Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেতন-বোনাস হয়নি, ছিল না ঈদ আনন্দও


২৭ মে ২০২০ ২৩:৫৬

ঢাকা: ‘ঈদে বোনাস পাইনি। এপ্রিলের বেতন পেয়েছি ৬০ শতাংশ। অনেক শ্রমিকই বেতন পায়নি। বিকাশ নম্বর ঠিকই দিয়েছে। কিন্তু বেতন ঢুকেনি। বেতন-বোনাস না পাওয়াই অনেক শ্রমিকই এবার ঈদ করতে পারেনি। বোনাস না পাওয়ায় আমরাও ঈদ করতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন মালিবাগের ড্রাগন সোয়েটারের একজন শ্রমিক।

সাভারের একটি কারখানার শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের দুই দিন আগে বোনাসের দাবিতে কারখানায় শ্রমিকরা ভাঙচুর করে। তীব্র আন্দোলন হয়। পরে আন্দোলনের মুখে মালিকপক্ষ টাকা ম্যানেজ করে বোনাস দেয়। আমরা যারা গ্রামে এসেছি, কাছাকাছি বাড়ি, তারা ঈদের দিন সকালে গ্রামে এসেছি। এবার ঈদে কোনো আনন্দই হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

গাজীপুরের কালীগঞ্জের আরেক কারখানার শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এপ্রিলের বেতন পেয়েছিলাম ৬০ শতাংশ। বোনাস শতভাগই পেয়েছি। অনেকটা লুকিয়ে গ্রামে গিয়েছি। কিন্তু ঈদ জামাত পড়িনি। বাড়িতেই ছিলাম। বেতন কম দেওয়ায় এবার ঈদে কোনো আনন্দ হয়নি।’

করোনাভাইরাস ঘিরে উদ্ভূত সংকটের মধ্যেই এসেছিল ঈদুল ফিতর। সেই ঈদ কেমন কেটেছে পোশাক শ্রমিকদের, এসব বক্তব্যে কিছুটা হলেও উঠে এসেছে সে চিত্র। তাদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, ঈদ গেলেও বোনাস-বেতন ঠিকভাবে পাননি তারা।

বর্তমানে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত চালু কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ২৭৪টি। আর বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত চালু থাকা কারখানার সংখ্যা ৮৩৩টি। দুই সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ১০৭টি। তবে সব মিলিয়ে অন্তত ৫ হাজার কারখানা চালু রয়েছে দেশে। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে, চালু থাকার কারখানার মধ্যে ৯ শতাধিক কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতন হয়নি, বোনাস হয়নি ১২ শতাধিক কারখানায়। তবে মালিকপক্ষ বলছে, সংখ্যাটি এত বেশি নয়, খুব অল্প কিছু কারখানাই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারেনি ঈদের আগে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, শ্রমিকদের বড় একটি অংশ বেতন-বোনাস পাননি। ৯শ’র বেশি কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতন হয়নি। বোনাস হয়নি ১২শ’র বেশি কারখানায়। এরকম একটি পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জীবনে ঈদের আনন্দ আসেনি। করোনা ও মালিকদের আচরণ তাদের বিপর্যস্ত ও দিশেহারা করে দিয়েছে। তারা এখন বাঁচবে কীভাবে, তা নিয়েই শঙ্কা।

তিনি বলেন, দেশে এখন করোনার অবস্থা খারাপ দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা হচ্ছে, যা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। আবার কারখানা খোলা হলেই শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনের জন্য আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের তেমন কোনো সদিচ্ছার প্রকাশ আমরা দেখছি না।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, অনেক শ্রমিকই বেতন-বোনাস পায়নি। আমার জানামতে, ১৪টি কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতন হয়নি। বোনাস হয়নি ২০০ থেকে ২৫০টি কারখানায়। ঢাকার মধ্যেকার ৪০টি কারখানা বোনাস দেয়নি। ঈদের পর আজ একটি কারখানায় শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক কাজ করছে। ৭৫ শতাংশ শ্রমিক ঈদের আনন্দ করেছে, আর ২৫ শতাংশ শ্রমিকই ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ কারখানায় বেতন ও বোনাস হয়েছে। যারা দিতে পারেনি, তারা ছোট ও মাঝারি কারখানা।

শ্রমিকদের বেতন বোনাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা শুধু শ্রমিকদের খোঁজ নেন, আমাদের তো খোঁজ নেন না? উদ্যোক্তাদের খবর নিতে হবে। উদ্যোক্তারা না বাঁচলে শিল্পটি মরে যাবে।

বিজিএমইএ’র অন্য একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, তাদের শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়েছে। কোনো কারখানা থেকেই অভিযোগ আসেনি।

এদিকে, পোশাক কারখানার মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, মোটামুটি সব কারখানায় বেতন হয়েছে। তবে বোনাস অনেকেই দিতে পারেনি। পাঁচ থেকে ছয়টি কারখানায় ঈদের আগে বেতন হয়নি। তারা ঈদের আগের দিন আমাকে কোনোভাবে অর্থ জোগাড় করে দিতে বলেছিল। কিন্তু তখন ছুটি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে অর্থ জোগাড় করে দেওয়া যায়নি। তারা শ্রমিকদের হয়তো কোনোভাবে ম্যানেজ করেছে। আর বোনাস হয়নি অন্তত শ’খানেক কারখানায়।

করোনা করোনাভাইরাস গার্মেন্টস টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর