Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিন মাসে জ্বালানি তেলে রেড অ্যালার্টের শঙ্কা


১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ১০:৩৮

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ রেড অ্যালার্ট জোনে চলে যেতে পারে। এ শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থরা। তারা মনে করছেন, এই হারে দাম বাড়তে থাকলে আমদানি খরচ বেড়ে ফের বড় লোকসানের মুখে পড়বে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশেন (বিপিসি)। দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

বিশ্লেষক ও উচ্চপদস্থরা মনে করছেন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬৩ ডলারে পৌঁছে গেছে। আগামী তিন মাসে এই হারে বাড়তে থাকলে ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তা বাংলাদেশের জন্য হবে রেড অ্যালার্ট।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সবক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহনখাতে সরাসরি প্রভাব পড়বে।

তারা বলেন, সরকারকে আবারও ভর্তুকি দিতে হবে। নইলে দাম বাড়াতে হবে। যার ভোগান্তি জনগণের ওপর পড়বে।

জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য প্রকাশকারী সংস্থা প্লাটস’র তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬৩ দশমিক ৪ মার্কিন ডলার। গত এক মাসে এ দাম ব্যারেল প্রতি ১০ ডলার বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দুই মাসেই ৮০ ডলার ছাড়াবে।

মূলত মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার কারণে এই দাম বৃদ্ধি বলে জানাচ্ছেন প্লাটসের বিশ্লেষকরা। প্লাটসের পূর্বাভাস অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম ভাগে ব্যারেল প্রতি দাম দাঁড়াবে ৭০ থেকে ৮০ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ সরকার প্লাটসের মুল্যহার অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি তেল কেনে। ফলে বাড়তি মূল্যেই সরকারকে এ তেল কিনতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলা ডটনেটকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮০ মার্কিন ডলার হলে তা আমাদের জন্য রেড অ্যালার্ট হবে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশে ভতুর্কি দিয়ে চালাতে হবে, নয়তো দাম বাড়িয়ে দিতে হবে।

জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশেন (বিপিসি) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়ার কারণে ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলে লোকসান দিচ্ছে।

বিপিসির গত নভেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী ডিজেল ও কেরোসিন তেল বিক্রিতে লিটার প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে এক টাকা করে লোকসান হচ্ছে। এর আগে বিপিসি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জ্বালানি তেল বিক্রিতে লাভে ছিল।

বিপিসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুন মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যারেল প্রতি খরচ হয়েছে ৪৮ মার্কিন ডলার। যা নভেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৩ মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে পরিশোধিত তেলের মধ্যে ২০১৭ সালের জুনে ব্যারেল প্রতি ডিজেল আমদানিতে খরচ হয়েছে ৫৯ মার্কিন ডলার। যা নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৭৬ মার্কিন ডলারে। একই সময়ে প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩’শ মার্কিন ডলার। যা নভেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ মার্কিন ডলারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের প্রধান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এই কারণে বাংলাদেশকে বিপুল আর্থিক চাপের মুখে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলনির্ভর কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, যদি কোন ভতুর্কি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করতে হয় তাহলে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি সর্বোচ্চ ৮ টাকা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে।

বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৫টি। যা থেকে মোট বিদ্যুতের ৩৫ শতাংশ উৎপাদিত হয়।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছেই, ধারণা করা হচ্ছে তা আরও বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতাই এর কারণ।

তিনি বলেন, এ কারণে সরকার পুনরায় জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম ফের বাড়াতে পারে, যা জীবনযাত্রার ব্যয়বহুল করে তুলবে।

সারাবাংলা/এইচএ/এমএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর