ব্লু গোল্ড: ১৪২ কোটি টাকার প্রকল্পে ৪১ কোটিই পরামর্শক ব্যয়
৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪৫
ঢাকা: পানিসম্পদ উন্নয়নে নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে ‘ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম ব্রিডিং ফেজ (বিজিপি-বি)’ প্রকল্প। এর আগেও নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে পানিসম্পদ উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। নতুন প্রকল্পটিও সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে। তবে বাধ সেধেছে এই প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়। প্রকল্পের মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশই প্রস্তাব করা হয়েছে এই খাতে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরামর্শক ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানোর পরামর্শও দিয়েছে।
ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম ব্রিডিং ফেজ প্রকল্পের জন্য মোট খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়ই ৪১ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্পের ২৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই পরামর্শক ব্যয় নিয়েই আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ছায়েদুজ্জামান। সভায় পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. এনামুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এনামুল হক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) উন্নয়নমূলক কাজের সক্ষমতা যথেষ্ট বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক পরামর্শকের পরিমাণ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে দেশীয় পরামর্শকের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া বৈদেশিক পরামর্শকদের বেতন ও ভাতা মাসিক সবোর্চ্চ ২৫ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বৈদেশিক ও দেশীয় পরামর্শকদের জনমাস ও বেতন ভাতা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা দরকার। দেশীয় পরামর্শকদের সম্মানীর তুলনায় বিদেশি পরামর্শদের সম্মানী তিন থেকে চার গুণের বেশি হতে পারে না।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে প্রকল্পের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি জানিয়ে পিডিপিপি আরও সুনির্দিষ্ট ও স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত দেন তিনি।প্রকল্প প্রস্তাবনায় পরামর্শক সেবা খাতে আটজন সিনিয়র উপদেষ্টার বেতন বাবদ ১৫ কোটি টাকা, দুজন ইয়ং প্রফেশনালের জন্য দুই কোটি টাকা, সাতজন প্রফেশনালের জন্য তিন কোটি টাকা এবং সাতজন কারিগরি স্টাফ বাবদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ৯ জন প্রশাসনিক স্টাফের জন্য দুই কোটি টাকা এবং সাপোর্ট ও ফিল্ড স্টাফদের জন্য চার কোটি টাকাসহ মোট ৪১ কোটি টাকা পরামর্শক সেবা বাবদ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সভায় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, কীসের ভিত্তিতে এসব বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট নয়। পরামর্শকসহ অন্যান্য সহযোগী স্টাফদের বেতন ভাতার ব্যয় বিভাজনে পিডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করাসহ পরামর্শক খাতের ব্যয় ২০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
ছায়েদুজ্জামান আরও বলেন, প্রস্তাবিত পিডিপিপিতে কৃষি উন্নয়ন খাতে সাত কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে অন্যান্য খাত থেকে ব্যয় কমিয়ে কৃষি উন্নয়ন খাতের ব্যয় সাত কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, নেদারল্যান্ড সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১৯৭৫ সাল থেকে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে আসছে। এসব প্রকল্পে প্রকৃত প্রকৌশল ও নির্মাণ কৌশল থেকে বের হয়ে সমন্বিত পানিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের অধীনে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা (আইপিএসডব্লিউএ এম) প্রকল্প ২০১১ সালে সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের ধারণা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন অংশীজনরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ সভায় জানান, ব্লু গোল্ড প্রোগ্রামে খুলনা, পটুয়াখালী, সাতক্ষাীরা ও বরগুনা জেলার ২২টি উপকূলীয় পোল্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই প্রোগ্রামের বাপাউবো অংশের কাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। এটি বাস্তবায়নের ফলে পোল্ডারবাসীদের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে।
যুগ্ম সচিব আরিফ আরও বলেন, প্রস্তাবিত ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম ব্রিডিং ফেজ প্রণয়নের জন্য ইকেএন মিশন দেওয়া হয়। মিশনটি গত বছরের ৮ থেকে ১৯ মে বাপাউবোর সদর দপ্তর ও ব্লু গোল্ড প্রোগ্রামে পানি ব্যবস্থাপনা দলগুলোর সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা করে। মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পানি ব্যবস্থাপনা দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময় সভা ও বাপাউবোর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত কর্মশালার জন্য প্রস্তুত করা মিশন রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সুপারিশ
বিভিন্ন আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আন্তর্জাতিক পরামর্শকের পরিমাণ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে দেশীয় পরামর্শকের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। বৈদেশিক পরামর্শকদের বেতন ও ভাতা মাসিক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বৈদেশিক ও দেশীয় পরামর্শকদের জনমাস ও বেতন ভাতা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতেও বলা হয়। পরার্শক খাতের ব্যয় ২০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য খাতে ব্যয় কমিয়ে কৃষি উন্নয়ন খাতের ব্যয় এক-তৃতীয়াংশ বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয় পরামর্শে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
১৪২ কোটি নেদারল্যান্ডস পরামর্শক পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প ব্লু গোল্ড