে মালিকেরা। এছাড়া কমবেশি সব পেশার মানুষই এখন চাকরির ঝুঁকিতে রয়েছেন। সময়টিতে মালিকপক্ষকে আরও বেশি মানবিক হতে হবে।
এস আর জি এপ্যারেল পিএলসির ম্যানেজার কিউএ আসিফ শাহরিয়ার বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়তে ব্যক্তি ও মালিকপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যেকোনো চাকরিকে সম্মানক করে উৎপাদন বাড়াতে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে কিছুক্ষেত্রে দক্ষ জনবলকে বাদ দিয়ে ফ্রেসার নেওয়া হয়, কিছু অর্থ বাঁচাতে। আর কারখানাগুলো শহর থেকে সরিয়ে গ্রামের দিকে স্থানান্তরিত করা উচিৎ।