Friday 16 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ছোট মেয়েকে বলেছি, আম্মু একটু সুস্থ হলেই বাসায় আসবে’


১১ এপ্রিল ২০১৮ ০৯:০৯ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০৯:২১

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ছোট মেয়েটাকে বলেছি, আম্মু একটু সুস্থ হলেই বাসায় আসবে। কিন্তু এ কথা বলে কী আর ওকে বোঝানো যায়, মেয়েটার দিকে তাকাতে পারি না। দুই মেয়ে একজন আছে নানির বাসায়, আরেকজন দাদির কাছে। তারাও তো বৃদ্ধ হয়েছেন, তাদেরই দেখে রাখার সময়। এখন কে কাকে দেখবে, পুরো হ-য-ব-র-ল অবস্থা আমাদের সংসারের।

কথাগুলো বলছিলেন তানজীর আহমেদ তাহের। ৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে দুর্ঘটনায় আহত হন আয়েশা। বড় মেয়ে আহনাবকে ধানমন্ডির স্কলার্স স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। তাদের রিকশাকে একই দিক থেকে বিকাশ পরিবহনের দু’টি বাস চাপা দিলে গুরুতর আহত হন আয়েশা।

তানজীর যখন কথা বলছিলেন, তখন তার স্ত্রী আয়েশা পাশের কেবিনে ঘুমাচ্ছিলেন। কেবিনে গিয়েও কথা বলা হয় না তার সঙ্গে। কেবল চোখ মেলে একটু তাকিয়েই আবার চোখ বোজেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার বড় মেয়েটার বয়স ছয়। ছোটটার বয়স সাড়ে তিন, এখনও বুকের দুধ খায়। সে কিভাবে থাকবে, বড় মেয়েটাও মাকে ছাড়া কিছু বোঝে না! ছোট মেয়েটা গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে মায়ের কাছে যাবে বলে কাঁদতে থাকে। চিকিৎসকরা বলেছেন, আয়েশা আর কখনও দাঁড়াতে পারবে না। এখান থেকে ছেড়ে দেবার পর আয়েশাকে সিআরপিতে নিতে হবে, সেখানে অনেক সময় লাগবে। চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েকমাস পরেই আয়েশা বুঝতে পারবে ও আর কখনো দাঁড়াতে পারবে না- হাঁটতে পারবে না। এটা জানার পর ডিপ্রেশান হতে পারে। ডিপ্রেশনটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে- মেয়ে দুটো ছোট, জানি না কী হবে। আমাদের সুখের যে সংসারটা ছিল তার কী হবে, মাথা নেড়ে নেড়ে বলছিলেন তানজীর আহমেদ তাহের।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার পর তানজীর আহমেদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বাস দু’টি জব্দ করে। একটি বাসের চালক মোজাহেরুল ইসলামকেও গ্রেফতার করে।

এ প্রসঙ্গে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গ্রেফতার এক চালক কারাগারে, অন্য চালকের নাম-ঠিকানা জানা গেছে। পুলিশ তৎপর রয়েছে। যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হবে।

দুর্ঘটনার পর আয়েশা নিজেই ফোন করে জানিয়েছিলেন দুর্ঘটনা কথা। তানজীরকে যেতে বলেন। পরে পথচারীরা পায়ে ঠেলা ভ্যানে আয়েশাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যান। আহত হয় আহনাবও, তাকেও নিতে হয় প্রাথমিক চিকিৎসা। মেয়েটার ব্যাগের ওপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যাওয়ার দাগটা এখনও রয়েছে, বলেন তানজীর।

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে কথা হয় তানজীর আহমেদের সঙ্গে সারাবাংলার। সেখানেই চিকিৎসাধীন আয়েশা। তিনি বলেন, এখানে আরও তিন-চারদিন থাকতে হবে। ১২ দিনের মাথায় সেলাই কাটা হবে। তারপর হয়তো ২১ দিনের মাথায় বসানোর চেষ্টা করা হবে। অস্ত্রোপচার করাই হয়েছে সে যেন বসতে পারে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে তানজীরকে ভাবতে হচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় নিয়েও। তিনি বলেন, এখানে সর্বনিম্ন কেবিন হচ্ছে দুই হাজার দুইশো টাকার, সেখানেই রাখা হয়েছে। গত পরশু অস্ত্রোপচার খরচ ছাড়াই বিল হয়েছিল এক লাখ ১২ টাকার। আরও রাখতে হবে তিন থেকে চারদিন-খরচ কত হবে ভাবতে পারছি না। ওকে যখন নিয়ে আসা হয় তখনই চিকিৎসকরা বলেছেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ওকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার উপায় ছিল না। সিআরপিতে ফিজিওথেরাপি নিতে হবে, তবে সেখানে কতদিন লাগবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আয়েশাকে তো বলা যাচ্ছে না, তার স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর হয়তো দাঁড়াতে পারবেন না। তাকে মানসিক চিকিৎসারও প্রয়োজন হবে।

বিজ্ঞাপন

খুব অবাক হচ্ছি, সবার নিরবতা দেখে। বাস দু’টি জব্দ করা হলো, একজন চালকও গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু সরকারের কোনো চাপ দেখছি না। নেই কোনো উদ্যোগ। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এভাবেই একের পর এক জীবন যাবে, মানুষ পঙ্গু হবে, একেকটা পরিবার ধ্বংস হবে- কিন্তু এই দেশে এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা চলতে থাকবে। এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে এই দেশে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তাই নেই।

সরকারি কোনো উদ্যোগ না দেখে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে আমরাই উচ্চ আদালতে রিট করেছি। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করা তানজীর বলেন, আমরা আর্থিক সহায়তা পাই বা না পাই। চাওয়া এইটুকু- কঠোর একটা আইন হোক, ক্ষতিপূরণের বিষয় থাক, তাতে যদি কিছুটা কমে আসে সড়ক দুর্ঘটনা।

সারাবাংলা/জেএ/এটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর