Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটির নদীতীর সংরক্ষণে ৫৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুন ২০২২ ০৭:৫৭

ঢাকা: খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার নদী তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন হতে সংরক্ষণ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খাগড়াছড়ি জেলা ও দীঘিনালা উপজেলায় অবস্থিত জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনবসতি, ফসলী জমি এবং বনজ সম্পদগুলোকে ভাঙন হতে রক্ষা করা যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধ্বস ও পাহাড়ী ঢলের কারণে নদীর তলদেশ ক্রমাগত ভরাট হওয়া বন্ধ করা হবে। এ ছাড়া ১৩৫ দশমিক ৪৫ লাখ ঘন মিটার নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উল্লেখিত নদী সিস্টেম পুনরুজ্জীবিত করা ও নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নদী তীর সংরক্ষণ, নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা । ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চেঙ্গী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য হতে উৎপত্তি হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে মাইনী নদী ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী পাহাড়ী এলাকা হতে উৎপন্ন হয়ে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই লেকে পতিত হয়েছে। পাহাড়ী নদীগুলি বর্ষায় খরস্রোতা ও আগ্রাসী রূপ ধারণ করে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নদীর গতিপথে আকাঁ-বাঁকা স্থানগুলো নদী ভাঙন অত্যন্ত প্রবল। ফলে এক পাশের পলি পড়ে চরের সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে ভাঙ্গন স্থলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। খাগড়াছড়ি শহরের বটতলী, পেরাছড়া, গঞ্জপাড়া, রাজ্যমনিপাড়া, মুসলিমপাড়াগুলো চেঙ্গী নদীর তীব্র বাঁকে অবস্থিত। নদী ভাঙ্গনের কারনে শহরের দিকে যাতায়াতের রাস্তাটি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

মাইনী নদীর ভাঙনের ফলে খাগড়াছড়ি সদরসহ দীঘিনালা সদর, দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি ব্রীজ, ছোট মেরুং খাদ্যগুদাম ও তার সঙ্গে যেগুলো এলাকা মারাত্বক ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। ভাঙনের ফলে পৌর এলাকার বাণিজ্য কেন্দ্র, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি স্থাপনাসহ মূল শহরটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৌর এলাকায় প্রায় ২৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ভাঙন অব্যাহত আছে।

দীর্ঘদিন ধরে বন উজাড়ের ফলে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত নদীগুলোতে পলি পড়ে নদীর বিভিন্ন অংশে তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীগুলোর নব্যতা কমে যাওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতে পাড় উপচিয়ে ফসলী জমি ও কৃষিজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদীরভাঙন অংশে প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার প্রতিরক্ষামূলক কাজ, ৫৯ দশমিক ৩ লাখ ঘন মিটার চেঙ্গী নদী ড্রেজিং এবং ৭৬ দশমিক ৩৪ লাখ ঘন মিটার মাইনী নদী ড্রেজিং করা হবে।

সারাবাংলা/জেজে/একে

খাগড়াছড়ি নদীতীর রাঙ্গামাটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর