‘ধ্বংসের পথে’ মাইডাস ফাইন্যান্স!
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:০৮
ঢাকা: দুর্নীতি-অনিয়ম, একের পর এক অর্থ আত্মসাতের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড। সাবেক এবং বর্তমান কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি এই দশায় পড়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন, মানব সম্পদ ও এস্টেট ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক প্রধান শামীম আহমেদ।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি‘র সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম আহমেদ জানান, ঝুঁকির মুখে পড়ায় বর্তমান আমানতকারীদের অর্থ নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। শুধু তাই না টাকার অভাবে বোর্ডে ঋণ পাস হওয়ার পরেও ঋণ বিতরণ করতে পারছেন না।
এই অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে হাজার হাজার আমানতকারী ও বিনিয়োগকারী তাদের বিনিযোগ হারিয়ে পথে বসতে বাধ্য হবেন বলে আশঙ্কা করেন সংবাদ সম্মেলনকারী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে শামীম আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি চলাকালীন স্বচক্ষে যে সমস্ত দূর্নীতি, দুঃশাসন, অপকৌশল, অপকর্ম, কূটকৌশল ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করেছি ইতিপূর্বে আলোচিত কারণে তা প্রমাণসহ মাইডাসের সম্মানিত শেয়ার হোল্ডার, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করা আমার নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছি। পাশাপাশি অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরও বিষয়গুলো জানা আবশ্যক। এ ছাড়া উল্লেখিত অপকর্মে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আশির দশকে এনজিও হিসেবে মাইডাস বিশেষ সুনাম অর্জন করে। এই সুনাম আর মর্যাদাকে পুঁজি করে ১৯৯৫ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড গড়ে তোলা হয়। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটির শক্ত আর্থিক ভিত্তি গড়ে ওঠে। শেয়ার হোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেওয়ার পাশপাশি নিজেস্ব অর্থায়নে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে জমি কিনে ১৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়।’
এ ছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি, চট্টগ্রামের খুলশী এবং বগুড়ার বড়গোলায় (বগুড়া-রংপুর রোড) বাণিজ্যিক ফ্লোর কেনা হয়। মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড অর্থনৈতিক ও সুনামের দিক থেকে সমৃদ্ধ হতে থাকে। এর নেতৃত্বে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী, একরামউল্লাহ, রোকেয়া আফজাল রহমান, মির্জা বেহরুজ ইস্পাহানী, এস.এম আল-হুসাইনী, বি আর খান, মোহাম্মদ আব্দুল হালিমসহ কয়েকজন বোদ্ধা পর্ষদ সদস্য। তাদের সীমাহীন দূরদর্শিতা, মেধা, শ্রম, অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা ও যুগোযুযোগী সিদ্ধান্ত মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডকে স্বল্প সময়ে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে প্রথমে আব্দুল করিম এবং পরে আব্দুর রশীদ গাজী সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে অকস্মাৎ এবং অকারণে বিভিন্ন দক্ষ কর্মকর্তাদের জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই শুরু হয় মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের অন্ধকার যুগ। পরবর্তীতে কোম্পানির এমডি হয়ে আসা মফিকুল আযম, পর্ষদ সদস্য শামসুল আলম এবং তাদের নিকটাত্মীয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, কোম্পানি সচিব তানবীর হাসান পারস্পরিক যোগসাজশে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডকে ধ্বংস করতে শুরু করেন। সীমাহীন দুর্নীতি, দুঃশাসন আর অপকর্ম করা শুরু করেন।
অভিযোগে বলা হয়— এরা পরস্পর যোগসাজসে অবৈধ উপায়ে নিজ নামে ঋণ অনুমোদন ও গ্রহণ, ঋণ জালিয়ায়াতি, দুর্নীতির প্রমাণ বিনষ্ট করতে ঘুষ প্রদান; সীমাহীন নারী কেলেঙ্কারি: বেতন ভাতা ম্যানিপুলেশন; নানা ডকুমেন্টস জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে লুটপাট করে বিনিযোগকারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।
একইসঙ্গে এই চক্র প্রতিষ্ঠানটিতে দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ করে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিযোগ ও পদোন্নতি দিয়ে লুটপাট করছে।
সংবাদ সম্মেলে শামীম আহমেদ বলেন, ‘এই চক্র আমাকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অপসারণ করেছে, আমি আমার চাকরি ফিরে পেতে সহযোগিতা চাইছি।’
সারাবাংলা/জিএস/ইআ