চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরি যাচ্ছে জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া
৩ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:৫৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: অস্ত্রোপচারের জন্য হাঙ্গেরি যাচ্ছে জোড়া মাথার সেই শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে তাদের নিয়ে বাবা-মা ও চিকিৎসক হাঙ্গেরির উদ্দেশে রওনা হবেন। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের সেইন্ট জোন্স হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ও মিলিটারি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা হবে। সারাবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন ।
জানা যায়, আগামীকাল ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন করবেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিমানের টিকেট রাবেয়া-রোকাইয়ায় স্বজনদের কাছে তুলে দেবেন।
প্রসঙ্গত, পাবনা জেলার চাটমোহরের অমৃতকুণ্ডু গ্রামে ২০১৬ সালের ১৬ জুন জন্ম নেয় জোড়ামাথার শিশু (প্যারাসিটিক টুইন্স) রাবেয়া-রোকেয়া।
২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর শিশু দু’টিকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাদের বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা খাতুন। ওইদিনই রাবেয়া-রোকাইয়াকে ভর্তি করা হয়। রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসায় গঠন করা হয় ২১ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। এর আগে রফিকুল ইসলাম বেশ কয়েকবার তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। এরপর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে তিনি রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসার প্রথম ধাপ হিসেবে প্রথম এনজিওগ্রাম হয়। পরে ফলোআপ এনজিওগ্রাম হয় ওই বছরের গত ১৯ আগস্ট।
চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘আগামীকাল রাত একটায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে রাবেয়া-রোকাইয়াকে হাঙ্গেরি নেওয়া যাবে। সঙ্গে যাবেন তাদের বাবা রফিকুল ইসলাম, মা তাসলিমা খাতুন ও শিশুদের এক বোন। এছাড়া যাবেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম।’
ডা. সামন্তলাল সেন আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। তখন তাকে রাবেয়া-রোকাইয়ার হাঙ্গেরি যাওয়ার কথাও জানাই। সব শুনে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সবই করতে বললেন।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ জানুয়ারি খুব সম্ভবত তাদের তৃতীয় অস্ত্রোপচার হবে। থাকতে হবে হয়তো তিনমাসের মতো।’
জানতে চাইলে রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসক হোসাইন ইমাম বলেন, ‘রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসা-সংক্রান্ত দেশের সব কাগজপত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকবো।’
ডা. হোসাইন ইমাম আরও বলেন, ‘রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন হাঙ্গেরি ও জার্মানির কয়েকজন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে রয়েছেন হাঙ্গেরির ইন্টারভেনশন নিউরোলজিস্ট ইস্তাভান হুদাক ও নিউরোসার্জন অ্যান্ড্রু চকে। তারা এর আগেও বাংলাদেশে এসেছেন। রাবেয়া-রোকাইয়ার অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছেন।’
এদিকে ঝুঁকি থাকলেও অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত রাবেয়া-রোকাইয়ার পরিবার। তাদের মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের প্রতিটি ধাপ ঝুঁকিপূর্ণ। তবু আমরা তৈরি। আমি ও ওদের বাবা অনেক ভেবেছি। অনেক কথা বলেছি। তারপরই চিকিৎসার বিষয়ে এগিয়েছি।’
এই প্রসঙ্গে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার প্রত্যেকটি ধাপ ঝুঁকিপূর্ণ, প্রত্যেকটি অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কিছু রাবেয়া-রোকাইয়ার মা-বাবাসহ সবাইকে বলা হয়েছে। রাবেয়া-রোকাইয়ার অভিভাবকের অনুমতি নিয়েই আমরা আগাচ্ছি।’
চিকিৎসকরা কতটুকু আশাবাদী, এমন প্রশ্নের জবাবে বার্ন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, ‘‘এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে আগে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো, তাতে মৃত্যু হার ছিল ৮০ শতাংশের মতো। কিন্তু বর্তমানে দু’টি পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। একটি হলো ‘স্ট্রাকচারাল সেপারেশন’, অন্যটি ‘ফাংশনাল সেপারেশন।’ স্ট্রাকচারাল সেপারেশন কনসেপ্টে এই ধরনের শিশুদের অস্ত্রোপচারে ভালো ফল আসা সম্ভব। রাবেয়া-রোকাইয়ার বেলায় আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাদের মাথা আংশিক জোড়া থাকতো, তাহলে চিকিৎসার বিষয়টি অনেক সহজ হতো। কিন্তু তাদের মাথা পুরোটাই জোড়া লেগে রয়েছে। তাই বিষয়টি কমপ্লেক্স অ্যান্ড কমপ্লিকেটেড।’ তবে বাংলাদেশে হওয়া চিকিৎসার দুই ধাপেই চিকিৎসকরা সফল হন বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ