Friday 16 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বদলাচ্ছে কি ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তিতে চার্জের সিদ্ধান্ত?


১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:৫১ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:৩৮

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সদ্যবিদায়ী মহাপরিচালক তার শেষ সাত কার্যদিবসে নিয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষকের বদলির সিদ্ধান্ত। যা ছিলো বড় অংকের বদলি বাণিজ্যের অংশ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অবসরে যাওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে নেওয়া বদলির সিদ্ধান্তগুলো মন্ত্রণালয়ে আটকে গেছে।

কিন্তু চাকুরির শেষ দিনগুলোতে এই বিদায়ী মহাপরিচালকের আরও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত খবর জানা গেছে। সংবাদমাধ্যমে সেসব খবরও এসেছে। যার অন্যতম ছিল, বিদায়ের আগে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পৌঁছে দেওয়া নিয়ে।

সারাবাংলা.নেটে আগেই রিপোর্ট হয়েছে, বিদায়ী মহাপরিচালক তার বিদায়ের দিন কয়েক আগে দেশের ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি পৌঁছানো নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে প্রতি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি থেকে প্রতি হাজারে ৯টাকা চার্জ ধরা হবে। এই চার্জ নেবে রকেট নামের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এই সার্ভিসটি তাদের প্রস্তাবে সেটাই উল্লেখ করেছে। এবং তাদের পক্ষেই সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর। অথচ এই প্রস্তাবে সম্পূর্ণ বিনা খরচে উপবৃত্তি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিকাশের। তাদের সে প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে।

ধারনা করা হচ্ছিলো- বিদায়ী মহাপরিচালকের ওই সিদ্ধান্ত বা সুপারিশও মন্ত্রণালয়ে আটকে যাবে। কিন্তু অধিদপ্তরের একটি চক্র বিষয়টিতে তৎপর থাকায় তা হয়নি, এমনটাই জানা যাচ্ছে সারাবাংলার অনুসন্ধানে।

সূত্র জানায়, গত ৪ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান এলপিআর-এ যান। বিদায়ের আগ মুর্হুতে তিনি শিক্ষা অধিদপ্তরে বদলি, পছন্দের ব্যাংকের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণসহ বিভিন্ন বির্তকিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে মহাপরিচালকের অবসরে যাওয়ার আগে নেয়া বদলিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় স্থগিত করেছে। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশের পরিবর্তে চার্জসহ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেটকে দিয়ে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য সুপারিশ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি বাতিল করা হয়নি। এটি বহাল থাকলে শিক্ষার্থীদের প্রতি হাজারে ৯ টাকা চার্জ দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাত আহমেদ এর সঙ্গে সচিবালয়ে তার তফতরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। পরে একই বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে সারাবাংলাকে জানান।

শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের হাতে উপবৃত্তির টাকা তুলে দিতে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি রকেট ০.৯০ শতাংশ এজেন্ট চার্জ ধরে প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ এই প্রস্তাবে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ০.৪৯ শতাংশ এবং এজেন্ট চার্জ হিসেবে ০.৯০ শতাংশ খরচ দেখিয়েছে। আর বিকাশ তা কোনও চার্জ ছাড়াই পৌঁছে দিতে চেয়েছে। তা সত্ত্বেও শিক্ষা অধিদপ্তরের বিদায়ী মহাপরিচালক কাজটি বিকাশের পরিবর্তে রকেট দেয়ার জন্য চলতি মাসের শুরুতে তড়িঘড়ি করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। ইতিমধ্যে তিনি অবসর গেলেও তার বেশ কিছু বির্তকিত সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় বাতিল করে। তবে রহস্যজনক কারণে প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়নি।

সূত্র জানায়, গত ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয় যেসব এলাকায় অনলাইন ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিং নেই সেসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস এর মাধ্যমে উপবৃত্তি পৌঁছানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ যাতে কম পড়ে সে জন্য প্রতিযোগিতামূলক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। সে অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে না এমন প্রস্তাব দিয়ে প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বিকাশকে কেনো বাদ দিয়ে রকেট দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে ইতির্পর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, তিনটি কোম্পানি টেন্ডার দিয়েছে। টেন্ডারগুলো আমি থাকতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় তা বাছাই করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।

রকেটের পক্ষে সুপারিশ করা হয়েছে এমন প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও, বিকাশের প্রস্তাবে সার্ভিস চার্জ নেই, বাকি দুইটির সার্ভিস চার্জ রয়েছে বিষয়টি মেনে নেন তিনি। তবে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিকাশের অনলাইন চার্জ রয়েছে। ফলে প্রত্যেকেরই কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে।

উল্লেখ্য গত ২৪ ডিসেম্বর উপবৃত্তি প্রকল্প কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে সভা করেন। এ সভায় উপস্থাপিত নথিতেই কর্মকর্তারা কাজটি যাতে রকেটের হাতে দেওয়া হয় সেভাইে উপস্থাপন করেন। ওই সভায় ‘ডাচ-বাংলার রকেট, রুপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হলেও ব্রাক ব্যাংকের বিকাশের তথ্য চেপে যাওয়া হয় বলেও জানিয়েছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

এই সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও অমান্য করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত ১০ অক্টোবর ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী স্বাক্ষরিত সিদ্ধান্তে প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে এই উপবৃত্তি পৌঁছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশান রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর