স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বিএসএমএমইউ’র নিয়োগ পরীক্ষায়
১৯ মে ২০১৯ ০২:০১
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের স্বজনপ্রীতিসহ ছয়টি সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন নিয়োগ প্রত্যাশী চিকিৎসকরা। এ সময় তারা নিয়োগ পরীক্ষার ফল বাতিল করে পুনঃনিরীক্ষণের দাবিও জানান।
শনিবার (১৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের পক্ষে এসব অভিযোগ করেন ডা. মাঈদুল হাসান।
মাঈদুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘ছয়মাস আগেই বিতর্কিত প্রশ্নপত্রে নিয়োগ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বয়স না থাকা ও অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
ছয়টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিতর্কিত প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ২২ মার্চ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও পরীক্ষার চারদিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ কক্ষে প্রশ্নপত্র খোলা হয়েছে। যেখানে পরীক্ষার নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৩২ বছর সর্বোচ্চ বয়সসীমা উল্লেখ করলেও বিদ্যুৎ কান্তি সূত্রধর নামের এক প্রার্থীর বয়স ৩৮ বছর হলেও তাকে নিয়োগ পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। তথ্য রয়েছে তার সঙ্গে উপাচার্যের সখ্য রয়েছে আগে থেকেই।’
ডা. মাঈদুল হাসান বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি যেমন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সন্তান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মেয়ের জামাতা, উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী-২ এর স্ত্রীসহ অনেকেই প্রথম সারিতে রয়েছে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সংযুক্ত কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। অথচ সেটিই হয়েছে এবং তারাই তাদের স্বজনদেরকে নিয়োগ দেওয়া আগে নিশ্চিত করেছেন।’
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার দিন মেডিকেলের পাশাপাশি ডেন্টাল পরীক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় একই প্রশ্ন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ভিন্নভিন্ন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ফলাফল প্রকাশের আগেই অনেক পরীক্ষার্থীদের কাছে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার রোল-নম্বরসহ একটি অনুলিপি পাওয়া যায়। যা সবার মনে ক্ষোভ ও আশঙ্কা তৈরি করে। প্রকাশিত ফলাফলের সঙ্গে আগে পাওয়া সেই ফলাফলের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে অভিযোগ করলেও আমলে নেয়নি প্রশাসন।’
এ ছাড়াও নিয়ম না থাকলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইলসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তর সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মাঈদুল হাসান বলেন, ‘২২ মার্চ অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট ছয়টি অনিয়মের প্রমাণসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পরীক্ষার আগে-পরে অনেকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করি আমরা প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। কিন্তু অভিযোগ আমলে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের স্বার্থে তাদের এ অবৈধ আয়োজনকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা বলে মিথ্যা বানোয়াট নাটক সাজিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনও এ ধরনের অনৈতিক কাজে সায় দিতে পারেন না, বরং দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করাই তার অন্যতম কাজ বলে আমরা মনে করি। তাই এই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ পরীক্ষা অবিলম্বে বাতিল করে পুনঃনিয়োগ পরীক্ষার দাবি জানাচ্ছি আমরা। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরবর্তীতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডা. মাঈদুল হাসান।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার পরীক্ষার ফল বাতিল করে পুনঃনিরীক্ষণের দাবিতে রোববার (১২ মে) থেকে বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে টানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা।
সারাবাংলা/এসএইচ/এসবি/একে