Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ১৩ শতাংশ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:০৩

ঢাকা: ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পে। এ জন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এরইমধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তাতি নেওয়া হয়েছে। সংশিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৯৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এখন ৫৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্ত গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে  ২২৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ফলে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। একই সময়ে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ (পাবক)।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায়। ওই সভায় বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় বিদশ প্রশিক্ষণ ব্যয় ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার পরিবর্তে ১ কোটি টাকার মধ্যে রাখতে হবে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আরডিপিপি ( সংশোধিত  উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ল সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৯ নভেসম্বর দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসাবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে পায়রা সমুদ্র বন্দর। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বহিঃনোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনয়ন ও লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহণ করা।

বিজ্ঞাপন

মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় রয়েছে ১০ মিটার গভীরতার চ্যানেল ড্রেজিং, একটি কন্টেইনার, একটি মাল্টিপারপাস ও একটি বাল্ক টার্মিনালসহ বন্দর অবকাঠামো তৈরি করে বন্দর কাযক্রম শুরু করা।

আন্তর্জাতিক মানের দেশীয় ও আঞ্চলিক বন্দর সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত আছে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ, একটি এলএনজি টার্মিনাল, একটি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ, জাহাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা সংবলিত ডকইয়ার্ড নির্মাণ, বিমানবন্দর নির্মাণ, কুয়াকাটা কেন্দ্রিক পর্যটন ও রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা স্থাপন।

স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় স্থানে পরিবহণ সহজতর করার জন্য অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে পায়রা বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর জন্য কন্টেইনার টার্মিনাল, মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য মূল প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

মোট ৩ হাজার ৯৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদনের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্পের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট যেমন, জেটি, কন্টেইনার টার্মিনাল, সার্ভিসলেনসহ ৬ লেন বিশিষ্ট রোড এবং আন্দারমানিক নদীর উপর নির্মিতব্য সেতুর ডিজাইন, ড্রয়িং চূড়ান্ত হওয়ায় ব্যয় পরিবর্তন জনিত কারণে প্রকল্পটি ৪ হাজার ৫৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের উপর গত বছরের ২৪ জুলাই পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরডিপিপি ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় পুনর্গঠন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৪৬ হাজার ২০০ বর্গমিটার প্রয়োজনীয় সুবিধাদিসহ জেটি নির্মাণ, ৩ লাখ ২৫ হাজার ব্যাক-আপ ইয়ার্ড, ২ কিলোমিটার ইয়ার্ডের অবকাঠামো, ৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, ১ দশমিক ১৭৮ কিলোমিটার আন্দারমানিক নদীর উপর সেতু, ডিচিটাল পোর্ট সলুউশন ক্রয়, ৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন, ১০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার লাইন, ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার গ্যান্ট্রি ক্রেনের জন্য রেল লাইন, ৪২০ মিটার সংযোগ সড়কে মাঝারি সেতু, ৪টি আরটিজি ক্রেন, ১৮টি ট্রাক্টর, ৩৬টি ট্রেইলার, ৫টি ফর্ক লিফ্ট ট্রাক, ৬টি ছোট ইয়াডর্ড ক্রেন এবং ২টি করে ওয়ার্ক বোট, টাগ বোট, এসটিএস ক্রেন, মোবাইল হারবার ক্রেন, রিচ স্ট্যাকার, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার হপার ক্রয় ইত্যাদি।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, পরামর্শক জেটির ডিটেইল্ড ডিজাইন প্রণয়ননের সময় জেটির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জেটির সম্মুখের পাইলসগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আরসিসি পাইলের পরিবর্তে স্টিল পাইল দিয়ে জেটির ফাউন্ডেশন ডিজাইন করার ফলে পাইলের ব্যাস ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে জেটির নির্মাণ ব্যয় ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া আন্দারমানিক নদীর সেতু নির্মাণ এলাকায় সম্পাদিত হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি সম্পন্ন করে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন করেছে। ফলে সেতুর দৈর্ঘ্য ১ দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ১৭৮ কিলোমিটার হয়েছে এবং পাইলের সংখ্যাও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে সেতু নির্মাণ ব্যয় ৪১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেড়েছে। আরও বলা হয়েছে, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবের আওতায় সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জেটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং উপ-আঞ্চলিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে পায়রা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। এ সব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/জেজে/একে

টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প পায়রা বন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর