ক্যাম্পসের ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু সেবা পেলো টাঙ্গাইলের ২৫০০ রোগী
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:০৮
প্রায় আড়াই হাজার সুবিধাবঞ্চিত রোগীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঔষধ দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনটি, ক্যাম্পস গত ১৫বছর ধরে করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে ‘‘ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষুক্যাম্প’’ বসিয়ে ওই অঞ্চলের অসহায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে সংস্থাটি।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে, টাঙ্গাইল ও এর আশেপাশের দরিদ্র গ্রামবাসীর মধ্যে প্রায় ২৫০০ জন রোগীর নিবন্ধন করে এবং প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। রোগনির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয়পরীক্ষাও করা হয়। ১০ দিনআগে থেকে এই কাজ শুরু করে ক্যাম্পস। একুশে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যাওয়া বিশেষজ্ঞসহ অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেন। এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়া হয়।
এছাড়াও ৩০০ জনের বেশি চক্ষু রোগীর চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচনকরা হয় এই ক্যাম্প থেকে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, “রোগ প্রতিরোধে সুস্থ জীবনধারা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-০৮ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)। টাঙ্গাইলের জেলাপ্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এবং ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপকডাঃ এম এ সামাদ আলোচনা অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। “ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষুক্যাম্প”এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সঞ্জিত কুমার রায় বিপিএম, সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ, টাঙ্গাইল।
আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এবছরের বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে, চিকিৎসা ব্যয় কমাতে হবে। আর তা সম্ভব সচেনতার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করে। আর সেই লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সফল হতে হলে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কিডনি রোগের প্রাদূর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারি, বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমূহকে সমন্বিত উদ্যোগ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনিবলেন, বর্তমান যুগের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হল ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, নিরবে দেহের মধ্যে বাসা বেঁধে বিভিন্ন মরণঘাতী অসংক্রামক ব্যাধির জন্ম দেয়। আর এই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এবং আরো কিছু কারণে মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং ৭০% নষ্ট হওয়ার আগে, কিডনি রোগের লক্ষণ ধরা পড়ে না। এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে এ রোগে আক্রান্ত ৯০ভাগ মানুষ বিনাচিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারান। আমাদের অসচেতনতা ও সুস্থ জীবনধারা মেনে না চলার জন্য দিন দিন এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে বলে মত দিয়ে এই চিকিৎসক দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে জাতীয়ভাবে সমন্নিত চেতনার গুরুত্ব আরোপ করেন।
অধ্যাপকডাঃ এম এ সামাদ আরো উল্লেখ করেন, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্থেই ক্যাম্পস গত ১৫বছর ধরে গ্রামের হত-দরিদ্রদের মাঝে এই স্বাস্থ্য সেবার আয়োজন করে আসছে।
সভায় প্রধান অতিথি এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) বলেন, এমন মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকেরই ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকাণ্ডে সরকারি ও বিত্তবান শ্রেণির মানুষদের সহযোগিতা খুব জরুরি।
ক্যাম্পস, নির্বাহী পরিচালক, জনাব রেজওয়ান সালেহীন, ক্যাম্পস এর মানবিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার লক্ষ্যে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকদের এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদেরপাশে দাঁড়িয়ে, মানবিক কাজে নিজেদের কাজ নিরলসভাবে চালিয়ে যাবার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হালিম, প্রিন্সিপাল, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ বাংলাদেশ, জুলফিকার হায়দার কামাল (লেবু), চেয়ারম্যান, সখিপুর উপজেলাপরিষদ, কাজী অলিদ ইসলাম, চেয়ারম্যান, বাসাইল উপজেলা পরিষদ, মো. আমিনুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সখিপুর, টাঙ্গাইল, ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান, উপজেলা হেলথ এ- ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার, সখিপুর, টাঙ্গাইল।
সকলেই ক্যাম্পস আয়োজিত এই মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে সামাজিক সকল কাজে তাঁদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। খবর বিজ্ঞপ্তি’র।
সারবাংলা/এমএম