দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব
৩১ মে ২০২১ ১৩:৩৪
ঢাকা: একদিকে করোনা মহামারি, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুইয়ে মিলে গত অর্থবছরে সব খাতকেই কম বেশি সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে আসছে অর্থবছরের বাজেটে সরকারকে পরিকল্পনায় আনতে হচ্ছে পরিবর্তন। যে পরিবর্তনে গুরুত্ব পাচ্ছে নতুন নতুন বিষয়; গুরুত্ব পাচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গেল অর্থবছরের চেয়ে এবার এ খাতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা দীর্ঘ হওয়া তাদের মানবিক সহায়তা দিতেই এই বাড়তি চাহিদা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে দুর্যোগ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আসছে অর্থবছরে তা বাড়িয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা। যে কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তার তালিকা দীর্ঘ হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩-এর মাধ্যমে মানুষকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলে। এমন সব উদ্যোগের পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকেই আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকছে।
বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে সব শ্রেণির মানুষ কম-বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। মূলত যে শ্রেণি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে স্বশরীরে এসে সরকারের সহায়তা নিতে পারেন না কেবল তাদের জন্যই ৩৩৩-এর উদ্যোগ ছিল। শুরুতে বেশকিছু অব্যবস্থাপনাও হয়েছে। যে ব্যক্তি স্বশরীরে এসে ত্রাণ নিচ্ছেন, তিনি আবার ফোন করেও নিয়েছেন। যে কারণে যার পাওয়ার দরকার তিনি পাননি। অথচ কেউ কেউ দ্বিগুণও পেয়েছেন। আবার যাদের দরকার নেই তারাও ফোন করে মজা করেছেন। পরে বিষয়গুলো ঠিক হয়েছে।
তিনি জানান, যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততদিন এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি টিআর-কাবিটার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া সবধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বরাবরের মতো আলাদা বরাদ্দ থাকবে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ যেসব মানবিক সহায়তা ছিল, তা গত বছর থেকেই বেড়েছে এবং সেগুলো চলমান রাখতে হলে অর্থের প্রয়োজন।’
২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৫ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোহসীন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের যেসব খাতগুলোতে বরাদ্দ প্রয়োজন কেবল সেগুলোতেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে করোনাভাইরাসে ক্ষতির শিকার মানুষদের জন্য যে মানবিক সহায়তা সরকার চালু করেছে তা ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও গতিশীল করতে চায়। সে লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অতি দরিদ্রদের জন্য ১৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। টিআর প্রকল্পে থাকছে দেড় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব। থাকবে কাবিটার জন্যও। সরকারের টিআর-কাবিটা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রান্তিক পর্যায়ে নতুন নতুন ইনোভেটিভ কাজ করতে সহায়তা করছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম